নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে দেশে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার লোক তামাক ব্যবহারজনিত কারণে মারা যায়, যা প্রতিদিনের হিসেবে ৪৪২ জন। এই মৃত্যু বছরে মোট মৃত্যুর ১৯ ভাগ। আর পঙ্গুত্ব বরণ করে ৪ লাখ মানুষ। তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে তামাক বিরোধী ইয়ুথ কনভেনশনে এসব তথ্য উঠে আসে।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পূয়র-ডরপ এর আয়োজনে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে ‘তামাক বিরোধী ইয়ুথ কনভেনশন ২০২৪’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এসময় এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান বলেন, আমরা তামাক প্রচারক এবং তামাক বিরোধী কর্মী দুইজনের সঙ্গেই সম্পৃক্ত হই, যা স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি করে। এনজিওগুলো বর্তমানে মাত্র ৬টি মূল পয়েন্টে মনোযোগ দিচ্ছে, কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। সকল এনজিওর একত্রিত হওয়া অত্যাবশ্যক। পাবলিক প্লেসে তীব্র ধূমপানের উপর কঠোর নিয়মাবলী প্রয়োগ করা উচিত। যদিও ধূমপান সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা সম্ভব না তবে আমরা অবশ্যই নির্দিষ্ট এলাকায় বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারি।
অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দিয়ে সিগারেট সংগ্রহ করান উল্লেখ করে মো. সাইদুর রহমান বলেন, শিক্ষকরা (ধুমপায়ীরা) অনেক সময় প্রকাশ্যে ধুমপান করেন, অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দিয়ে সিগারেট সংগ্রহ করান। এতে করে ওই শিক্ষার্থীর মধ্যে সিগারেট নিয়ে একটা ফ্যান্টাসি কাজ করে যা পরবর্তীতে তাকে সিগারেট খেতে উৎসাহ যোগায়। তাই ধুমপায়ী শিক্ষকদের এ ব্যপারে সতর্কতা অবলম্বন করার আহবান জানান।
সিটিএফকে বাংলাদেশ-এর লিড পলিসি এডভাইজার জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত তরুণরা তাদের সফলতার প্রমাণ দিয়েছে। তাহলে তারা কেন তামাকবিরোধী ক্যাম্পেইনে সফল হতে পারবে না? আমাদের কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, অথচ তামাক ব্যবসা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তরুণদেরও এই মরণঘাতী ব্যবসা বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। তামাকবিরোধী আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়াও তামাক পণ্যের উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করা উচিত।
তামাক নিয়ন্ত্রণে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের নিকট প্রত্যাশা তুলে ধরেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আজহার আলী তালুকদার, উপদেষ্টা, ডরপ। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের সরকারের সাথে সম্পৃক্ততা তামাক কোম্পানির তুলনায় অনেক কম। তবুও, আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সাক্ষী হচ্ছি। নেতৃত্ব তরুণদের হাতে চলে গেছে, যারা অর্থপূর্ণ পরিবর্তন আনতে সক্ষম। রাজনৈতিক দলগুলি যা গত ১৫ বছর ধরেও করতে পারেনি, সেখানে তরুণরা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছে। একইসাথে, আমরা একটি শক্তিশালী তামাক বিরোধী আইন প্রতিষ্ঠা করতে পারি।
ডরপ এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডরপ এর উপ-নির্বাহী পরিচালক জনাব মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান। তিনি বলেন, তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের প্রস্তাবনাগুলো নীতিনির্ধারকদের কাছে পরিপূর্ণভাবে তুলে ধরতে হবে। সেটাই হবে এই সম্মেলনের আসল সফলতা।
জনাব মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, দেশে একটি পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এটাকে ধরে রাখতে হবে।
পরিবারগুলোকে তামাকমুক্ত হতে চেষ্টা করা উচিত। তামাক শুধুমাত্র একটি মানসিক নির্ভরতা; এর কোনো উপকারিতা নেই। যদিও ১০০% তামাকমুক্ত দেশ অর্জন করা সম্ভব না, তবে আমাদের সফলতার হার বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে।
কনভেনশনে তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসির সাথে সামঞ্জস্য রেখে, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রণীত খসড়ার সংশোধনীতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধ করার জন্য বিক্রয়কেন্দ্রে তামাক পণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ই—সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাক পণ্যের সকল প্রকার খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা।
স্বাগত বক্তব্যে ডরপ এর নির্বাহী পরিচালক জনাব এইচএম নোমান বলেন, ‘জনগণের স্বাস্থ্য আন্দোলন’ বাংলাদেশ সার্কেল সভাপতি হিসেবে আমার নেতৃত্বে ২০০৫ সালে জেনেভাস্থ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন—২০০৫ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম, যা এযাবৎ আইন সংশোধনের অপেক্ষায় দপ্তরে দপ্তরে টেবিলে টেবিলে ঘুরছে। এ সমস্যা লাঘব করার জন্য তিনি মাননীয় উপদেষ্টার কাছে দাবি জানান।
কনভেনশনে উপস্থিত তরুণ সমাজের প্রতিনিধিরা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে শপথ নেন। আলোচনা শেষে ৭ জন ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নকে ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে র্ডপ বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নয়ন উদ্যোগে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে। সংস্থাটি মাতৃত্বকালীন ভাতা চালুর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এখন পর্যন্ত র্ডপ দেশের ৭৪টি উপজেলা, ৩০টি জেলা, এবং ৫টি বিভাগের মধ্যে অসংখ্য প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। সরকারের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট পূরণের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে র্ডপ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে এগিয়ে নেওয়া এবং তামাক পণ্যের উপর কর ও মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আপনার মতামত লিখুন :