শিরোনাম
◈ কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার নদীতে বিলীন ◈ ভারতে থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, কোন আইনের বলে ভারতে থাকবেন শেখ হাসিনা? ◈ (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার ◈ স্থিতিশীল ডলারের দর, ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ◈ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘গ্যারান্টিতে’ নগদ টাকার সংকট কাটছে যে ৫ ব্যাংকের ◈ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চলছে, জাবিতে কোন কমিটিই নেই : ছাত্রদল ◈ গণপিটুনিতে মৃত্যু: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখপ্রকাশ, বৈষম্যবিরোধীদের নিন্দা, ফেসবুকে নানা সমালোচনা ◈ ভারতের গোলা যাচ্ছে ইউক্রেনে, ক্ষুব্ধ রাশিয়া ◈ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সুনামগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার গ্রেফতার ◈ মব জাস্টিস শুধু সহিংসতা ও অন্যায় সৃষ্টি করে: সমন্বয়ক হাসনাত

প্রকাশিত : ১৩ জুলাই, ২০২২, ০৬:৩৮ সকাল
আপডেট : ১৩ জুলাই, ২০২২, ০৮:২৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

থামছেই না বনের ভূমি দখল

কালের কণ্ঠ: বন ও পরিবেশ রক্ষায় পুরো বিশ্ব সোচ্চার। বাংলাদেশেও এ নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই। তবে যে বিভাগের ওপর বনভূমি রক্ষার মূল দায়িত্ব, সেই বন বিভাগের নানা সীমাবদ্ধতায় তা সুষ্ঠুভাবে করা যাচ্ছে না। বনভূমি রক্ষায় প্রয়োজনীয় যে লোকবল প্রয়োজন, তা নেই বন বিভাগের।

প্রতি দুই হাজার একর বনভূমি সংরক্ষণে যেখানে থাকার কথা ২০ জন ফরেস্ট গার্ড, সেখানে রয়েছেন মাত্র একজন। এই পরিস্থিতিতে কোনোভাবেই সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না বনভূমি।

বন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, দেশজুড়ে দুই লাখ ৫৭ হাজার ১৫৮ দশমিক ৮৪ একর বনভূমি দখল করেছেন দখলদাররা। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ২৮ হাজার ৯৬২ একর, মৌলভীবাজারে ১১ হাজার ৮২৬ একর, সুনামগঞ্জে ১৫ হাজার ৭১০ একর, ময়মনসিংহে ২৫ হাজার ১৫ একর, টাঙ্গাইলে ৩৯ হাজার ৪৪৩ একর, গাজীপুরে ১১ হাজার ৮৯৮ একর, চট্টগ্রামে ২৩ হাজার ৯৩২ একর, কক্সবাজারে ৫২ হাজার ৫৩৪ একর, রাঙামাটিতে ১৫ হাজার ৭১৪ একর এবং নোয়াখালীতে চার হাজার ২৩৯ একর বনভূমি দখল হয়েছে।

এসব বনভূমি দখল করেছেন এক লাখ ৬০ হাজার ৫৫৬ জন দখলদার। দখল করা এসব বনভূমিতে গড়ে তোলা হয়েছে শিল্প-কারখানা, রিসোর্ট, বসতবাড়ি, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কোথাও কোথাও চাষাবাদও করা হচ্ছে।

বন অধিদপ্তরসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, একদিকে পুরনো কর্মীরা অবসরে যাচ্ছেন, বিপরীতে নিয়োগ হচ্ছে না নতুন জনবল। বন অধিদপ্তরের সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক মরিয়ম আক্তার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই বিভাগটাই বৃদ্ধদের বিভাগে পরিণত হয়েছে। এক যুগের বেশি সময় নতুন নিয়োগ না হওয়ায় পুরনো ও দক্ষ কর্মীরা তাদের কাজের অভিজ্ঞতা কারো সঙ্গে বিনিময় করতে পারে না। গত ২৩ বছরে হাতে গোনা যে কিছুসংখ্যক জনবল নিয়োগ হয়েছে তারাও সাংগঠনিক সক্ষমতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাচ্ছে না। প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার ধারাবাহিকতার ঐতিহ্য একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। লম্বা সময় জনবল নিয়োগ না হওয়ায় এর ব্যত্যয় ঘটছে। ’

বন বিভাগের পুরনো জনবল ১০ হাজার হলেও বর্তমানে রয়েছে ছয় হাজার। দেশজুড়ে বিশাল বনভূমি রক্ষা এবং বন বিভাগের কাজে গতি আনতে সর্বশেষ ২০২১ সালের শুরুর দিকে নতুন করে আরো সাত হাজার জনবলের চাহিদার প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই প্রস্তাবে বলা হয়, টেরেস্ট্রিয়াল উইংয়ে জনবল রয়েছে চার হাজার ২০২ জন, নতুন করে নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে আরো ছয় হাজার ৩৪০ জনের। সামাজিক বন উইংয়ে জনবল রয়েছে এক হাজার ৮৮৩ জন, নতুন করে নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তিন  হাজার ৮৬৯ জনের। মানবসম্পদ উন্নয়ন উইংয়ে বর্তমানে ২১৪টি পদে জনবল রয়েছে, নতুন করে প্রস্তাব করা হয়েছে ৩৬৮ জনের। বন উন্নয়ন ও পরিকল্পনা উইংয়ে বর্তমানে ১৫৫টি পদে জনবল রয়েছে, নতুন করে প্রস্তাব করা হয়েছে ৪৩৯ জনের।

জনবল বিষয়ে প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘বন বিভাগে ২০০০ সালে মোট জনবল ছিল আট হাজার ৬৮১টি পদে। ২০২২ সালে এসে তা বেড়ে হয়েছে মাত্র ১০ হাজার ৪৯২টি। এর মধ্যে শূন্যপদ রয়েছে প্রায় তিন হাজার। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্টে নিয়োগসংক্রান্ত মামলা থাকায় একদিকে যেমন থেমে আছে প্রমোশন, একইভাবে থেমে আছে নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়াও। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আমাদের দেওয়া প্রস্তাবে কিছু সংশোধনী দিয়েছে। তা ঠিক করে দ্রুতই পাঠিয়ে দেওয়া হবে। মূলত সমস্যা হচ্ছে, আমাদের যে নিয়োগবিধি ছিল তা ২০১৪ সালে বাতিল করা হয়। এর ফলে ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর নিয়োগপ্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। এরপর নতুন করে নিয়োগবিধি হলেও করোনার কারণে গত দুই বছরও নতুন করে জনবল নিয়োগ দেওয়া যায়নি। ফলে জনবলসংকট বড় আকার ধারণ করে। ’

বন অধিদপ্তরের উপপ্রধান বন সংরক্ষক গোবিন্দ রায় বলেন, ‘জনপ্রশাসনে গত এক যুগে ১৭ হাজার জনবল নিয়োগের চাহিদা প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাব কখনো আলোর মুখ দেখেনি। বর্তমানে প্রতি দুই হাজার একর বনভূমি রক্ষায় নিয়োজিত আছেন মাত্র একজন ফরেস্ট গার্ড। বনভূমি এলাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে যেখানে এক হাজার ২০০ মানুষের বসবাস, সেখানে এত কম জনবল দিয়ে বনভূমি রক্ষা করা অসম্ভব। কেন্দ্রীয়ভাবে মাত্র সাতজন জনবল দিয়ে গঠিত ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট। এত কমসংখ্যক কর্মকর্তা দিয়ে ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট পরিচালনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ ছাড়া পুরো বনভূমি ডিজিটাইজেশন করা না গেলে ভূমি ব্যবস্থাপনা আরো দুরূহ হয়ে পড়বে। ’

বনভূমির সীমারেখা সুনির্দিষ্ট নয়

দেশের মূল ভূমির ১৫.৬০ শতাংশ বন বিভাগের। সিএস পর্চা অনুযায়ী যে পরিমাণ বনভূমির সীমারেখা ছিল, বর্তমান পর্চার সঙ্গে তার বিস্তর ফারাক। কী পরিমাণ ভূমিজুড়ে বন থাকার কথা ছিল, বর্তমানে কতখানি আছে, কী পরিমাণ দখল হয়েছে, কী পরিমাণ অবনভূমিতে পরিণত হয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য বন বিভাগের কাছে নেই। এ কারণে সীমানা সুনির্দিষ্টকরণে একটি কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

প্রথমে রাস্তা, পরে করছে দখল

দখলপ্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হয় মূলত অন্য রাস্তার সঙ্গে সংযোগ করতে স্থানীয় সরকার বিভাগ যখন বনের ভেতর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করে। এই রাস্তার সূত্র ধরেই দখলদাররা বনভূমি দখল করেন। রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প বিষয়ে বন বিভাগকে অবহিত করা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাওয়া যায় না। এতে বনের বিপুল ক্ষতি হচ্ছে। রাস্তা নির্মাণে বিকল্প না ভেবেই আঘাত করা হচ্ছে বনে।

বন্য প্রাণী রক্ষা নিয়ে শঙ্কা

দখলের কারণে চরমভাবে নষ্ট হচ্ছে বনের ইকোসিস্টেম। ফলে বনের জীববৈচিত্র হুমকির মুখে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন ধ্বংসের ফলে বনের হাতি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে পারছে না। তার চলাচলের পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ৪৪টি হাতি এ কারণে মারা পড়ে। হাতির মতো বনের অসংখ্য প্রাণী হুমকিতে পড়েছে।

বন অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান ইসতিয়াক উদ্দিন বলেন, ‘প্রতিপত্তিশালীরাই বনের জমি দখল করে। বনের জমির খতিয়ান পরিবর্তন করে সেখানে অনেকে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করছে। পরে কোর্টে মামলা করে স্টে অর্ডার নিয়ে সুবিধা নিচ্ছে। ইচ্ছা থাকলেও জনবলসংকটে বন কর্তৃপক্ষ জমি উদ্ধার করতে পারছে না। ’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়