শিরোনাম
◈ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আয়োজক হয়েও দুবাইতে খেলতে যাওয়ায় ঠাট্টা ও বিদ্রুপের শিকার পাকিস্তান ◈ শেখ হাসিনাকে ৩ বছর আগেই সতর্ক করেছিলাম, আমার কথা রাখলে এভাবে পালাতে হতো না: কর্ণেল অলি ◈ সাউন্ড গ্রেনেড-জলকামান দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হলো আউটসোর্সিংকর্মীদের ◈ পাকিস্তানে স্টেডিয়াম হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নামে ◈ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারত-পাকিস্তান মহারণ রোববার ◈ 'ভারত কিছু একটা করবে' এই ভরসায় আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা ◈ চোরাই স্বর্ণালংকার উদ্ধারসহ গ্রেফতার ৩  ◈ নেতা–কর্মীদের ‘বিশেষ’ তালিকা করছে পুলিশ. অনেকের জামিনে সরকারের উচ্চমহলে উদ্বেগ ◈ সেনাবাহিনীতে বিশেষ পেশায় জনবল নিয়োগ ◈ ভেঙে দেওয়া হয়েছে বিচার ও পুলিশ বিভাগের সিন্ডিকেট: অ্যাটর্নি জেনারেল

প্রকাশিত : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:৫৫ দুপুর
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৬:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দগ্ধ রোগীদের জন্য দান করা যাবে চামড়া: বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো ‘স্কিন ব্যাংক’

পোড়া রোগীদের অত্যাধুনিক চিকিৎসায় বড় সহায় হচ্ছে ‘স্কিন ব্যাংক’ বা ‘ত্বক ব্যাংক’। যাতে শরীরের চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকে। গুরুতর কোনো পোড়া রোগী বা যাদের ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে, তাদের ক্ষতস্থানে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। দেশে স্কিন ব্যাংক বা চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় আগুনে পোড়া বেশিরভাগ রোগীরই মৃত্যু হতো। তাই দেশে প্রথমবারের মতো রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে চালু হয়েছে এই স্কিন ব্যাংক। বিশেষায়িত এই চিকিৎসা কোনো পোড়া রোগীর জীবন বাঁচাতে এবং মৃত্যুও অনেকাংশে হ্রাস করবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ‘স্কিন ব্যাংক’ চালু করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। চিকিৎসকরা বলছেন, এই উদ্যোগ গুরুতর দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।  

ইনস্টিটিউটের ১৩ তলার সি-১৩৩৩ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন দুই বছরের শিশু হামিদার শরীরের ৩৫২ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার চামড়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। শিশুটির মা রাবেয়া বেগম জানান, গত ২২ ডিসেম্বর গরম পানিতে পুড়ে তার শরীরের ৪২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে তার রক্তে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ (সেপ্টিসেমিয়া) দেখা দেয় এবং ক্ষত থেকে ক্রমাগত রক্ত ও পুঁজ বের হচ্ছিল। চিকিৎসকরা ১৪ জানুয়ারি স্কিন ব্যাংক থেকে সংগৃহীত চামড়া প্রতিস্থাপন করলে সংক্রমণ কমতে শুরু করে।  

৮ বছর বয়সি আরেক শিশু মরিয়মের শরীরের ৭৭৯ সেন্টিমিটার পোড়া অংশ ঢেকে দেওয়া হয়েছে স্কিন ব্যাংকের সংরক্ষিত চামড়া দিয়ে। তার মা মজেমা বেগম জানান, গ্যাসের চুলার আগুনে পুড়ে শরীরের ২২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। চিকিৎসকরা চামড়া প্রতিস্থাপনের পর তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে।  

স্কিন ব্যাংক কীভাবে কাজ করে?  

বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান বলেন, 'গুরুতর দগ্ধ হলে শরীর থেকে পানি, লবণ, প্রোটিন ও তাপ দ্রুত বেরিয়ে যায়। যদি পোড়ার পরিমাণ বেশি হয় এবং রোগীর শরীর থেকে চামড়া নেওয়া সম্ভব না হয়, তখন স্কিন ব্যাংক থেকে সংরক্ষিত চামড়া প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কমে এবং দ্রুত নতুন চামড়া তৈরি হতে সহায়তা করে।'  

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কিন ব্যাংক একটি স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভারতে এটি দীর্ঘদিন ধরে চালু রয়েছে।  

চামড়া দান করা যাবে কীভাবে?  

স্কিন ব্যাংকের কো-অর্ডিনেটর ডা. মাহবুব হাসান জানান, সুস্থ ব্যক্তি জীবদ্দশায় একাধিকবার চামড়া দান করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগের মাধ্যমে শরীরের নির্দিষ্ট অংশ অবশ করা হয়। বিশেষ ডার্মাটম যন্ত্রের সাহায্যে শরীরের সুবিধামতো স্থান থেকে চামড়া সংগ্রহ করা হয়। দাতার হাসপাতালে ভর্তি থাকার প্রয়োজন নেই, ১৪ দিনের মধ্যেই শরীরে নতুন চামড়া তৈরি হয়ে যায়।  

মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও ৬ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব, যদি লাশ সংরক্ষিত থাকে। সাধারণত পিঠ ও পা থেকে চামড়া সংগ্রহ করা হয়।  

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মারুফুল ইসলাম জানান, 'চামড়া দানে আইনগত কোনো বাধা নেই। স্কিন ব্যাংকের মাধ্যমে দান করা চামড়া সংরক্ষণ ও প্রতিস্থাপন পুরোপুরি নিরাপদ।'  

স্কিন ব্যাংকের ইনচার্জ তামান্না সুলতানা বলেন, বার্ন ইনস্টিটিউটের ১২৩৯ নম্বর কক্ষে স্কিন ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। এখানে উন্নত প্রযুক্তির ৮টি বিশেষ ফ্রিজের মাধ্যমে সংরক্ষণ প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে।  

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে স্কিন ব্যাংকের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হলে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা অনেক সহজ হবে। পর্যাপ্ত দাতার অংশগ্রহণ থাকলে এটি দগ্ধ রোগীদের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।  

লাইভ ডোনার সংগ্রহ: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে লাইভ ডোনার সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত চারজন চামড়া দিয়েছেন। স্কিন ব্যাংকে তা জমা রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচজনের শরীরের চামড়া বসানো হয়। দুজন বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদেরই একজন আট বছরের মরিয়ম আক্তার। বর্তমানে বার্ন ইউনিটের ১৩ তলায় ভর্তি রয়েছে। দুই মাস আগে গাজীপুরের চান্দনা এলাকায় আগুন পোহাতে গিয়ে তার পেট, পিঠ ও হাত পুড়ে যায়। তার প্রায় ৪০ শতাংশ পুড়ে যায়। সে থেকেই এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।

তার মা মর্জিনা বেগম জানান, কয়েক দিন আগে অন্য এক রোগীর চামড়া নিয়ে তার মেয়ের শরীরে লাগানো হয়েছে। তার মেয়ে এখন কিছুটা ভালো আছেন। এ প্রসঙ্গে বার্ন ইনস্টিটিউটের স্কিন ব্যাংকের তত্ত্বাবধায়ক ও প্লাস্টিক সার্জন ডা. মাহবুব হাসান সময়ের আলোকে বলেন, যেকোনো ধরনের পোড়া রোগীর চিকিৎসায় চামড়া প্রতিস্থাপন জরুরি। কিন্তু দেশে তা না থাকায় দগ্ধদের মৃত্যুহার বেশি হতো। সাধারণত শরীরের ১০ শতাংশ পুড়ে গেলেও মৃত্যুঝুঁকি থাকে। আরও দেখা গেছে ৫০ শতাংশেরও বেশি আগুনে পোড়া রোগীকে বাঁচানো যায়নি। এটির একমাত্র কারণ ছিল স্কিন ব্যাংক না থাকা। এখন যেহেতু স্কিন ব্যাংক চালু হয়েছে তা হলে সংরক্ষিত চামড়া নিয়ে দ্রুত রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা গেলে পুড়ে যাওয়া রোগীকেও বাঁচানো সম্ভব। 

তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে স্কিন ব্যাংক রয়েছে, বিশেষ করে উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থার অংশ হিসেবে। কিন্তু আমাদের দেশে সাধারণত দগ্ধ রোগীর শরীর থেকেই চামড়া নিয়ে তা ক্ষতস্থানে প্রতিস্থাপন করা হতো। তাই স্কিন ব্যাংক চালু হওয়া পোড়া রোগীদের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক। স্কিন ব্যাংকের মাধ্যমে শত শত জীবন বাঁচানো যেতে পারে। স্কিন দেওয়ার ক্ষেত্রে আইনে কোনো বাধা নেই। একজন ব্যক্তি তার নিকটাত্মীয়কে স্কিন ডোনেট করতে পারেন। তাই স্কিন ব্যাংকের কার্যক্রম চালাতে মানুষকে সচেতন হতে হবে। এ ছাড়া মরণোত্তর চামড়া দান করতে মানুষ এগিয়ে এলে অনেক পোড়া রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়