শাহীন খন্দকার: কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের ওপর রোগীর স্বজনদের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ও ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ)। গত বুধবার পৃথক বিবৃতিতে সংগঠন দুটি এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে রোগীর স্বজনরা সিসিইউ বিভাগের চিকিৎসক ডা. সজিব কাজীর ওপর হামলা ও হাসপাতালে ভাংচুর করে।
এই ঘটনায় ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ ও মহাসচিব ডা. মো: আব্দুস সালাম বিবৃতিতে বলেন, সহস্রাধিক ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে গত ৫ই আগস্ট এক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতি দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করে। দ্বিতীয় স্বাধীনতার সংগ্রামে অসংখ্য মানুষ আহত ও নিহত হয়েছেন। বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী সকল ছাত্র-জনতার চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য এদেশের চিকিৎসক সমাজ দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। বিপ্লবোত্তর সময়ে সেই চিকিৎসকের উপর হামলার ঘটনা খুবই দুঃখজনক।
বিবৃতিতে আরও বলেন, একটা মহল প্রতিনিয়ত দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে। যার প্রেক্ষিতে বর্তমানে তারা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ও চিকিৎসকদের উপর হামলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। যেখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত করে একটি সুন্দর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বিনির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সেখানে বিভিন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ষড়যন্ত্রকারীদের হামলার কারণে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
বিবৃতিতে ড্যাব অনতিবিলম্বে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং দুষ্কৃতিকারীদের অতিসত্বর গ্রেফতার করে আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক বিচারের জোর দাবি জানিয়েছে।
এনডিএফের নিন্দা: সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডাঃ মাহমুদ হোসেন বিবৃতিতে বলেন , জটিল ও সংকটাপন্ন রোগীকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পরও কয়েকজন যুবক ডা. সজীব কাজিকে নির্মমভাবে মারধর করে এবং তাকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হামলার সময় শুধু ডা. সজীব কাজিই নয়, হাসপাতালের আইসিইউ, সিসিইউ ও ওয়ার্ডে ভাঙচুর চালিয়ে হামলাকারীরা মূল্যবান চিকিৎসা সরঞ্জাম লুট করে। এই ধরনের ভয়াবহ আক্রমণ কোন স্বাভাবিক মানুষের কাজ হতে পারে না এবং এটি সমাজের জন্য অত্যন্ত অশনিসংকেত।
বিবৃতিতে বলা হয়, এর আগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটলেও এখনো পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এর প্রতিরোধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পরামর্শ অনুযায়ী হাসপাতালগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হলেও, তার বাস্তবায়ন আজও নিশ্চিত হয়নি। কক্সবাজারে পুনরায় এই ধরনের হামলা সেই ব্যর্থতারই প্রতিফলন।
বিবৃতিতে এনডিএফ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, এই ধরনের ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। দ্রুত বিচার এবং কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে এনডিএফ দেশের সব চিকিৎসককে সাথে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের দিকে এগিয়ে যেতে বাধ্য হবে।
আপনার মতামত লিখুন :