শাহীন খন্দকার: [১] শিশুসহ প্রতিটি মানুষের জীবনে ডায়রিয়া হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ একটি রোগ। এই রোগটি অনেক সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে জীবনে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে এ রোগকে তেমন গুরুত্ব দেন না বেশিরভাগ মানুষ।ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আবহাওয়ার পরিবর্তন আসছে।
[২] শহর গ্রামে এখনও ডায়রিয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনষ্টিটিউট ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ শিশুপুষ্টি, লিভার ও পরিপাকতন্ত্র বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ সফি আহমেদ মুয়াজ বলেন, অনেক সময় ডায়রিয়া মৃত্যুর কারণ শরীরে লবণ ও পানিশূন্যতা।
[৩] তাই আপনার শিশুর ডায়রিয়া দেখা মাত্র শরীরের লবণ ও পানিশূন্যতা এ ঘাটতি মেটাতে সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা খাবার স্যালাইন। নিয়ম মেনে খাবার স্যালাইন খেলে রোগী ধীরে ধীরে সুস্থ্য হয়ে ওঠেন। ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর বা বড়দের ৫ দিন পরেও পাতলা পায়খানা থাকে।
[৪] পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া, জ্বর আসা, পেট ব্যথা ও বমি হওয়া। শুধুমাত্র এমন পরিস্থিতিতে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয়। এক্ষেত্রে দ্রুত একজন চিকিৎসকের কাছে যান। তার পরামর্শে রোগীকে সুস্থ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
[৫] গরমকালে ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। ঠিকভাবে পানি ও লবণ পূরণ করা হলে, এটি কখনো গুরুতর আকার ধারণ করে না, বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ। ডা. মুয়াজ বলেছেন, পাতলা পায়খানার সঙ্গে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। শরীরের পানি ও লবণ পুরণে সঠিক নিয়মে রোগীকে খেতে দিতে হবে ওরস্যালাইন। পাশাপাশি চলবে স্বাভাবিক খাবারও। রোগীকে বেশি বেশি তরল খাবার খেতে দিতে হবে। ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে ডায়রিয়া প্রাকৃতিকভাবেই ভালো হয়ে যায়।
[৬] তিনি আরও বলেন, উচ্চ রক্তচাপ আছে, এমন রোগীরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে ওরস্যালাইন খেতে বিভ্রান্তিতে ভোগেন রক্ত চাপ বেড়ে যাওয়ার ভয়ে। আবার ওরস্যালাইনে চিনি বা গ্লুকোজ থাকে, তাই ডায়াবেটিস রোগীরা খেতে ভয় পান। ডায়রিয়া হলে এসব মাথায় আনার কোনো দরকারই নেই। যে কোনো সমস্যায় চালিয়ে যেতে হবে ওর স্যালাইন। দ্বিতীয় ভুলটি হলো স্যালাইন তৈরিতে গাফিলতি।
[৭] স্যালাইন তৈরির প্রকৃত নিয়ম হলো আধা লিটার পানিতে এক মুঠো গুড়, এক চিমটি লবণ মিশিয়ে তৈরি করা। বাজারের প্যাকেট ওর স্যালাইন তৈরি ক্ষেত্রে আধা লিটার পানিতে প্যাকেটের পুরো ওষুধ দিয়ে স্যালাইন তৈরি করতে হয়। কিন্ত অনেকেই কৃপণতা করে তা করেন না। তবে তৈরি ওর স্যালাইন ১২ ঘন্টা পর্যন্ত খাওয়া যায়। এরপর তা ফেলে দিতে হয়। কারণ ১২ ঘন্টা পর তৈরি স্যালাইনে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ ঘটে। কারণ এ পানি খেলে ডায়রিয়া রোগীর অবস্থা আরও খারাপের দিকে চলে যায়। অথচ এ বিষয়টিও অনেকে গুরুত্ব দেন না। তবে নিজের ইচ্ছেমতো তৈরি স্যালাইন খাওয়া যাবে না। এক সঙ্গে সব স্যালাইন বা দুই তিন বারে তৈরি স্যালাইন খাওয়ার নিয়ম নেই।
[৮] বমি বা পাতলা পায়খানা হলেই ফার্মেসি থেকে তা বন্ধের জন্য ওষুধ খান, যা একেবারেই ঠিক নয়। কারণ ডায়রিয়ায় একমাত্র স্যালাইনই যথেষ্ট। এর বাইরে কোনোভাবেই রোগীকে ওষুধ অর্থাৎ অ্যান্টিবায়োটিক খেতে দেয়া যাবে না। এতে রোগীর শরীরে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে শুরু করে।
এসকে/এসবি২