ভালো ঘুম আমাদের সুস্থ শরীর ও মন নিশ্চিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেকেই ঘুমজনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন। অনেক সময় ওষুধের উপর নির্ভরশীল হতে হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর হতে পারে। ভালো ঘুমের জন্য ওষুধের পরিবর্তে কিছু সহজ অভ্যাস বা জীবনযাপনের পরিবর্তন মেনে চললে আপনি প্রাকৃতিক উপায়ে গভীর ও প্রশান্ত ঘুম পেতে পারেন। নিচে ভালো ঘুমের জন্য কিছু কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো:
১. নিয়মিত ঘুমের সময় ঠিক করুন : প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন। নিয়মিত সময় ধরে ঘুমালে আপনার শরীরের বায়োলজিক্যাল ঘড়ি ঠিক থাকে এবং ঘুমের সময় শরীর প্রাকৃতিকভাবে প্রস্তুত হয়ে যায়।
২. ঘুমানোর আগে ফোন এবং ইলেকট্রনিক্স থেকে দূরে থাকুন
ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ ইত্যাদি থেকে বের হওয়া নীল আলো মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে, যা ঘুমাতে সমস্যা সৃষ্টি করে। ঘুমানোর কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে এই ডিভাইসগুলো ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। এর পরিবর্তে একটি বই পড়া বা হালকা কিছু শোনা যেতে পারে, যা মস্তিষ্ককে শিথিল করবে।
৩. শারীরিক ব্যায়াম করুন : প্রতিদিন কিছু সময় ধরে শারীরিক ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরের স্ট্রেস কমে এবং রাতে ভালো ঘুম হয়। তবে ঘুমানোর খুব কাছাকাছি সময়ে ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ তা শরীরকে চাঙ্গা করে তোলে এবং ঘুম আসতে দেরি হতে পারে।
৪. শিথিল হওয়ার রুটিন তৈরি করুন : ঘুমানোর আগে শিথিল করার জন্য কিছু কার্যক্রম মেনে চলুন। যেমন, হালকা স্ট্রেচিং করা, ধ্যান করা, বা হালকা গান শোনা। এতে মানসিক চাপ কমবে এবং শরীর ঘুমের জন্য প্রস্তুত হবে।
৫. ঘরের তাপমাত্রা এবং পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করুন : আপনার ঘুমের ঘরের তাপমাত্রা, আলো, এবং শব্দের প্রতি মনোযোগ দিন। আরামদায়ক তাপমাত্রা বজায় রাখুন, ঘর যতটা সম্ভব অন্ধকার রাখুন, এবং বাইরে থেকে আসা যে কোনো শব্দ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে নির্জন পরিবেশ বা হালকা সাদা শব্দ ব্যবহার করেও ভালো ঘুম আনা সম্ভব।
৬. ক্যাফেইন এবং ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন : ক্যাফেইন (যেমন, চা, কফি) বা চকলেট জাতীয় খাবার সন্ধ্যার পর খাওয়া উচিত নয়, কারণ এতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। পাশাপাশি ঘুমানোর আগে ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন, কারণ হজমের সমস্যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
৭. নিয়মিত রিল্যাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করুন : ডিপ ব্রিদিং, মেডিটেশন বা যোগব্যায়ামের মতো রিল্যাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করলে ঘুম আসার ক্ষেত্রে তা সহায়ক হতে পারে। এই ধরনের টেকনিক মানসিক চাপ কমাতে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করতে সহায়তা করে।
৮. ঘুমানোর জন্য একটি আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন
মৃত্যু বা স্বাস্থ্যসম্মত বালিশ ও গদি ব্যবহার করুন। আপনার ঘুমানোর জায়গাটি আরামদায়ক এবং পরিচ্ছন্ন রাখুন। পাশাপাশি প্রতিদিনের ঘুমের রুটিন অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। আরামদায়ক পরিবেশে দ্রুত ঘুম আসে এবং ঘুম গভীর হয়।
৯. ঘুমের ঘণ্টা ঠিক রাখুন : একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির জন্য সাধারণত ৭-৯ ঘণ্টার ঘুম প্রয়োজন। এ থেকে কম বা বেশি ঘুমানোর ফলে শরীরের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তাই দৈনিক প্রয়োজনীয় ঘুমের পরিমাণ মেনে চলা উচিত।
১০. দিনের বেলা ঘুম এড়িয়ে চলুন : দিনের বেলা বেশি ঘুমানো রাতে ভালো ঘুমে বাধা সৃষ্টি করে। যদি খুব ক্লান্ত থাকেন, তাহলে দুপুরে ২০-৩০ মিনিটের জন্য একটি ছোট ন্যাপ নিতে পারেন। তবে দীর্ঘ সময় ধরে দিনের বেলা ঘুমানো রাতে ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
ভালো ঘুমের জন্য ওষুধের ওপর নির্ভর না করে এই সহজ এবং কার্যকর অভ্যাসগুলো মেনে চললে প্রাকৃতিকভাবে সুস্থ ও প্রশান্ত ঘুম পেতে পারবেন। ভালো ঘুম কেবল শরীরকে পুনরুজ্জীবিত করে না, বরং মনের স্বাস্থ্যের জন্যও অপরিহার্য। উৎস: জীবনস্টাইল
আপনার মতামত লিখুন :