শিরোনাম
◈ মুসলিম দেশগুলো গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবিতে একমত ◈ সৌদি রাষ্ট্রদূত ও মডেল মেঘনার পরিচয় আট মাসের, চার মাসে ‘বাগদান’ ◈ ‘মহাকাশ প্রযুক্তিতে সহযোগিতা বাংলাদেশ-তুরস্কের জন্য লাভজনক হবে’ ◈ ডিসেম্বরে ভোট ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি ◈ আজকের এই সমাবেশ কেবল প্রতিবাদ নয়,  একটি অঙ্গীকার, একটি শপথ ◈ আরও ৬ হাজার টন চাল এলো ভারত থেকে ◈ শোবার ঘরে সিসি ক্যামেরা: শার্শার সেই ফাতিমাতুজ্জোহরা মহিলা ক্বওমী মাদ্রাসা বন্ধের নির্দেশ ◈ অভিষেকের ব‌্যা‌টিং তাণ্ড‌বে হায়দরাবাদের সহজ জয় ◈ বিকল্প ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশিদের ভিসা দিতে সম্মত রোমানিয়া ◈ পহেলা বৈশাখে আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণে ডিএমপির নির্দেশনা

প্রকাশিত : ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ০১:৩১ দুপুর
আপডেট : ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ০২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘শতাব্দীসেরা’ জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যাবে বাংলাদেশের উপকূল: এমআইটির গবেষণা

ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদন: বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় প্রতি দশকে বা আরও বেশি ঘন ঘন এমন সব ভায়াবহ ঝোড়ো জোয়ার আঘাত হানবে, যা আগে কখনো হয়নি। গবেষকেরা এমন ঝোড়ো জোয়ারকে বলছেন ওয়াঞ্চ ‘ইন অ্যা সেঞ্চুরি’ বা শতাব্দীতে ঘটে এমন ঝোড়ো জোয়ার। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) নতুন গবেষণা বলছে, শতাব্দীতে একবার আঘাত হানা তীব্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঝড়ের জোয়ারে বাংলাদেশের উপকূল প্লাবিত হওয়ার ঘটনা ২১০০ সাল নাগাদ প্রতি ১০ বছর বা তার চেয়েও বেশি ঘন ঘন ঘটতে পারে।

জনবহুল বাংলাদেশ এমনিতেই বিশ্বের অন্যতম ঘূর্ণিঝড়প্রবণ দেশ, আর জলবায়ু সংকট ভয়াবহ ঝোড়ো জোয়ারের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমআইটির গবেষণা অনুসারে, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বর্তমান হারে অব্যাহত থাকলে এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ বাংলাদেশ ঝোড়ো জোয়ারের কারণে দশগুণ বেশি চরম বন্যার সম্মুখীন হতে পারে।

শুক্রবার ওয়ান আর্থ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, অব্যাহত বৈশ্বিক উষ্ণতা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ঝোড়ো জোয়ারের উচ্চতা বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩ মিটার থেকে বেড়ে কিছু অঞ্চলে ৫ মিটারেরও বেশি হতে পারে।

এমআইটি ডিপার্টমেন্ট অব আর্থ, অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেসের প্রধান গবেষণা বিজ্ঞানী সাই রাভেলা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে প্রায় সর্বত্রই ধ্বংসাত্মক ঝোড়ো জোয়ারের পুনরাবৃত্তি প্রায় দশগুণ বৃদ্ধি পেতে দেখছি। এটিকে উপেক্ষা করা যায় না।’

ঘূর্ণিঝড় যখন সমুদ্রের পানিকে স্থলভাগে ঠেলে দেয়, বিশেষ করে যখন তা ভরা জোয়ারের সঙ্গে মিলিত হয়, তখনই ঝোড়ো জোয়ারের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের মতো বদ্বীপ অঞ্চলে এই বন্যা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। কারণ, দেশটি এরই মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান তীব্র ঝড়ের হুমকিতে রয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশ মূলত নিম্ন-সমভূমি, জনবহুল বদ্বীপ, যেখানে ১৭ কোটির বেশি মানুষের বসবাস। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো নিয়মিত ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হয় এবং তীব্র মৌসুমি বর্ষাও অনুভূত হয়। নতুন গবেষণা মডেলিং দেখাচ্ছে যে, এ দুটি ঘটনার মধ্যকার ব্যবধান কমে আসছে, যার অর্থ বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমানভাবে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হতে পারে।

ড. রাভেলা বলেন, ‘যদি বর্ষার বৃষ্টি মাটি স্যাঁতসেঁতে করে দেয়, তারপর ঘূর্ণিঝড় আসে, তাহলে তা সমস্যাটিকে আরও খারাপ করে তোলে। চরম ঝড় এবং বর্ষার মাঝে মানুষ কোনো বিরতি পাবে না। দুটির মধ্যে অনেক যৌগিক ও ক্রমবর্ধমান প্রভাব রয়েছে।’

এমআইটির গবেষণা হাই-রেজল্যুশনের জলবায়ু এবং জল গতিবিদ্যা (ক্লাইমেট অ্যান্ড হাইড্রোডাইনামিক) মডেল ব্যবহার করে বিভিন্ন উষ্ণতার পরিস্থিতিতে কয়েক হাজার ঘূর্ণিঝড়ের সিমুলেশন করেছে এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, এমনকি সবচেয়ে চরম ঝোড়ো জোয়ার, যা আগে ‘ওয়াঞ্চ ইন অ্যা সেঞ্চুরি’ বা ১০০ বছরে একবার ঘটবে তাও নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠতে পারে।

গবেষণাটি সতর্ক করে বলেছে, ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুমের সময় পরিবর্তন হতে পারে, যা বাংলাদেশের বর্ষা মৌসুমের কাছাকাছি চলে আসতে পারে এবং একের পর এক বন্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, বাঁধ এবং আগাম সতর্কতা ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছে, কিন্তু এই প্রস্তুতিগুলো মূলত বর্তমানের ঝুঁকির ওপর ভিত্তি করে তৈরি।

ড. রাভেলা বলেন, ‘বাংলাদেশ জলবায়ু বিপদ ও ঝুঁকি মোকাবিলায় খুবই সক্রিয়। কিন্তু সমস্যা হলো, তারা যা কিছু করছে তা কমবেশি বর্তমান জলবায়ুতে যা দেখছে তার ওপর ভিত্তি করে। তাই আমরা মনে করি এখনই সময়, তাদের থামতে হবে এবং এই ঝড়গুলো থেকে নিজেদের রক্ষার উপায়গুলো পুনর্বিবেচনা করতে হবে।’

বাংলাদেশ রেকর্ডকৃত ইতিহাসের কয়েকটি ভয়াবহ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের শিকার হয়েছে। ১৯৭০ সালের ভোলা ঘূর্ণিঝড়ে ৩ থেকে ৫ লাখ মানুষ এবং ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ১ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল।

বারবার বন্যা ও ঝড়ের কারণে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ঢাকার মতো শহরাঞ্চলে অভ্যন্তরীণ অভিবাসন বেড়েছে, যা অবকাঠামো ও পরিষেবার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বিশ্বব্যাংকের অনুমান, ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু সংকটের কারণে ১ কোটি ৩০ লাখ পর্যন্ত বাংলাদেশি বাস্তুচ্যুত হতে পারে।

ড. রাভেলা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের এই গল্প বাংলাদেশে যেভাবে প্রকাশ পাচ্ছে, একইভাবে তা অন্য কোথাও ঘটবে। হয়তো সেখানে গল্পটি তাপপ্রবাহ বা খরা বৃদ্ধি বা দাবানল নিয়ে। বিপদ ভিন্ন। কিন্তু অন্তর্নিহিত বিপর্যয় গল্পে খুব বেশি পার্থক্য নেই।’ অনুবাদ : আজকের পত্রিকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়