শিরোনাম

প্রকাশিত : ১৫ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৬:২১ বিকাল
আপডেট : ১৫ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৬:২১ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গত ১৫ বছরেও কাজে আসেনি মৌলভীবাজারের পর্যটন সম্ভাবনা

স্বপন দেব, মৌলভীবাজার: [২] জেলায় রয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত বড়লেখায় মাধবকুন্ড, কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, বৃহত্তম হাওর হাকালুকি, সবুজ চা-বাগান, খাসিয়াপল্লি, হামহাম জলপ্রপাত, মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জি, চা-গবেষণা কেন্দ্র, কুলাউড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাববাড়ি, মুরইছড়া ইকোপার্ক, গাজীপুর চা বাগানের গগণটিলা, দোলনচাঁপা ইকোপার্ক, বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক, মুন ব্যারাজ ও রাজনগরের কমলারানির দিঘীসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র। অথচ গত ১৫ বছরেও পর্যটন শিল্পের এই সম্ভাবনা কাজে লাগানো যায়নি। অর্থনীতির উন্নয়নে পর্যটন শিল্প অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও দেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাময় জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম মৌলভীবাজার।

[৩] জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানায়, ২০০৮ সালে মৌলভীবাজারকে পর্যটন জেলা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে সংরক্ষিত বনাঞ্চল, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবকুন্ড জলপ্রপাত ও ইকোপার্ক উন্নয়নের মধ্যেই পর্যটন বিকাশের ধারণা আটকে আছে। এছাড়া চা-বাগান, হাওর, পাহাড় ও সমতলের বৈচিত্র্যপূর্ণ জনপদ ঘিরে পর্যটনের অমিত সম্ভাবনা কাজে লাগানোর সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। 

[৪] জানা গেছে, গত কয়েক বছরে এখানে আধুনিক মানের হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট গড়ে উঠলেও পর্যটন শিল্পের সামগ্রিক বিকাশ হয়নি। পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান সেভাবে গড়ে উঠেনি। ফলে চাঙ্গা হয়নি ব্যবসা-বাণিজ্য। এ অবস্থায় পর্যটনকেন্দ্র, জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান নতুনভাবে সাজানোর কথা বলেছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। এখানে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হলে চাকরি ও কর্মসংস্থান বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।

[৫] পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আগে জেলা প্রশাসনের স্লোগান ছিল ‘প্রকৃতি মুখরিত মৌলভীবাজার’। পরে এটি পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে ‘চায়ের দেশ মৌলভীবাজার’। নাম পরিবর্তন হলেও গত ১৫ বছরে পর্যটন শিল্পের বিকাশে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। বেসরকারিভাবে আধুনিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট গড়ে উঠলেও পর্যটক কম আসায় অনেক ব্যবসায়ী হতাশায় ভুগছেন।

[৬] পর্যটক আকৃষ্ট করতে এখানের পর্যটনকেন্দ্রগুলো নতুন করে সাজানো, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, অবকাঠামোর আধুনিকায়ন, বিমানে যাতায়াতের ব্যবস্থা, পর্যটকদের সুরক্ষা, উন্নত সেবা নিশ্চিত এবং বাড়তি খরচ কমিয়ে কম খরচে সবার যাতায়াত নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের কাছে এখানের দর্শনীয় স্থান নিয়ে বৈচিত্র্যময় শিল্পের প্রচারণা চালাতে হবে। তবেই পর্যটক শিল্প বিকশিত হবে। এর মধ্য দিয়ে চাকরি ও কর্মসংস্থান দুটিই বাড়বে। একইসঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি চাঙা হবে।

[৭] ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এখানে সব মৌসুমে দেশ-বিদেশি পর্যটকের যাতায়াত থাকে। তবে যে পরিমাণ পর্যটক আসার কথা কিংবা যেভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। অথচ জেলায় দুই শতাধিক পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। 

[৮] হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীদের মতে, জেলায় রয়েছে দেড় শতাধিক হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্টহাউস। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গলের পাঁচ তারকা হোটেল গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ, সদরের নিতেশ্বর এলাকার দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা উল্লেখযোগ্য। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে পরের বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসব হোটেলের শতভাগ কক্ষ বুকিং থাকে। কিন্তু গত অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অবরোধ-হরতাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রায় ৯৫ শতাংশ বুকিং বাতিল হয়ে গেছে। 

[৯] তারা বলেছেন, গত ১৫ বছরে জেলার পর্যটন খাতে কোনও রকমের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। সবকটি পর্যটনকেন্দ্রের অবকাঠামোগত অবস্থা আগের আমলের। এগুলো আকর্ষণীয় করতে কোনও রকমের উদ্যোগ নেই জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টদের। নেই পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। বহু বছরের পুরোনো এসব পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের উপস্থিতি কমে গেছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও নতুনত্ব না থাকায় একবার কোনও পর্যটক এলে দ্বিতীয়বার আসে না। আবার অনেকে ফিরে গিয়ে অন্যদের নিরুৎসাহিত করছেন। পর্যটক সংকটে বেশ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। কেউ কেউ ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছেন।

[১০] জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পর্যটকের খরা কাটিয়ে উঠতে ২০১৭ সালে জেলা প্রশাসন থেকে পর্যটন শিল্পের বিকাশ, সমস্যা ও সম্ভাবনাগুলো চিহ্নিত করে একটি কর্মকৌশল প্রণয়ন করা হয়েছিল। কিন্তু গত ছয় বছরেও এর কোনোটি বাস্তবায়ন হয়নি। কর্মকৌশল রয়ে গেছে কাগজে-কলমে। এছাড়া ২০২২ সালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পর্যটন উন্নয়ন কমিটির সভায় নেওয়া অনেকগুলো সিদ্ধান্ত আজও বাস্তবায়ন হয়নি।

[১১] পর্যটক সংকটের মধ্যেও রাধানগর এলাকার প্যারাগন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টকে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। পর্যটক টানতে এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানালেন রিসোর্টটির মহাব্যবস্থাপক গাজী কে রহমান। তিনি বলেন, ‘শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এবং অনেক আশা নিয়ে রিসোর্টটি নতুন আঙ্গিকে সাজিয়েছি। আশা করছি, এতে পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়বে এবং অনেকের আগমন ঘটবে।’

[১২] মৌলভীবাজার ট্যুর কমিউনিটির পক্ষ থেকে পর্যটন শিল্পের বিকাশে সমস্যাগুলো জেলা প্রশাসনের কাছে তুলে ধরলেও কোনও কাজ হয়নি বলে জানালেন সিনিয়র ট্যুর গাইড সৈয়দ রিজভী। 

[১৩] তবে পর্যটন শিল্পের বিকাশে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ নেওয়া হয় বলে দাবি করেছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল ও রাজস্ব শাখা) মো. বেলায়েত হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা পর্যটনকেন্দ্রগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। পর্যটকদের নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করে। পর্যটকদের কোনও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

[১৪] পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঢেলে সাজানোর কথা জানান জেলা প্রশাসক উর্মি বিনতে সালাম। তিনি বলেন, ‘পর্যটনকেন্দ্রলোতে আরও পর্যটক কীভাবে আকৃষ্ট করা যায়, সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। বিশেষ করে নতুন পর্যটনকেন্দ্রগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, যাতে পর্যটকরা সেগুলো দেখে মুগ্ধ হন। বিদেশি পর্যটক টানতে আরও কিছু উদ্যোগ নেয়ার কথা ভাবছি আমরা।’

প্রতিনিধি/একে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়