জাফর ইকবাল, খুলনা: [২] সুন্দরবনে ঘুরতে এসে বাঘ ও বিভিন্ন হিংস্র বন্যপ্রাণীর মুখ থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেলো ৩১ জন পর্যটক। জরুরি সেবার হটলাইন ৯৯৯-এ ফোন দিলে ৩১ পর্যটককে উদ্ধার করেছেন মোংলা থানা পুলিশ ও করমজলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ একদল বনরক্ষী।
[৩] সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তাদের বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র ও পর্যটক স্পট করমজল এলাকার সুন্দরবনের গহীন থেকে উদ্ধার করা হয়। পথ হারিয়ে প্রায় ৪ ঘন্টা বনের ভিতরে আটকা পড়েছিল এ সকল পর্যটক।
[৪] মোংলা থানার ওসি কে এম আজিজুল ইসলাম ও করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাগেরহাটের চিতলমারি থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ ৩১ জনের একটি কিশোর পর্যটক দল গাড়ি যোগে সুন্দরবনের করমজলে ভ্রমণে আসে। শহরের পিকনিক কর্নার থেকে বোঝাই করে আসা একটি জালী ঘাটে বেঁধে রেখে বন বিভাগের কাউকে কিছু না জানিয়ে পায়ে হেঁটে ছোট্ট একটি জায়গা দিয়ে বনের গহীনে চলে যায় তারা। বনে প্রবেশের কিছু সময় পর ফেরত আসতে গিয়ে তারা পথ হারিয়ে ফেলে। সেখানে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা চেষ্টা করেও কোন কুল-কিনারা না পেয়ে বাঘ ও বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর ভয়ে কম্পিত হয়ে পড়ে।
[৫] তিনি আরও বলেন, সর্বশেষ দুপুর আড়াইটার দিকে পর্যটকদের মধ্য থেকে ফেরদৌস নামের এক কিশোর বুদ্ধি খাটিয়ে তার মোবাইল থেকে ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশের সাহায্য চায়। এ সময় তার ফোনে চার্জ না থাকায় দ্রুত অন্য পর্যটকদের বেশ কয়েকটি নম্বর সংগ্রহ করে মোংলার অফিসার ইনচার্জ কে এম আজিজুল ইসলাসসহ থানা পুলিশ। পরে পুলিশ দ্রুত করমজলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবিরকে অবহিত করলে পুলিশ ও বন বিভাগের যৌথ টিম বনের বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশী চালায়। পরে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে তাদের সন্ধান মিলে। তবে দীর্ঘ সময় বনের মধ্যে থাকায় পর্যটকদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ভয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পুলিশ ও বন বিভাগের কর্মীরা পথ হারিয়ে যাওয়া অক্ষত অবস্থায় বনের গহীন থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয় এ সকল পর্যটকদের। করমজল থেকে বোট যোগে ফেরত এনে পুলিশের সহায়তায় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ৩১ পর্যটককে তাদের চিতলমারী উপজেলার নিজ নিজ বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
[৬] উদ্ধারকৃত পর্যটক ফেরদৌস জানায়, আনন্দের ছলে যখন বনে প্রবেশ করি, তখন মনেই হয়নি যে আমরা কোথায় যাচ্ছি। কিন্ত যখন পথ পাচ্ছিলাম না তখন অনেক ভয় করছিল, তবে সহপাঠিদের সাহস যুগিয়েছি এবং বুদ্ধি খাটিয়ে ৯৯৯ এ কল দিয়ে পুলিশের সাহায্য চেয়েছি। আগে জানতাম না, জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন ৯৯৯-এ ফোন দিলে প্রশাসন দ্রুত সহায়তা করে তার প্রমাণ আজ পেয়েছি এবং পুলিশ ও বন বিভাগের সহায়তায় উদ্ধার হতে পেরেছি।
[৭] পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র ও পর্যটক স্পটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানায়, যে এলাকায় এই ৩১ পর্যটক প্রবেশ করেছে, সেখানে অগ্নেয়াস্ত্রসহ বনরক্ষী ছাড়া কেউ প্রবেশ করে না। প্রায় সময়ই ওখানে বাঘ ও হিংস্র বন্যপ্রাণীর আনা-গোনা রয়েছে। এছাড়া বাঘতো প্রায় সময় ওখানে আসে যা বনরক্ষী অনেকেই দেখেছে, ওখানে বাঘের আবাসস্থল। পর্যটকদের ভগ্যের ফলে জীবন নিয়ে ফিরে আসতে পেরেছে। তাই আল্লাহর রহমতে তাদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।
প্রতিনিধি/একে
আপনার মতামত লিখুন :