শিরোনাম
◈ ভারতে শেখ হাসিনা আশ্রয় পেতে যাচ্ছেন দালাই লামার মতোই! ◈ কর্মীদের হত্যাকাণ্ডের নিউজ কোথায়, প্রশ্ন আওয়ামী লীগের ◈ শাহবাগে বিক্ষোভ: আগামী ৭২ ঘণ্টায় পার্বত্য তিন জেলায় অবরোধের ঘোষণা  ◈ পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ : রাঙ্গামাটিতে ১৪৪ ধারা জারি ◈ বাইতুল মোকাররমে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত বেশ কয়েকজন, সতর্ক অবস্থানে সেনাবাহিনী ও পুলিশ (ভিডিও) ◈ আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা : পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ◈ দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর আজ স্বাভাবিক দীঘিনালার পরিস্থিতি ◈ জাতিসংঘ অধিবেশনে যাদের সঙ্গে বৈঠক হতে পারে মুহাম্মদ ইউনূসের ◈ অস্বস্তিকর গরম: অবসান হবে কবে? জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর ◈ হাসান মাহমুদের ৫ উইকেট, ভারত থামলো ৩৭৬ রানে

প্রকাশিত : ১৫ অক্টোবর, ২০২২, ০৪:৩১ সকাল
আপডেট : ১৫ অক্টোবর, ২০২২, ০৯:২৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

নারায়ণগঞ্জের অব্যবহৃত ২৫ খাল

এক দশকে তাপমাত্রা বেড়েছে দশমিক ৫১ ডিগ্রি

ছবি: সংগৃহীত

বণিক বার্তা: শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে গড়ে ওঠা দেশের অন্যতম প্রাচীন শহর নারায়ণগঞ্জ। নদীতীরবর্তী অন্যান্য শহরের মতো নারায়ণগঞ্জের ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও বেশ ওপরেই। ফলে প্রাকৃতিক কারণেই নারায়ণগঞ্জের আবহাওয়া শীতল। যদিও ক্রমবর্ধমান নগরায়ণ ও প্রচুর শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠায় শীতল নারায়ণগঞ্জ ক্রমেই তেতে উঠেছে। নারায়ণগঞ্জের আবহাওয়ায়ও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। গত এক দশকে শহরটির তাপমাত্রা বেড়েছে উদ্বেগজনকভাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খালের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের সুযোগ থাকলেও সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্টদের।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) সূত্রে জানা গিয়েছে, নগরীতে ছোট-বড় ২৬টি খাল রয়েছে। এর মধ্যে ইব্রাহিম মিল সংলগ্ন খাল, কিল্লারপুর খাল, শিমরাইল খাল, মিজমিজি পূর্বপাড় খাল, মদনগঞ্জ খাল, কুড়িপাড়া খাল, দাড়িসোনাকান্দা খাল, লক্ষণ খোল খাল, লুহিয়া খাল, একরামপুর খাল উল্লেখযোগ্য। নাসিকের ২৬ খালের মধ্যে গত এক দশকে মাত্র একটি খাল সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নগরবাসীর জন্য গণপরিসরে রূপান্তর করা হয়েছে। তবে বর্তমানে আরো পাঁচটি খালের রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে নাসিক কর্তৃপক্ষ।

নারায়ণগঞ্জের নগরায়ণ ও শিল্প-কারখানা বৃদ্ধির ফলে শহরের অভ্যন্তরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষক।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক শিল্প ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। এর ফলে নারায়ণগঞ্জে তাপমাত্রা বেড়ে অন্তত দশমিক ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১১ সালে শহরটির তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৮৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৯ সালে তাপমাত্রা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

যদিও নারায়ণগঞ্জের শিল্প এলাকার তাপমাত্রা আরো বেশি বলে দাবি করেছেন নাসিক কর্মকর্তারা। নাসিক সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নাসিকের শিল্প এলাকার গড় তাপমাত্রা ৩০-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে।

নাসিকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে নগরীর খালগুলো বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে দাবি খোদ সিটি করপোরেশনেরই। সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, নগরের বাবুরাইল খালটি জনগণের জন্য গণপরিসরে রূপান্তর করে সেখানে একটি তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র বসানো হয়েছে। পাশাপাশি চাষাঢ়া ও বঙ্গবন্ধু মোড়েও আরো দুটি তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে।

সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, বাবুরাইল খাল ও অন্যান্য এলাকার তাপমাত্রায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে। খাল এলাকার তাপমাত্রা অন্য এলাকার চেয়ে ২ ডিগ্রি কম দাবি করে নাসিক সূত্র জানায়, বাবুরাইল খাল এলাকায় গত ১০ দিন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে গড়ে ২৯ দশমিক ৯৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে শহরের ব্যস্ততম এলাকা চাষাঢ়ায় গড়ে ৩০ দশমিক ৬৫ ডিগ্রি ও বঙ্গবন্ধু মোড়ে ৩২ দশমিক ৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

খালের রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে শহরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন নাসিকের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. মঈনুল ইসলাম। তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ খুব বড় শহর নয়। ছোট এ শহরে রয়েছে ২৬টি খাল। এর মধ্যে একটি খাল সাজিয়েছি। আরো পাঁচটির কাজ চলমান। সবগুলো খাল পরিকল্পিতভাবে সাজাতে পারলে নারায়ণগঞ্জকেও ভেনিসের মতো করে তোলা সম্ভব। তবে এজন্য সময় প্রয়োজন।

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে খাল ও জলাভূমির উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে উল্লেখ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বলেন, একটি শহরে নানা কারণেই তাপমাত্রা বেড়ে যায়। বিশেষ করে শহরের বড় অংশ যদি শিল্প এলাকা হয়, তাহলে তাপমাত্রা তীব্র মাত্রায় বাড়বে। এ বাড়তি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে খাল-বিল-পুকুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাপমাত্রা কমানোর ক্ষেত্রে পানির নিজস্ব ক্ষমতা আছে। সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় তুলনামূলকভাবে গরম কম লাগে। এটা আসলে পানি তাপ শোষণ করে নেয়ার কারণেই হয়ে থাকে। তেমনি নগর এলাকায়ও খাল-জলাশয় তাপ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

নারায়ণগঞ্জের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ওপরে থাকায় এলাকাটি প্রাকৃতিকভাবেই শীতল বলে জানান রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মো. এজাজ। তিনি বলেন. নারায়ণগঞ্জে প্রচুর খাল, বিল, পুকুর ও জলাভূমি রয়েছে। ফলে এলাকাটির আবহাওয়া শীতল। কিন্তু শিল্প এলাকায় অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের কারণে তাপমাত্রা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। অতিরিক্ত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে যেকোনো নগরের খালগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মানুষের ব্যবহারোপযোগী করে তুলতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়