সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত সময় আপনাকে ঘুমাতেই হবে। ঘুমটাও হতে হবে গভীর, যাতে ঘুমিয়েই আপনি সতেজ হয়ে ওঠেন। ঘুমিয়ে থাকলে শরীর বিশ্রাম পায়। বিশ্রাম পায় মস্তিষ্কও। তবে মস্তিষ্কের বিশ্রামটা ঠিক দেহের বিশ্রামের মতো নয়। বিশ্রামের সময়ও মস্তিষ্কের ভেতর কিছু প্রক্রিয়া চলমান থাকে, যা আপনার সুস্থ–স্বাভাবিক জীবনের জন্য আবশ্যক।
বিজ্ঞানীদের মতে, এসব প্রক্রিয়ার কিছু অংশ আবার চলে কেবল ঘুমের সময়ই। এই প্রক্রিয়া আমাদের স্মৃতি ধারণের ক্ষমতার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। ঘুমের ঘাটতি হলে সেই প্রক্রিয়াগুলো মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। স্মৃতিশক্তি ঠিক রাখতে কেন রোজ ঠিকঠাক ঘুম হওয়া চাই, তার বৈজ্ঞানিক কারণগুলো সহজভাবে ব্যাখ্যা করলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহনূর শারমিন।
স্মৃতি কী?
স্মৃতি হলো মস্তিষ্কে সাজানো তথ্য। আমরা যখন জেগে থাকি, মস্তিষ্ক তখন তথ্য গ্রহণ করে। এসব তথ্য ‘প্রক্রিয়াজাত’ করে গুরুত্ব অনুযায়ী সাজিয়ে রাখার কাজটা ঘটে আমাদের ঘুমের সময়। আবার আমরা যখন জেগে থাকি, তখন সেই সাজানো তথ্য থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য গ্রহণ করতে পারি। সহজভাবে এই হলো আমাদের স্মৃতিধারণের মূল বিষয়।
কম ঘুমানোর সঙ্গে স্মৃতিভ্রমের সম্পর্ক কী?
যে ব্যক্তি পর্যাপ্ত ঘুমান না, তাঁর মস্তিষ্কের এই তথ্য ‘প্রক্রিয়াজাতকরণ’ এবং সাজিয়ে রাখার বিষয়টা সঠিকভাবে ঘটে না। তাই কিছু তথ্য মনে করতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। এমনও হতে পারে, কিছু তথ্য তাঁর মনেই পড়ল না।
ঘুম আমাদের সতেজতার একটি মহা গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ভালো ঘুম না হলে পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে না-ই পারেন। আপনার ভাবনার জগতটা কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়তে পারে। মনোযোগ স্থির রাখতেও মুশকিলে পড়তে পারেন। এর ফলে মস্তিষ্কে কোনো তথ্য জমা হওয়ার বিষয়টিও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন না হওয়ার ঝুঁকি থাকবে। অর্থাৎ, কম ঘুমালে স্মৃতি তৈরি হওয়ার কাজটা সঠিকভাবে না-ও হতে পারে। কোনো বিষয় শিখতে কিংবা কোনো বিষয়ে দক্ষ হয়ে উঠতে যেভাবে স্মৃতিতে তা ধারণ করা প্রয়োজন, সেটি করতে সমস্যায় পড়তে পারেন আপনি।
বিজ্ঞানীদের গবেষণায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। আমাদের মস্তিষ্কে বিটা অ্যামাইলেজ নামক একধরনের বর্জ্য জমা হয় স্বাভাবিক নিয়মে। তবে ঘুমের সময় এই বর্জ্য অপসারণ হয়ে যায়। কিন্তু ঠিকঠাক ঘুম না হলে এই প্রক্রিয়াতেও বাধা পড়ে। এর ফলে বিটা অ্যামাইলেজ জমা হতে থাকে মস্তিষ্কে। স্মৃতিভ্রমের রোগ আলঝেইমারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে এই বিটা অ্যামাইলেজ জমা হতে দেখা গেছে। অর্থাৎ, ঘুম কম হলে আপনার আলঝেইমারের ঝুঁকিও বাড়বে।
শরীর ও মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিকে রোজ সাত-নয় ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে। রাতের ঘুম হতে হবে নিরবচ্ছিন্ন। যেসব কারণে আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে, সেগুলোর বিষয়ে তাই সচেতন হয়ে উঠুন আজই। ঘুমের সময় শ্বাসপ্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হলে আপনি লম্বা সময় ঘুমালেও কিন্তু ঘুমটা ঠিকঠাক হবে না। এই বিষয়ও মাথায় রাখুন। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া এ ধরনের একটি রোগ। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের সমস্যা এড়াতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। সূত্র : প্রথমআলো
আপনার মতামত লিখুন :