মো. ছায়েদ হোসেন, রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর): পাখি-সব করে রব, রাত্রি পোহাইলো কাননে কুসুমকলি, সকলি ফুটিল। রাখাল গরুর পাল, লয়ে যায় মাঠে। শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে, ছড়াটি বইয়ের পাতার মধ্যেই বিদ্যমান। ছড়ার মতো নানান জাতের পাখির কিচিরমিচির শব্দে রামগঞ্জে সকাল বেলা গ্রামের বধূ বৃদ্ধা এমনকি কিশোর-কিশোরীদের ঘুম ভাঙলেও গ্রাম-বাংলার আনাচে-কানাচে আগের মতো আর পাখির ডাক শোনা যায় না।
বর্তমান পরিবেশের দিকে তাকালে দেখা যায় হাওর-বাঁওড়, বিল, জলাভূমি, নদীনালা-খালবিল শুকিয়ে যাচ্ছে। ভরাট হয়ে যাচ্ছে পুকুর। এসব জলাভূমি, হাওর-বাঁওড় থেকে খাবার সংগ্রহ করে বেঁচে থাকে পাখিগুলো। সময় ও জলবায়ুর বিবর্তনে হঠাৎ করেই সেই পাখি গুলো হারিয়ে যাচ্ছে রামগঞ্জ থেকে। আগে খাবারের সন্ধানে পাখিগুলো ভোর সকালে বের হয়ে সবুজ মাঠের ফসলের চারদিকে ঘুরে বেড়ালেও এখন তা চোখে পরে না। গ্রামবাংলার অতি পরিচিত বসন্তে যে পাখি বউ কথা কও বলে গ্রামের প্রতিটি মানুষকে মাতিয়ে তুলতো সেই পাখির দেখাও আর পাওয়া যায়না। ফলে বর্তমান প্রজন্মরা চেনেনা এসব পাখি। এসব পাখির ডাকও শোনেনি কোনদিন।
অতীতে গ্রাম এলাকায় ব্যাপকহারে টুনটুনি, চিল, পানকৌড়ি, ডাহুক, বালীহাঁস, কোকিল, বক, শালিক, ঘুঘু, দোয়েল, বাবুই, কাকসহ বিভিন্ন পাখিদের দেখা যেত। বর্তমানে জাতীয় পাখি দোয়েল, কাঠ ঠোকরা, কোকিল, ডাহুক, ক্যাসমেচি, বাবুই, ঘুঘু, বাওয়াই, শালিক, টুনটুনি, মাছরাঙা, বটর, টেইটেরা, গোমড়া ও প্যাচাসহ অনেক পাখিই আর দেখা যায়না। শোনা যায় না এসব পাখির ডাক। তাছাড়া পাখি শিকারীদের নিষ্ঠুরতা তো রয়েছেই। কখনও কখনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা ঝড়ে পাখির বাসা ভেঙ্গে পাখির ছানার মৃত্যু ঘটে ও ডিমগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
পাখির বিলুপ্তি ঘটায় যেমনি জীব বৈচিত্রের সংকট বাড়ছে, তেমনি আমরা হারিয়ে ফেলছি সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় পাখির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই কেবল আমাদের সচেতনতা ও সহনশীলতাই রক্ষা করতে পারে পাখির স্বাভাবিক বেঁচে থাকা।
এছাড়াও বড় বড় গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন কারণে। এসব গাছগুলো পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে থাকে। পাখির আবাসস্থল নির্বিচারে ধ্বংস ও বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক দেয়ার প্রভাবে এসব পাখি আজ বিলুপ্ত প্রায়। বিশেষ করে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ আরো অনেক পাখি আর সচরাচর দেখা যায় না। শোনা যায় না এসব পাখির মধুর ডাক। উড়তে দেখা যায় না আর মুক্ত নীল আকাশে। বর্তমান সময়ের ছেলেমেয়েরা এসব পাখি হয়তো দেখেনি, অনেকেই এসব পাখির নামও জানে না। ফলে তরুণ প্রজন্মের কাছে এসব পাখি হয়ে যাচ্ছে গল্প আর ইতিহাস। এমনকি আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েল পাখিকেও ছবি অথবা বই দেখে চিনতে হয় শিশু-কিশোরদের। এ প্রজন্মের অনেক শিশু-কিশোর কখনো দেখেনি মুক্ত আকাশে উড়ন্ত এসব নামকরা পাখি।
এ ব্যাপারে রামগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, কৃষি জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রনসহ পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে জাতীয় পাখি দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মিলবে না বলে মনে করেছেন তিনি। আবার খাদ্য সংকট ও আবাসস্থল কমে যাওয়ায় পাখি বংশ বিস্তার করতে পারছে না, এতে কমে যাচ্ছে পাখি। তাই পরিবেশ রক্ষা জরুরি বলে মনে করছেন তিনি। সম্পাদনা: অনিক কর্মকার
প্রতিনিধি/একে
আপনার মতামত লিখুন :