শিরোনাম
◈ প্রধান উপদেষ্টার সহকারী প্রেস সচিব হলেন তিথি ও নাইম ◈ ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ: জানালেন আইন উপদেষ্টা ◈ জাহাঙ্গীরনগরে ‘গণপিটুনিতে’ সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু ঘিরে রহস্য ◈ তমা মির্জার সঙ্গে সম্পর্ক ফাটলের গুঞ্জন, যা বললেন রাফি (ভিডিও) ◈ ‘মারছে, ভাত খাওয়াইছে, এরপর আবার মারছে, ভাত খাওয়াইছে : তোফাজ্জলের মামাতো বোন (ভিডিও) ◈ ঢাবিতে পিটিয়ে যুবক হত্যার ঘটনায় ৪ শিক্ষার্থী আটক ◈ শামীম ওসমানের পুরোনো ভিডিওটি ভাইরাল : ‘ফিরব কি না জানি না’ ◈ জাদেজা-অশ্বিনের জুটিতে টেস্টের নিয়ন্ত্রণ হারালো বাংলাদেশ ◈ দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, ঘুরতে দেখা গেছে পার্কে : ফিনান্সিয়াল টাইমসের রিপোর্ট ◈ ফের নেতাকর্মীদের জন্য আওয়ামী লীগের জরুরি নির্দেশনা

প্রকাশিত : ২০ মে, ২০২২, ১২:৫২ দুপুর
আপডেট : ২০ মে, ২০২২, ১২:৫২ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মানকিপক্স ভাইরাসে আতংক নয়, প্রয়োজন সচেতনতা

ডাঃ নাজমুল হায়দার

ডাঃ নাজমুল হায়দার: সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ৯ জন, পর্তুগাল ৫ জন, স্পেন ২৩ জন এবং আমেরিকায় ১ জনের দেহে ‘মানকিপক্স’ ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া কানাডায় সন্দেহভাজন ৭ ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। 

আফ্রিকার বাইরে একসঙ্গে এতোগুলো দেশে এবং এতোগুলো মানুষের দেহে মানকিপক্সের সংক্রমণ এটাই প্রথম। মূলত এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে নাইজেরিয়া ফেরত দুই জন মানুষের দেহে ‘মানকিপক্স’ ভাইরাস শনাক্ত করনের মাধ্যমে এই আউটব্রেকের সুচনা হয়। 

‘মানকিপক্স’ পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে (নাইজেরিয়া, সিয়েরা লিওন) এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকার দেশগুলোতে (ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কংগো, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র) এন্ডেমিক, প্রায় নিয়মিত লোকালি মানকিপক্স রোগ শনাক্ত হয়। নাইজেরিয়াতে এখন একটা আউটব্রেক চলছে।

২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৫৫৮ জন মানুষের দেহে মানকিপক্স রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। নাইজেরিয়ান সিডিসি এবছর (৩০ এপ্রিল পর্যন্ত) এখন পর্যন্ত মাত্র ১৫ জন মানকিপক্স রোগী সনাক্ত করেছে যদিও মূল আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে এ বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এক হাজারের বেশি মানকিপক্স রোগী শনাক্ত করা হয়েছে।

১৯৮০ সালে  স্মলপক্স (গুটি বসন্ত) ভাইরাস পৃথিবী থেকে নির্মুল (ইরাডিকেশন) করার পরে  মানুষে সংক্রমণক্ষম পক্স ভাইরাস গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ (অর্থপক্স) ভাইরাস হচ্ছে এই মানকিপক্স ভাইরাস। এই ভাইরাসের দুইটা ক্লেড আছে। একটা হচ্ছে ওয়েস্ট আফ্রিকান ক্লেড, অন্যটা হচ্ছে সেন্ট্রাল আফ্রিকান ক্লেড। স্মলপক্স ভাইরাসের ভ্যাকসিন মানকিপক্স এর বিরুদ্ধে ৮৫% পর্যন্ত ক্রস প্রটেকশন দেয় (১)। স্মল পক্সের ভ্যাক্সিনেশন বন্ধ হয়েছে প্রায় চল্লিশ বছর আগে। যাদের শরীরে স্মলপক্স এর ভ্যাকসিন দেওয়া নাই বা স্মলপক্স ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় নাই তাদের জন্য সেন্ট্রাল আফ্রিকান ক্লেডে (DRC) মৃত্যুর হার ১০% এবং ওয়েস্ট আফ্রিকান ক্লেডে মৃত্যুর হার এক পারসেন্ট এর কম (১) ।

Reservoir (সংরক্ষক প্রাণী): 
সর্বপ্রথম ১৯৫৮ সালে বানরের দেহে সনাক্ত হয়েছে বলে মানকিপক্স নামকরণ হলেও এই ভাইরাসের মূল রিজার্ভার (সংরক্ষক) ইদুর শ্রেণীর প্রাণীরা (১)। কাঠবিড়ালি (Rope squirrels) নামক প্রাণী থেকে সবচেয়ে বেশিবার এ ভাইরাস সনাক্ত করা গেছে। 

এছাড়া (Sooty mangabey) নামক বানর এবং (Sun squirrel) জাতীয় প্রাণী থেকে সংক্রমিত হয়ে (spill over) পরবর্তীতে মানুষ থেকে মানুষের দেহে সংক্রমণ হয়।
মানুষের মাঝে ১-২ জেনারেশন পরে এটার সংক্রমণের হার কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৮০ দশকে ম্যাথমেটিক্যাল মডেলিং করে বলা হয়েছিল এই ভাইরাস বড় কোন ধরনের এপিডেমিক করতে সক্ষম হবে না (R0: 0.83)। সে অবস্থার অনেক চেঞ্জ হয়েছে।

পৃথিবীর অর্ধেকেরও বেশি মানুষ, (যাদের বয়স চল্লিশের নিচে) তাদের কারোরই স্মলপক্স ভাইরাস এর এন্টিবডি নাই। অনেকগুলো প্রাণী দেহে এই ভাইরাস সনাক্ত হলেও সুনির্দিষ্টভাবে কোন প্রাণী এই ভাইরাসের মুল রিজার্ভার সেটা এখনো নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। 

১৯৮০ সালের তুলনায় শহর এবং গ্রামগুলো এখন অনেক ঘনবসতিপূর্ণ, অনেক বেশি কানেক্টেড এবং একটা দেশ আরেকটা দেশের সাথে অনেক বেশি যোগাযোগ করে। সুতরাং এই ভাইরাস মানুষের স্মলপক্স ভাইরাস এর মতো ইপিডেমিক/ প্যানডেমিক করতে পারার সামর্থ্য রাখে কিনা সেটা আরো বিস্তারিত ভাবে গবেষণা করা দরকার।

Transmission (সংক্রমণ): 
প্রথমে সংরক্ষক (reservoir) প্রাণী (ইঁদুর, কাঠ বিড়াল এবং বানর) থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় (Spillover). এরপর মানুষ থেকে মানুষের মাঝে ছড়ায়। রেসপিরেটরি ড্রপলেট, বডি ফ্লুইড এবং আক্রান্ত ক্ষতস্থান কিংবা কন্টামিনেটেড ম্যাটেরিয়ালসের (কাপড়) সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে এ ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। 
সম্প্রতি ইউরোপে শনাক্ত হওয়া অধিকাংশ কেইস ‘গে’ (সমকামী) মানুষের মাঝে দেখা গেলেও এটা ট্রেডিশনাল রুট অর্থাৎ ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংযোগ এর মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। 

ইউরোপিয়ান সিডিসি ১৯ মে ২০২২ একটা প্রেস রিলিজে বলেছে, কোনো রকমের ট্রাভেল হিস্ট্রি ছাড়া এতোগুলো মানুষের মাঝে ‘মানকিপক্স’ শনাক্তকরন এই ভাইরাসের শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ানোর ইঙ্গিত বহন করে।
সাধারণত এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সহজে সংক্রমিত হতে পারে না, হলেও এক থেকে দুই জেনারেশন এর বেশি মানুষের মাঝে সাসটেইন করে না। ইউরোপ সহ যারা আক্রান্ত শহর গুলোতে আছেন তাদের কারোরই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

Vaccine:
গুটি বসন্ত (স্মল পক্স) এর ভ্যাকসিন মানকি পক্স এর সংক্রমণ প্রতিরোধ এর ক্ষেত্রে ৮৫ ভাগ কার্যকর। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে একটা ভ্যাকসিন (JYNNEOSTM, also known as Imvamune or Imvanex) মানুষের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে ।

জবভবৎবহপবং: 
References: 
1) Petersen et al. Monkeypox — Enhancing public health preparedness for an emerging lethal human zoonotic epidemic threat in the wake of the smallpox post-eradication era: International Journal of Infectious Diseases (2019) 78 (78-84)

2) US CDC: Monkeypox: Treatment: Monkeypox and Smallpox Vaccine

লেখক: 
ডাঃ নাজমুল হায়দার (পিএইচডি, এমপিএইচ, এমএসসি, ডিভিএম)পোস্টডক্টরাল গবেষক, রয়্যাল ভেটেরিনারি কলেজ, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাজ্য। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়