শাহীন খন্দকার: [২] সারা বছর ধরেই কমবেশী ডেঙ্গুর দাপট রয়েছে। কিন্তু বর্ষাকালে এর প্রকোপ বেড়ে যায়। স্ত্রী এডিস মশার কামড়েই এই রোগ হয়। ডেঙ্গুর লক্ষণ নিয়ে কথা হয় বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহর সাথে। তিনি বলেন, আগে দেখেছি ডেঙ্গুতে শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেশী থাকে, শরীরে তীব্র ব্যথা হয়। ৪-৫দিন পর জ্বর ভালো হয়ে যায়। তারপর থেকে রক্তে অনুচক্রিকা কমতে থাকে। তখনই বিপদের ঝুঁকি দেখা দিতে থাকে। এটাই আমাদের জানা ছিলো।
[৩] কিন্তু চলতি বছর ডেঙ্গুর লক্ষণে অনেক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি বলেন, এবছর ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়া অনেক রোগী দেখছি যাদের জ্বর বেশী দেখা যাচ্ছে না। শরীরে তীব্র ব্যথার কথা অনেকেই বলছেন না।
[৪] বেশী কিছু বুঝে ওঠার আগেই অল্প সময়ের মধ্যে রোগী শকে চলে যাচ্ছেন, অর্থাৎ রক্তে অণুচক্রিকা কমে আসছে, রক্ষক্ষরণ হচ্ছে এবং রোগী অচেতন হয়ে পড়েছেন। ডেঙ্গুর এই লক্ষণ আমরা আগে দেখিনি।এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রতিদিন ডেঙ্গুর তথ্য গণমাধ্যমসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সরবরাহ করে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম।
[৫] বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ,গবেষক ও জনস্বাস্থ্যবিদেরা কন্ট্রোল রুমের পাঠানো তথ্যই ব্যবহার করেন। একটি নির্দিষ্ট ছকে প্রতিদিন ডেঙ্গুর তথ্য পাঠানো হচ্ছে। তাতে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার নতুন তথ্যে পাশাপাশি সারা বছরের তথ্য আছে। ঐ ছকে ডেঙ্গু ফিভার , ডেঙ্গু হেমোরেজিক ও ডেঙ্গু শক এতিনটি পৃথক ঘর আছে। কিন্তু তথ্য দেওয়া হয় শুধু ডেঙ্গু ফিভার বা ডেঙ্গু জ্বরের। বাকী দুটি ঘরে দিনের পর দিন শূন্য লেখা হচ্ছে।
[৬] কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের ১১ তারিখ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৪ হাজার ৩১১ জন। মারা গেছেন মোট ৪৭ জন। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন, ৩ হাজার ৯৪৯জন। কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, তাঁরা সবাই আক্রান্ত হয়েছেন ডেঙ্গু জ্বরে। যারা মারা গেছেন, তারা ডেঙ্গু জ্বরেই মারা গেছেন। কেউ ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ও ডেঙ্গু শক ফিভারে আক্রান্ত হননি বা মারাও যাননি।
[৭] শ্যামলী টিবি ও অ্যাজমা হাসপালের উপ-পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার ডেঙ্গুর লক্ষণ সর্ম্পকে বলেন, জ্বর (১০১-১০৪ ডিগ্রি), শরীর ব্যথা, তীব্র মাথা যন্ত্রণা, চোখ ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব, বমি করা, গলা ব্যথা, কাশি ইত্যাদি। শরীরে র্যাশ দেখা দেওয়া। প্রচণ্ড পেট ব্যথা, ক্রমাগত বমি, অনিয়ন্ত্রিত পাতলা পায়খানা, রক্তক্ষরণসহ দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া এবং শরীর নিস্তেজ হওয়া, বিরক্তি ও অস্থিরতা। ডেঙ্গু হলে ভয় কীসের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণত: জ্বর ১-৭ দিন থাকতে পারে। জ্বর ছেড়ে যাওয়ার ২৮-৪৮ ঘণ্টা স্থায়ী হয়। হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া ও অন্যান্য জটিলতা দেখা দেওয়া।
[৮.১] ১. ডেঙ্গু-হেমোরেজ: ২. শরীরের বিভিন্ন স্থান হতে ব্লিডিং হওয়া ,৩. ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম: প্লাজমা লিকেজ, রক্তনালী থেকে জলীয় অংশ বেরিয়ে গিয়ে প্রেসার কমে যায় এবং উপযুক্ত চিকিৎসা না দিলে মৃত্যুর সম্ভবনা থাকে।
[৮.২] পরীক্ষা নিরীক্ষা:জ্বরের একদিন পরেই ঈইঈ ও ঘঝ১ অম অহঃরমবহ ঞবংঃ করাতে হবে। রোগী ৪-৫ দিন পর আসলে ঈইঈ ও অহঃর উবহমঁব অহঃরনড়ফু আইজিজি ও আইজিএম ঞবংঃ করাতে হবে। রোগীর জটিলতা হলে অন্যান্য ঞবংঃ করার প্রয়োজন হবে।
[৯] ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর করণীয়: ১. বাসায় বিশ্রাম নিবেন ২. জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খাবেন, গা মোছাবেন। ৩. তরল খাবার যেমন: স্যালাইন, ডাব, স্যুপ, ফলের জুস, দুধ খাবেন-দুই থেকে আড়াই লিটার। অন্যান্য খাবারও খাবেন। ৪. মনিটরিং-দিনে কয়েকবার ইচ চেক করুন, পালস্ প্রেসার- উপরের ও নিচের প্রেসারের গ্যাপ -২০ মিমি এর কম হলে ঝুঁকি বেড়ে যায় প্রস্রাবের পরিমাণ লক্ষ্য করুন, কম হলে ও ব্লাড প্রেসার কমে গেলে শিরায় স্যালাইন দিতে হবে। দ্রুত ডাক্তার ও হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
[১০] ৫. প্রতিদিন ঈইঈ ঞবংঃ করাতে হবে। ডেঙ্গু রোগীকে কখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে: প্রচন্ড পেট ব্যথা, বমি, বডি স্পেসে পানি জমা যেমন- পেটে পানি জমা, বুকে পানি জমা। ব্লিডিং হলে, হেমাটোক্সিট বেড়ে যাওয়া , প্লাটিলেট এর পরিমাণ ৫০,০০০ এর নিচে নামলে,প্রস্্রাব কমে গেলে । কখন ওঈট তে ভর্তি করাতে হবে এসর্ম্পকে তিনি বলেন, ডেঙ্গু শকসিন্ডোম দেখা দিলেই। যেমন প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হলে, লিভার, ব্রেইন, হার্ট, কিডনির জটিলতা দেখা দিলে এবং প্রচন্ড ব্লিডিং হলে। ডেঙ্গু হলে আতঙ্কিত না হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা নিতে হবে।
[১১] ১. ব্যথা নাশক ঔষধ ঘঝঅওউঝ খাবেন না। ২.অত্যধিক ফ্লুইড খাবেন না। ৩.প্লাটিলেট নিয়ে আতঙ্কিত হবেন না। প্লাটিলেটের পরিমাণ ১০,০০০ হলেও যদি হেমাটোক্সিট ঠিক থাকে, রক্তক্ষরণ না হয়, তাহলে অপেক্ষা করুন। প্লাটিলেটের পরিমাণ ১/২ দিনের মধ্যে বাড়তে শুরু করবে।
৪. স্টারয়েড জাতীয় ঔষধ খাবেন না। অধিক সতর্কতা: গর্ভবতী নারী, শিশু কিশোর, ডায়াবেটিস রোগী ও অন্যান্য ক্রনিক অসুখ থাকলে। সুরক্ষা : ডেঙ্গুর কোনো ভ্যাকসিন নেই। ডেঙ্গুর প্রতিরোধে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ও নিধনই হচ্ছে মূল কাজ।
[১২] ১. ব্যক্তিগত পর্যায়ে ফুলের টব, ফুলদানি, ছোট ছোট ডাবের খোসা ইত্যাদি ঘরে ও আশেপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার রাখা। ২. সরকারি পর্যায়ে মশা নিধন অভিযান জোরদার করা। ৩. ঘুমানোর সময় মশারির নিচে ঘুমানো। ৪. ডেঙ্গু রোগীকে দিনের বেলা মশারির নিচে ঘুমাতে হবে। তাহলে বাসার অন্য সদস্যদের ডেঙ্গু কম হবে। চিকিৎসা : জ্বর হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডেঙ্গু টেস্ট করাতে হবে। ডেঙ্গু হলে যথাযথ পরিচর্যা ও চিকিৎসা দিলে মৃত্যুঝুঁকি কম হবে। সম্পাদনা: কামরুজ্জামান
এসকে/কে/এনএইচ
আপনার মতামত লিখুন :