শিরোনাম
◈ দিল্লিতে এক কেজির ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার রুপিতে ! ◈ কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার নদীতে বিলীন ◈ ভারতে থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, কোন আইনের বলে ভারতে থাকবেন শেখ হাসিনা? ◈ (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার ◈ স্থিতিশীল ডলারের দর, ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ◈ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘গ্যারান্টিতে’ নগদ টাকার সংকট কাটছে যে ৫ ব্যাংকের ◈ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চলছে, জাবিতে কোন কমিটিই নেই : ছাত্রদল ◈ গণপিটুনিতে মৃত্যু: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখপ্রকাশ, বৈষম্যবিরোধীদের নিন্দা, ফেসবুকে নানা সমালোচনা ◈ ভারতের গোলা যাচ্ছে ইউক্রেনে, ক্ষুব্ধ রাশিয়া ◈ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সুনামগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার গ্রেফতার

প্রকাশিত : ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৫:৫৭ বিকাল
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ০৫:৫৭ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জলবায়ু পরিবর্তন যেভাবে বাংলাদেশের বিপদের কারণ

এম মাছুম বিল্লাহ: বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে ও অন্যান্য সমস্যায় বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলো বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন হচ্ছে। জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাব যেমন উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমন শহর অঞ্চলের এর প্রভাব পড়েছে। শহরাঞ্চলের প্রচন্ড দাবদাহ শুরু হয়েছে। এর জেরে শহরের মানুষের ভাবনার পুরোভাগে চলে এসেছে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি বাংলাদেশের জন্য বড় এক বাস্তবতা। তাই সম্ভাব্য বিপদ এমনভাবে মোকাবিলা করতে হবে, যাতে মানবিক সংকট এড়ানো যায়।  

বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে দাবদাহ নজিরবিহীন। শত বছর আগে থেকে তাপমাত্রার রেকর্ড রাখা হচ্ছে। সেই রেকর্ড বলছে, গেল এপ্রিল-মে মাস ছিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে উষ্ণ; রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ৭ জেলা ও তিন বিভাগের উপর দিয়ে বয়ে গেছে তীব্র তাপপ্রবাহ। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, বাংলাদেশের রাজশাহী, পাবনা, যশোর এবং চুয়াডাঙা অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী ও পটুয়াখালী অঞ্চলসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কেবল তাপমাত্রার পারদই চড় চড় করে বাড়বে না, বর্ষাও হবে দীর্ঘমেয়াদি, বাড়বে খরা। ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় অনুমান করা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এশিয়ার ৪ কোটি মানুষ জলবায়ুজনিত উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন যে একটা বাস্তবতা, তা কিছু সময়ের জন্য মেনে নেওয়া হলেও এখানেই থেমে থাকলে চলবে না। বাংলাদেশ এরই মধ্যে ঝড় ও জোয়ারের কবল থেকে বাঁচতে ৭০০ কিলোমিটারের বেশি বাঁধ নির্মাণসহ এক হাজারের বেশি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে।

এ কারণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও অর্থায়ন জরুরি, বিশেষ করে এ অঞ্চলের দরিদ্র দেশগুলোর জন্য। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও এর ক্ষয়ক্ষতি কমানোর লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংক এ অঞ্চলের জন্য ২০১৭ সালে ১৪০ কোটি ডলার ও ২০২১ সালে ৩৭০ কোটি ডলার অর্থায়ন করেছে। এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোয় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশকে সহায়তায় এ ধরনের আরও উদ্যোগ দরকার। 

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী ‘গ্লোবাল গোল অব অ্যাডাপটেশন’-এর অধীন উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা বাড়ানোসহ পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো (অভিযোজন) প্রশ্নে সহযোগিতা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে উন্নত দেশগুলোর। তাই দক্ষিণ এশিয়াসহ ঝুঁকির মুখে থাকা অঞ্চলগুলোতে এ-সংক্রান্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে তহবিল জোগাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পরিষ্কারভাবে ভূমিকা নিতে হবে। 

দ্বিতীয়ত, এ অঞ্চলের কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা দরকার। যদিও ঐতিহ্যগতভাবে এ অঞ্চল কম কার্বন নিঃসরণকারী, তবে ভারত নিঃসরণের গ্রহণযোগ্য সীমা পার হওয়া দেশ ও উন্নয়নের জন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল তারা। যদিও দেশটি এরই মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যাত্রা শুরু করেছে এবং এ-সংক্রান্ত উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যও নির্ধারণ করেছে। তবে ২০৪০ সাল পর্যন্ত নিজেদের মোট বিদ্যুতের চাহিদার অর্ধেক মেটাবে তারা কয়লা থেকে।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন (পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের অন্যত্র আশ্রয় নেওয়া) কমাতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পরিকল্পনা থাকা দরকার। অভ্যন্তরীণভাবে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এরই মধ্যে এ ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।

গ্রামাঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন ও জাতীয় খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি নীতিগতভাবে (জলবায়ু নীতি) গ্রহণ করেছে পাকিস্তান। অন্যদিকে জলবায়ুজনিত বাস্তুচ্যুতির বিষয়টি মোকাবিলায় বাংলাদেশ জাতীয়ভাবে কৌশল প্রণয়ন করেছে।

এসব পদক্ষেপ ভবিষ্যতের জন্য দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোকে প্রস্তুত রাখছে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বাস্তুচ্যুতি হবে বড় এক বাস্তবতা।

আন্তসীমান্ত অভিবাসন প্রশ্নে সবচেয়ে ভালো সমাধান হলো এই অঞ্চলের দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করা। যখন বাস্তুচ্যুতি ঘটবে, তখন যাতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে তা মোকাবিলা করা যায়, সে জন্য দেশগুলোকে একসঙ্গে পরিকল্পনা করা দরকার।

জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতা দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নতুন নয় এবং আগামী কয়েক দশকেও বিষয়টির গুরুত্ব এতটুকু কমবে না। চরম আবহাওয়ায় টিকে থাকার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এ অঞ্চলের উচিত হবে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর ও অভিবাসনের উচ্চাভিলাষী নীতি গ্রহণ করা, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব ন্যূনতম রাখা যায়; পাশাপাশি তাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দারিদ্র্যের বেড়াজাল থেকে জনগণকে বের করে আনা যায়। এসব করতে ব্যর্থ হওয়া মানে লাখ লাখ মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়