হ্যাপি আক্তার: শ্রাবণ মাসের প্রথম দিন আজ। আষাঢ়ে কদম ফুলের মতো হাসি হেসে যে প্রকৃতি সাজতে শুরু করে নতুন সাজে, সেই প্রকৃতি সাজে তুলির শেষ আঁচড় পড়ে শ্রাবণে। বাদলা দিন আর থৈ থৈ পানিরাশির উত্তরাধিকার শ্রাবণেরই কোমল রূপ ‘শাওন’। বাঙালি মননে অবশ্য সবচেয়ে বেশি রোমান্টিকতা সুর বেজেছে এই শ্রাবণী বর্ষায়।
‘শ্রাবণ’ তারার নামে নামকরণ হয়েছে এ মাসের। বর্ষার অংশীদার হিসেবে এ মাসেও ঝড়ো বাতাস বয়ে যায়। শ্রাবণ বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে কদম, হিজল, কেয়া ও যুথিকা ফুল ফুটবে আপন মহিমায়।
শ্রাবণে বর্ষা ধারা থাকবে না, তা কেমন করে হয়। অথচ প্রকৃতির হেঁয়ালি আচরণে নেই সেই বৃষ্টির রিমঝিম। বর্ষা দূত কদম ফুলও যেনো মানুষ ও প্রকৃতির মতোই শ্রাবণের বর্ষণে সিক্ত হওয়ার অপেক্ষায়।
সবুজ পাতার ফাঁকে অজস্র কদম ফুল ফুটেছে গাজীপুর শহরের আনাচকানাচে। শহরের রাজবাড়ি মাঠ, পুকুর পাড়, শিববাড়ি, রওশন সড়কের পাশে ফুটে থাকা কদমের ফুলে ফুলে এখন চিরায়ত শ্রাবণের হাহাকার- কখন নামবে ঝুম বৃষ্টি।
রবীন্দ্রনাথ কদমকে বাঙালি মননে স্থায়ী করে দিয়েছেন বর্ষার ফুল হিসেবে। লিখেছেন, বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান...।
পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের যেমন তার কবিতায় লিখেছেন ‘আজিকের রোদ ঘুমায়ে পড়িয়া ঘোলাট-মেঘের আড়ে/কেয়া-বন পথে স্বপন বুনিছে ছল ছল জল-ধারে/কাহার ঝিয়ারী কদম্ব-শাখে নিঝ্ঝুম নিরালায়/ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দেখিছে অস্ফুট কলিকায়।
বর্ষায় আবেগ এবং অনুভূতির জোয়ারে ভাসেননি এমন কবি, সাহিত্যিক পাওয়া দুষ্কর। গ্রীষ্মের রুদ্র প্রকৃতির গ্লানি আর জরাকে ধুয়ে মুছে প্রশান্তি স্নিগ্ধতা আর সবুজে ভরে তোলে বর্ষা। আষাঢ় পেরিয়ে এসেছে শ্রাবণ। শুধু নেই কাঙ্ক্ষিত সে বৃষ্টির দেখা।
শ্রাবণে আমন ধান রোপণ এবং পাট জাগ দেয়া, আঁশ ছাড়ানো গ্রাম-বাংলার অতি পরিচিত দৃশ্য। খনার বচনে রয়েছে, ‘শ্রাবণের পুরো, ভাদ্রের বারো/ধান্য রোপণ যতো পারো’, ‘আষাঢ় কাড়ান নামকে/ শ্রাবণে কাড়ান ধানকে’, ‘পান পুঁড়লে শ্রাবণে/ খেয়ে না ফুরায় বারণে’, ‘বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ হলুদ রুইবে/ অন্য কাজ ফেলিয়া থুইবে? আষাঢ়-শ্রাবণে নিড়াই মাটি/ ভাদরে নিজাইয়া করবে খাঁটি’ ইত্যাদি। শ্রাবণে ওলের প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় বলেও বারোমাসীতে উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রাচীনকালের প্রবাদ বিশারদগণ গাছে ‘কলম’-এর ব্যবহার জানতেন। এ মাসের বৃষ্টিপাতের পরেই তারা গাছে ‘কলম’ নিতে বলেছেন, ‘শোনরে মালি বলি তোরো/ কলম কর শাওনের ধারে’। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকৃতিতে কত না প্রভাব স্বত্ত্বেও অনেকটা স্বাভাবিক আবহেই ‘রিম-ঝিম্-ঝ্মি বৃষ্টির’ স্মারক মাস আষাঢ় বিদায় নিয়েছে। সময়ের সিঁড়ি বেয়ে এক সময় পশ্চিম দিগন্তে অস্তরাগ ছড়িয়ে বিদায় নেবে শ্রাবণও। আসবে শারদীয়া ভাদ্র, ছড়াবে কাশফুলের কমনীয় সাদারবরণ আর অনিন্দ্য সুন্দরের পসরা।
আপনার মতামত লিখুন :