মিনহাজুল আবেদীন: ইউরোপসহ বিশ্বজুড়ে চলমান ভয়াবহ দাবদাহ ২০৬০ সাল পর্যন্ত থাকতে পারে। এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জেনেভায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডব্লিউএমও প্রধান পিত্তেরি তালাস বলেন, যেসব দেশ বায়ুমণ্ডলে বেশি পরিমাণে ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন করছে, তাদের উচিত হবে বর্তমানের এই ভয়াবহ তাপপ্রবাহকে একটি আগাম সতর্কসংকেত হিসেবে নেয়া। নিউজ বাংলা
তিনি বলেন, মানবসৃষ্ট কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চলমান দাবদাহের এমন প্রবণতা আরো তীব্র ও নিয়মিত ব্যাপার হয়ে যেতে পারে।
তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, মাঝেমধ্যে এমন দাবদাহ আরো তীব্রতর হয়ে দেখা দিতে পারে।
কার্বন নির্গমনের জন্য বেশি দায়ী এশিয়ার কয়েকটি দেশ, যদি এখনই এই ক্ষতিকর গ্যাস নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে ২০৬০ সালে হয়তো মানবজাতি এর চেয়েও ভয়াবহতা দেখতে পাবে।
এরপর ডব্লিউএমও কর্মকর্তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় ইউরোপে ভয়াবহ দাবদাহের অবস্থা গুরুত্ব পায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে গোটা বিশ্ব। যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে শুরু করে ইরানের আহবাজেও এর প্রভাব পড়েছে।
রোববার যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলছে, এ বছর জুন ও জুলাই মাসে বৈশ্বিক তাপপ্রবাহে ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার অনেক স্থানেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়, এমনকি অনেক স্থানেই পূর্বের দীর্ঘস্থায়ী তাপমাত্রার রেকর্ডও ভেঙে যাচ্ছে।
বৈশ্বিক তাপমাত্রার অবস্থা ফুটিয়ে তুলতে পৃথিবীর পূর্বগোলার্ধের ১৩ জুলাইয়ের বায়ুর তাপমাত্রার ওপর ভিত্তি করে নাসা একটি মানচিত্র প্রকাশ করেছে।
মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে উত্তর আফ্রিকার পুরোটাজুড়েই তীব্র দাবদাহ চলছে। ইউরোপের দেশ স্পেনের শহর সেভিয়ায় তাপমাত্রা দেখাচ্ছে ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরই মধ্যে স্পেনসহ পশ্চিম ইউরোপের দেশ পর্তুগাল ও ফ্রান্সে দাবদাহে সৃষ্ট দাবানল ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। পার্সটুডে
ফ্রান্সের দাবানলে পুড়ে গেছে ৩৭ হাজার একরেরও বেশি এলাকা। পর্তুগালের লেইরিয়া শহরে ১৩ জুলাই তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছিরো। দেশটিতে ৭ হাজার ৪০০ একর জমি দাবানলে পুড়ে গেছে।
ইতালিতে রেকর্ড তাপে ৩ জুলাই ডলোমাইটসের মারমোলাডা হিমবাহের একটি অংশ ধসের ফলে ১১ পর্বতারোহীর মৃত্যু হয়।
এরই মধ্যে ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখলো যুক্তরাজ্য। দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিঙ্কশায়ারের কনিংসবিতে ৪০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালে দেশটিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেখানে এবার যুক্তরাজ্যের ৩৩টি স্থানে এই রেকর্ড ভেঙে গেছে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যুক্তরাজ্যে। দাবদাহ ও দাবানল আঘাত করেছে উত্তর আফ্রিকায়ও। দাবানলে সেখানকার শস্য ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।
১৩ জুলাই উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার রাজধানী তিউনিসে তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস স্পর্শ করেছে, যা ৪০ বছরে সর্বোচ্চ।
ইরানে জুনের শেষদিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস স্পর্শ করে। জুলাই মাসেও তাপমাত্রা বেশি।
চীনে এবারের গ্রীষ্মকালের দাবদাহে রাস্তার পিচ গলে গিয়েছিলো, ছাদের টাইলস পর্যন্ত ফেটে গিয়েছিলো। ১৩ জুলাই সাংহাইয়ের তাপমাত্রা ছিলো ৪০.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সঙ্গে উচ্চ আর্দ্রতা মিলে মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ভুয়া
এই ধরনের দাবদাহ মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। যুক্তরাজ্যে সাধারণ নাগরিকদের বিনা প্রয়োজনে ভ্রমণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। লন্ডনের অনেক স্থানেই গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ক্লাস বন্ধ অনেক স্কুলেই।
আপনার মতামত লিখুন :