শাহীন খন্দকার: বাংলা মাসের পঞ্জিকার পাতায় এখন বর্ষাকাল চলছে। আকাশ জুড়ে থাকার কথা মেঘ আর রংধনুর খেলা। ঝুমবৃষ্টিতে আর বর্ষার পানিতে কৃষকের পাটের আশঁ আর পাটখড়ি নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা। হিমেল শিতল প্রকৃতি রাঙা কখনো মেঘ কখনো আলো-আঁধারির খেলা থাকার কথা। সেই বর্ষাকাল ঋতুচক্রের নিয়ম ভেঙে আকাশ ভরা শরতের মতো শুভ্র।
সূর্য্যমামা মধ্য গগণে ঢেলে দিচ্ছে তীব্র তাপদাহ প্রকৃতির বুকে। এমন তাপদাহ বর্ষাকাল বাঙালী ইতিপূর্বে দেখেনি। ঈদের আগে থেকেই চলছে বিরূপ আবহাওয়ায় জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বায়ু প্রবাহের অস্বাভাবিক পরিবর্তনই এর কারণ। দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে যখন বাতাস প্রবাহিত হয়, এ বাতাস বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্পযুক্ত বাতাস নিয়ে আসে যেটি মেঘালয়য়ে আঘাত করে আকাশে মেঘের সৃষ্টি করে এবং বৃষ্টি হয়।
কিন্তু গত ১২ দিন ধরে বাতাস যেহেতু পুর্বদিক থেকে প্রবাহিত হচ্ছে এর ফলে দেশের আকাশে কোনোভাবেই মেঘ সৃষ্টি হতে পারছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতিতে দাবদাহ, শৈত্যপ্রবাহ, খরা, অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি এমন নানা বৈরিতা এখন বাস্তবতা। তাই নগরগুলোতে জলাশয় সংরক্ষণ করতে হবে। খাল, বিল, নদী-নালা এগুলো গ্রিন করতে হবে। এতেই আমাদের পরিবেশ সুন্দর হবে। প্রকৃতি ফিরে পাবে তার রূপ।
তবে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ না কমানো গেলে সবার জন্যই অপেক্ষা করছে এক দুর্যোগপূর্ণ ভবিষ্যৎ। রাজধানীর আগারগাঁও আবহওয়া অফিসের আবহাওয়াবিধ ডক্টর মো. আব্দুল মান্নান বলেন, গত ৫ জুলাই থেকে বাংলাদেশের রাজশাহী থেকে তাপদাহ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার(১৪ জুলাই) পর্যন্ত ঢাকা সিলেট, রাজশাহী, রংপুরসহ মধ্যাঞ্চল কুমিল্লা ও নোওয়াখালীতে ছড়িয়ে পরে তাপদাহ।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার ৩৯দশমিক শুন্য ডিগ্রীসেলসিয়াস রের্কড। বৃহস্পতিবার রাতে সারা দেশে বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টিপাত হয়েছে। ড. মান্নান বলেন, বৃষ্টিপাত হওয়ায় বিরাজমান তাপদাহ পরিস্থিতি কিছুটা স্থিমিত হয়ে পড়েছে। কিন্তু অত্রোঞ্চলগুলিতে তাপদাহ অব্যাহত রয়েছে।
এই তাপদাহ পরিস্থিতি আরো দুই দিন অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে এবং আগামী দু’দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ১৮ জুলাইয়ের পর থেকে সারাদেশে তাপমাত্রা কমতে পারে। সেসময় বৃষ্টিপাতের প্রবণতাও বাড়তে পারে।
শুক্রবার (১৫ জুলাই) আবহাওয়াবিদ ড. মো. মান্নান বলেন, ঢাকা, টাঙ্গাইল, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনি ও চূয়াডাঙ্গা জেলাসহ রংপুর, রাজশাহী, সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারী ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বদলগাছীতে সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
গতকাল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ দমমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায়, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও বিচ্ছিন্নভাবে মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :