শিরোনাম
◈ প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব হলেন তিথি ও নাইম ◈ ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ: জানালেন আইন উপদেষ্টা ◈ জাহাঙ্গীরনগরে ‘গণপিটুনিতে’ সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু ঘিরে রহস্য ◈ তমা মির্জার সঙ্গে সম্পর্ক ফাটলের গুঞ্জন, যা বললেন রাফি (ভিডিও) ◈ ‘মারছে, ভাত খাওয়াইছে, এরপর আবার মারছে, ভাত খাওয়াইছে : তোফাজ্জলের মামাতো বোন (ভিডিও) ◈ ঢাবিতে পিটিয়ে যুবক হত্যার ঘটনায় ৪ শিক্ষার্থী আটক ◈ শামীম ওসমানের পুরোনো ভিডিওটি ভাইরাল : ‘ফিরব কি না জানি না’ ◈ জাদেজা-অশ্বিনের জুটিতে টেস্টের নিয়ন্ত্রণ হারালো বাংলাদেশ ◈ দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, ঘুরতে দেখা গেছে পার্কে : ফিনান্সিয়াল টাইমসের রিপোর্ট ◈ ফের নেতাকর্মীদের জন্য আওয়ামী লীগের জরুরি নির্দেশনা

প্রকাশিত : ১৭ জুন, ২০২২, ১১:৩৩ দুপুর
আপডেট : ১৭ জুন, ২০২২, ০৫:৩৫ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি, ডুবে গেছে শহর

সুনামগঞ্জে বন্যা

হ্যাপি আক্তার: ভারী বর্ষণ ও  ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। সুনামগঞ্জে বন্যার ভয়াবহতা ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব রেকর্ড। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

টানা বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে ডুবে গেছে সুনামগঞ্জ শহর। শহরের কেন্দ্রস্থল পৌর বিপণিতেও পানি উঠেছে। সারাদেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তাহিরপুর উপজেলায় টাঙ্গুয়ার হাওরে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেট জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৫০০ গ্রামের মানুষ। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ডুবে যাওয়া এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের মেঘালয়-চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এই সময়ে সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ১৮৫ মিলিমিটার। ডুবে গেছে শহরের সবচেয়ে উঁচু স্থান।
 
শহরের উকিলপাড়ার বাসিন্দা মোনাজ্জির আলী মামুন বলেন, ঘরে হাঁটুসমান পানি এর আগে কখনও হয়নি।

তেঘরিয়ার বাসিন্দা সেলিম আহমদ বলেন, পশ্চিম তেঘরিয়া বা বড়পাড়ার অনেক বসতঘরে বুকসমান পানি হয়েছে। সড়কে চলাচল করা কঠিন হয়ে পড়েছে। শহরেই পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ।

সুনামগঞ্জ বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সদস্য সচিব জুয়েল আহমদ বলেন, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ সারাদেশের সঙ্গে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই সড়কের গোবিন্দগঞ্জ নতুনবাজার থেকে লামাকাজি জাঙ্গাইল পর্যন্ত ডুবে গেছে। ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

সুনামগঞ্জ শহরের সুরমা নদীতীরবর্তী সব এলাকার ঘরবাড়ি ও দোকানপাটে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি উঠেছে। শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক এলাকায় পানি ওঠায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে তাহিরপুর সীমান্তে যাদুকাটা নদীর পানি বিপৎসীমার ৮ দশমিক শূন্য ৫ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত দু'দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাহিরপুর উপজেলায় টাঙ্গুয়ার হাওরসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জানান, সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ২০২০ সালের বড় বন্যার সময় সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপরে। গতকাল সেটি অতিক্রম করেছে। বিপৎসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে সুরমার পানি।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ছাতকে ১৭, দোয়ারাবাজারে ১৬ এবং সুনামগঞ্জ সদরে ১০ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

এদিকে সিলেট জেলায় দ্রুত বাড়ছে নদনদীর পানি। গতকাল সুরমা নদীর পানি উপচে নগরীর নতুন এলাকার বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। কুশিয়ারা, লোভাছড়া, সারিসহ ছোট-বড় সবক'টি নদীর পানি বাড়ছে।

এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি, দোকানপাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। গত ১৫ মে থেকে শুরু করে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ৮-১০ দিন প্লাবিত ছিল। কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও সদর উপজেলার অন্তত ৫০০ গ্রামের কয়েক লাখ মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে।

নিজের এলাকার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন গোয়াইনঘাটের রুস্তমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন শিহাব। জৈন্তাপুর উপজেলার হেমু ভাটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্বাস উদ্দিন বলেন, পানিবন্দি হয়ে পড়ায় রান্নাবান্নাসহ নানা সমস্যায় চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন তাঁরা।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) বেলা ৩টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড-সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর পানি সিলেট (নগরী) পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার ও কানাইঘাট পয়েন্টে দশমিক ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, আগামী ১০ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে দেখা গেছে, একইভাবে চারদিন বৃষ্টি হবে। এতে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। গত ২৪ ঘন্টায় সিলেটে সর্বোচ্চ ১৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নগরীতে প্রাথমিক পর্যায়ে ৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ শামসুদ্দোহা বলেন, বুধবার বিকেলে সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ছিল আজ সেটি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটারে ওপরে আছে।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সুনামগঞ্জ শহরে প্রবল বেগে পানি আসছে। আমার বাসাতেও পানি উঠেছে। আমাদের ছাতক উপজেলা পুরোপুরি পানির নিচে। দোয়ারাবাজার উপজেলার প্রায় সব জায়গায় পানি। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ। সড়কে পানি উপচে যাচ্ছে। সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুর সড়ক গত তিন দিন যাবত বন্ধ আছে। সুনামগঞ্জ সিলেটের মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ বাজারের স্থানে হাইওয়ে অভারফ্লো হয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, চলমান বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন থাকবে। এই মাসে ৮১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের মধ্যে ৬৮৭ মিলিমিটার হয়েছে। এই কয়েকদিনে যে পরিমাণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তা ১৯ তারিখ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। সূত্র: দ্য ডেইলি স্টার, সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়