শিরোনাম
◈ ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ: জানালেন আইন উপদেষ্টা ◈ জাহাঙ্গীরনগরে ‘গণপিটুনিতে’ সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু ঘিরে রহস্য ◈ তমা মির্জার সঙ্গে সম্পর্ক ফাটলের গুঞ্জন, যা বললেন রাফি (ভিডিও) ◈ ‘মারছে, ভাত খাওয়াইছে, এরপর আবার মারছে, ভাত খাওয়াইছে : তোফাজ্জলের মামাতো বোন (ভিডিও) ◈ ঢাবিতে পিটিয়ে যুবক হত্যার ঘটনায় ৪ শিক্ষার্থী আটক ◈ শামীম ওসমানের পুরোনো ভিডিওটি ভাইরাল : ‘ফিরব কি না জানি না’ ◈ জাদেজা-অশ্বিনের জুটিতে টেস্টের নিয়ন্ত্রণ হারালো বাংলাদেশ ◈ দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, ঘুরতে দেখা গেছে পার্কে : ফিনান্সিয়াল টাইমসের রিপোর্ট ◈ ফের নেতাকর্মীদের জন্য আওয়ামী লীগের জরুরি নির্দেশনা ◈ মণিপুরের সহিংসতায় মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতার বসাচ্ছে ভারত

প্রকাশিত : ১৮ জুন, ২০২২, ০৩:৩৭ দুপুর
আপডেট : ১৮ জুন, ২০২২, ০৩:৪৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

১০ কিলোমিটারে নৌকা ভাড়া ‘৫০ হাজার’ টাকা

বন্যা

ডেস্ক রিপোর্ট: সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শুক্রবার (১৭ জুন) রাত থেকে অবিরাম ভারী বর্ষণে সিলেট নগরীর অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শনিবার (১৮ জুন) সকাল থেকে সিলেট নগরীর বেশিরভাগ রাস্তা এবং এলাকাগুলোর বাসা-বাড়িতে পানি উঠে গেছে। এ অবস্থায় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর থেকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখালের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। এই ১০ কিলোমিটার দূরত্বে যাওয়ার জন্য নৌকা ভাড়া ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।

চাকরিজীবী মারুফ বলেন, ‘চাকরির জন্য আমি সিলেট শহরে থাকি। বাড়িতে আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী পানিবন্দি হয়ে আছেন। তাকে আনার জন্য একটি নৌকা ভাড়া করতে এসেছিলাম, কিন্তু ৫০ হাজার টাকার নিচে কোনো নৌকা যেতে চাচ্ছে না। আমি ৪০ হাজার পর্যন্ত বলেছি। কেউ যায়নি।’

তেলিখালের গ্রামের বাড়িতে পানিবন্দি অবস্থায় থাকা অসুস্থ স্ত্রীকে আনতে সালুটিকরে নৌকা ভাড়া করতে আসেন মারুফ আহমদ। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে একমাত্র ভরসা নৌকা, কিন্তু এই নৌকাই এখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে।

মারুফ বলেন, ‘চাকরির জন্য আমি সিলেট শহরে থাকি। বাড়িতে আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী পানিবন্দি হয়ে আছেন। তাকে আনার জন্য একটি নৌকা ভাড়া করতে এসেছিলাম, কিন্তু ৫০ হাজার টাকার নিচে কোনো নৌকা যেতে চাচ্ছে না। আমি ৪০ হাজার পর্যন্ত বলেছি। কেউ যায়নি।’

সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নৌকায় যাত্রী বহন করছে সালুটিকর থেকে। বালুবাহী বড় ইঞ্জিন নৌকা দিয়ে যাত্রী বহন করা হচ্ছে এই এলাকা থেকে, তবে কোম্পানীগঞ্জ যেতে একেকজন যাত্রীর কাছে দাবি করা হচ্ছে এক থেকে দেড় হাজার টাকা। টাকা দিয়েও অনেক সময় নৌকা পাওয়া যাচ্ছে না।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক জফির সেতুর বাড়ি কোম্পানীগঞ্জে। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার পানিবন্দি একটি পরিবারকে উদ্ধারের জন্য একটি নৌকাকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বলেছি, কিন্তু মাঝি রাজি হয়নি।’

ভাড়া এমন বাড়িয়ে দেয়া প্রসঙ্গে ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকার চালক তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘আমরা মালিকের নির্দেশমতো কাজ করছি। মালিক এমন ভাড়া নিতে বলেছেন।’

কেবল এই এলাকাই নয়, বন্যাদুর্গত পুরো সিলেটেই নৌকার জন্য হাহাকার দেখা গেছে। নৌকার অভাবে পানিবন্দি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রেও আসতে পারছেন না; জলমগ্ন ঘরেই আটকে আছেন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের বাসিন্দা নিহাল আহমদ বলেন, ‘আমার পুরো পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে, কিন্তু তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার মতো কোনো নৌকা পাইনি।

‘বাধ্য হয়ে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি ডিঙি নৌকা কিনেছি। অন্য সময় এগুলো তিন হাজার টাকায় পাওয়া যায়।’

এদিকে শনিবার সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। নগরেই অনেক বাসাবাড়ির ভেতরে কোমর পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। শনিবারও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। নামছে ঢলও।

নগরের ঘাসিটুলা এলাকায় বাসা সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ছামির মাহমুদের। তার বাসায় পানি উঠেছে।

ছামির বলেন, ‘আমার বাসার বিছানার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। দ্রুত পানি বাড়ছে। বাধ্য হয়ে তাই পরিবার নিয়ে আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছি।’

বন্যার কারণে সিলেট থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। এই উপজেলায় বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটও নেই।

এর বাইরে কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, সদর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বেশির ভাগ সড়কই তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকে পড়েছে জেলার সব উপজেলা ও নগরের বেশির ভাগ এলাকায়।

ঢল না থামলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপসহকারী প্রকৌশলী নিলয় পাশা।

তিনি বলেন, পানি দ্রুত বাড়ছে। সিলেটের প্রধান প্রধান সব নদীর পানিই বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে শনিবার থেকে কাজ শুরু করেছে নৌবাহিনী। এর আগে শুক্রবার থেকে মাঠে নামে সেনাবাহিনী। তারা কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে।

পানিবন্দি অবস্থায় আটকে পড়া লোকজনের অভিযোগ, প্রশাসনের কেউ তাদের খোঁজ নেয়নি। তারাও প্রশাসনের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।

এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুসিকান্ত হাজং বলেন, সিলেটের সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জের সড়কপথের সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ ছাড়া মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও ঠিকমতো কাজ করছে না।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে জানিয়ে ইউএনও বলেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় উঁচু ভবনগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গত মানুষকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, বানভাসিদের উদ্ধারে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটের ইউএনওকে নৌকা কিনতে বলা হয়েছে। এ জন্য তাদের টাকাও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

বন্যায় ডুবে গেছে কোম্পানীগঞ্জ থানা ভবন। এ নিয়ে সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘কোম্পানীগঞ্জ থানা ভবন চরমভাবে বন্যায় আক্রান্ত। বন্যায় থানার নিচতলা পুরোপুরি ডুবে গেছে। থানা এলাকাজুড়ে মোবাইল টাওয়ারগুলো অকেজো হওয়ায় থানার কোনো পুলিশ সদস্যের সঙ্গে এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।

‘থানার ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক বিদ্যুৎ না থাকার কারণে বিকল হয়ে পড়েছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক অকেজো হওয়ায় থানা এলাকার উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে।’

তিনি আরও জানান, শনিবার ভোরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে বিশেষ একটি দল উদ্ধার তৎপরতা চালাতে কোম্পানীগঞ্জ থানা এলাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে। সূত্র: নিউজ বাংলা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়