মনিরুল ইসলাম: সাভারের ট্যানারী শিল্প নগরীর যেসব ট্যানারি পরিবেশগত ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেনি এবং কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার সম্ভাবনা নেই সেসব ট্যানারি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে পরিবেশ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) প্রতিনিধিদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। বৈঠকে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সংসদীয় কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদ, তানভীর শাকিল, মো. রেজাউল করিম ও মো. শাহীন চাকলাদার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন বান্তি ঘোষসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কমিটির বৈঠক সূত্র জানা গেছে, সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে দৈনিক ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদিত হয়, যেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজার ঘনমিটার। সেখানে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোন ব্যবস্থাই নেই। গত বছরের আগস্টে দূষণের দায়ে শিল্প নগরী ‘আপাতত’ বন্ধ রাখার সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। এরপরও সংসদীয় দূষণ বন্ধে একাধিকবার সুপরিশ করলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবকে ডাকার সিদ্ধান্ত নেয় সংসদীয় কমিটি। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পরিবেশগত ছাড়পত্র অনাগ্রহী ট্যানারী বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী মাসে ওই সকল ট্যানারির তালিকা চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারে স্থানান্তরের উদ্দেশ্য ছিল দূষণ রোধ করা। কিন্তু এখন সাভারের ধলেশ্বরী মৃতপ্রায়। আগে বুড়িগঙ্গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এখন হচ্ছে ধলেশ্বরী। চামড়া শিল্প নগরীতে কঠিন বর্জ্য পরিশোধনের কোনো ব্যবস্থা নেই। শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের ব্যর্থতা স্বীকার করেছে।
তিনি আরো বলেন, বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়েছে ট্যানারি কারখানাগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হবে। একটি ভাগে থাকবে যেসব প্রতিষ্ঠান নিজেরা বর্জ্য শোধানাগার তৈরি করেছে এবং করার বিষয়ে আগ্রহী। আরেকটি ভাগে থাকবে যেসব প্রতিষ্ঠান কখনোই পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেনি এবং জোড়াতালি দিয়ে চলছে, যাদের কমপ্লায়েন্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বাকী প্রতিষ্ঠানগুলো থাকবে তৃতীয় ভাগে।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, দ্বিতীয় ভাগে যেসব প্রতিষ্ঠান থাকবে সেগুলো দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করবে। তাদের সব সুবিধা বাতিল করা হবে।
তৃতীয়ভাগে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কমপ্লায়েন্ট হওয়ার জন্য ছয় মাসের সময় দেওয়া হবে। আগামী মাসে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। এছাড়া বর্জ্য পরিশোধনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছাড়া কিভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে, এর জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :