শিরোনাম
◈ ‘ইজতেমার নিয়ন্ত্রণ’ নাকি ‘সাদ কান্দালভি’- তাবলীগ সংকটের কারণ আসলে কী ◈  আমরা কিংস পার্টি নই, আমরা কিংস মেকার:  হাসনাত আব্দুল্লাহ (ভিডিও) ◈ ভোলা-২ আসনের সাবেক এমপি মুকুল গ্রেপ্তার ◈ অনলাইনে আয়কর পরিশোধে ফি বেঁধে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক ◈ প্রায় অর্ধেক মানুষই জানে না তার ডায়াবেটিস ◈ তেজগাঁও থেকে বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করলো কাস্টমস ◈ আশা করি নতুন উপদেষ্টাদের কাজ দেখে বিচার করবেন বাংলাদেশের জনগণ : মাহফুজ আলম ◈ উদ্বোধনের অপেক্ষায় ৫২ জেলায় পানির গুণগতমান পরীক্ষাগার, মিলবে বিশুদ্ধ পানি ◈ যে কারণে পুরুষের চার বিয়ে করার কথা বললেন এই অভিনেত্রী হীরা সুমরো ◈ এখনো রাস্তায় আহতরা, উপদেষ্টাদের হাজির হওয়ার আলটিমেটাম

প্রকাশিত : ১২ নভেম্বর, ২০২৪, ০৪:০৪ দুপুর
আপডেট : ১৪ নভেম্বর, ২০২৪, ০৪:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

২০২৪ সাল হতে যাচ্ছে বিশ্বের উষ্ণতম বছর : জাতিসংঘের সতর্কবার্তা

জলবায়ু সম্মেলনে অনেক বড় নেতাই নেই, অঙ্গীকার বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়

মাছুম বিল্লাহ, বাকু (আজারবাইজান) থেকে : আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে শুরু হয়েছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন (কপ ২৯) চলছে। রাষ্ট্রসংঘের বার্ষিক এ সম্মেলন ‘কনফারেন্স অব পার্টিস’ বা কপ নামে পরিচিত। এতে যোগ দিয়েছেন বিশ্বনেতারা। বিশ্বের শিল্পোন্নত ২০ দেশের মধ্যে মাত্র কয়েকটি দেশের নেতারা সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। শিল্পোন্নত দেশগুলো বিশ্বব্যাপী ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমনের প্রায় ৮০ শতাংশের জন্য দায়ী। এ কারণে সোমবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অনেকটা জুড়ে ছিল প্রতিবাদ আর বিক্ষোভ। সম্মেলনে অংশ নিতে ইতিমধ্যে বিশ্বনেতারা বাকুতে জড়ো হয়েছেন। কিন্তু বিশ্বনেতাদের এই তালিকায় অনেক বড় নামই নেই। বড় নেতাদের অনুপস্থিতির পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের প্রভাব বাকুর জলবায়ু সম্মেলনে গভীরভাবে পড়েছে।

গত সোমবার এই সম্মেলন শুরু হয়। ২২ নভেম্বর পর্যন্ত সম্মেলন চলবে। সম্মেলনের প্রথম দুই দিনে বাকুতে ৭৫ জনের বেশি বিশ্বনেতার আসার কথা। কিন্তু জাতিসংঘের এই সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন না বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও দূষণকারী অর্থনীতির কিছু দেশের নেতা। জি-২০ জোটের সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ বাকুর জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন না।

বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৮০ শতাংশই এই জোটের দখলে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৭৫ শতাংশের সঙ্গে জড়িত জি-২০ জোটের দেশগুলো। আবার বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী যে গ্রিনহাউস গ্যাস, তার প্রায় ৮০ শতাংশই এই জোটভুক্ত দেশগুলো নির্গমন করে।

সোমবার জলবায়ু সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনে একটি বিষয়ে তৈরি হওয়া গভীর অনিশ্চয়তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর তা হলো, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী হবে। এ-সংক্রান্ত অনিশ্চয়তার মূলে রয়েছে সদ্য সমাপ্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের বিজয়। ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘ধাপ্পাবাজি’ বলে প্রত্যাখ্যান করে আসছেন।

বাকুর সম্মেলনে অবশ্য বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জলবায়ুবিষয়ক দূত অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের তিনি এই বলে আশ্বস্ত করেছেন যে ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবিলায় মার্কিন প্রচেষ্টাকে থামিয়ে দেবে না।

অন্যদিকে জাতিসংঘের জলবায়ুপ্রধান সাইমন স্টিয়েলও জলবায়ু বিষয়ে সংহতির আবেদন জানিয়েছেন। তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বৈশ্বিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বনেতারা প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী ১০০ বিলিয়ন ডলার দিচ্ছেন না। অথচ যুদ্ধের জন্য ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করছেন তারা। যুদ্ধ বন্ধ করলেই জলবায়ু মোকাবিলা করে সবুজ বিশ্ব গড়া সম্ভব। ২০২০ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর ২০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হলেও এ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক উৎস থেকে মাত্র ৭১০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে, যা প্যারিস সম্মেলনে প্রতিশ্রুতির অর্থের মাত্র ২ থেকে ৩ শতাংশ।

অর্থায়ন নিয়ে নানা শঙ্কা

এবারের আলোচনার মূল বিষয় অর্থায়ন। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির আওতায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২০৩০ সালের মধ্যে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিশ্বনেতারা। এ লক্ষ্যে কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি সামলাতে ২০২৫ সাল নাগাদ উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সহায়তা দিতে রাজি হয়েছিল বড় অর্থনীতির দেশগুলো। তবে এখন পর্যন্ত সেই সহায়তার পরিমাণ সন্তোষজনক নয়। আর উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় থাকা বিপুল পরিমাণ কার্বন নিঃসরণকারী চীন ও উপসাগরীয় দেশগুলো এ তহবিলে অর্থ দিচ্ছে না।

বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিস্থিতি যখন প্রতিবছর আরও তীব্র হচ্ছে, তখন কপ সম্মেলন সফল করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক জোয়েরি রগেলজ। তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর আমাদের পৃথিবী যে একটু একটু করে উষ্ণ হচ্ছে, তা থামাতে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়।’

জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশবিষয়ক ভানুয়াতুর বিশেষ দূত রালফ রেগেনভানু বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন একটি বিভক্ত সমস্যা, যা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া এমনিতেই সমাধান হবে না এবং আমরা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম দূষণকারীর আসন্ন প্রেসিডেন্টের কাছে বিষয়টি উপস্থাপন করব।’

সম্মেলনের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুখতার বাবায়েভ বলেন, ‘আমরা ধ্বংসের পথে আছি। সম্মেলনটি সবার জন্য নতুন পথের সূচনা করার অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত।’

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে জলবায়ু এনজিও অয়েল চেঞ্জ ইন্টারন্যাশনালের সহ-ব্যবস্থাপক অ্যালি রোজেনব্লুথ বলেন, জলবায়ু আন্দোলনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন ‘ভয়াবহ’ দুঃসংবাদ। ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে কয়েক ডজন পরিবেশগত বিধি প্রত্যাহার করেছিলেন। তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে নিজ দেশকে বের করে নিয়েছিলেন, যা তিনি আবার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ট্রাম্পের আসন্ন ভূমিকা দেশটির জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা এবং জলবায়ু অর্থায়নের প্রতিশ্রুতিতে বড় বাধা হতে পারে।

২০২৪ সাল হতে যাচ্ছে বিশ্বের উষ্ণতম বছর

২০২৪ সাল হতে যাচ্ছে বিশ্বের উষ্ণতম বছর, এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)। সংস্থাটি বলছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গড় তাপমাত্রা ১৯ শতকের শেষের দিকের তাপমাত্রার তুলনায় প্রায় ১ দশমিক পাঁচ-চার সেন্টিগ্রেড বেশি।

সোমবার উদ্বোধনী বক্তব্যে জাতিসংঘের জলবায়ু প্রধান সিমন স্টিল বলেন, এবার সম্মেলনে নতুন জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্যে বিশ্বনেতাদের একমত হতে হবে। একই সঙ্গে অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ দেশ কার্বন দ্রুত নিঃসরণ কমাতে না পারলে, প্রতিটি দেশকেই মূল্য চোকাতে হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়