শিরোনাম
◈ বদলে যাচ্ছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম ◈ প্রবাসী প্রেমিকের সঙ্গে ভিডিও কলে একসঙ্গে নববধূর ‘আত্মহত্যা’, চিরকুটে জানিয়ে গেছে শেষ ইচ্ছে ◈ এক মাসে পাঁচ জাহাজে আগুন, নাশকতা বলছেন কেউ কেউ ◈ ফের প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিল ইরান ◈ জানা গেল ২০২৫ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার সময় ◈ ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজে মিললো প্রায় ৭ কেজি ওজনের ৬০টি স্বর্ণের বার জব্দ ◈ ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রেমিট্যান্স এলো ২৬ দিনে ◈ একদিনে ৫ বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ভিসি, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কে হলেন উপাচার্য ◈ রাজধানীতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ৫ কর্মী গ্রেপ্তার ◈ সাংবাদিকদের হয়রানিমূলক মামলার যেসব তথ্য চেয়েছে সরকার

প্রকাশিত : ২৭ অক্টোবর, ২০২৪, ০৮:০২ রাত
আপডেট : ২৮ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:১৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে, কিন্তু বিকল্প কী?

মহসিন কবির : দেশে পলিথিনের ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে। পলিথিন দেশের মরাত্মক ক্ষতি করে। যেমন পলিথিন মাটিতে মিশে যেতে সময় লাগে ২০০ থেকে ৪০০ বছর। মাটিতে বা জলাশয়ে থাকা ব্যাগগুলো পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতির কারণ হয়েছে, তা নিয়ে পরিবেশবিদরা বহু বছর ধরেই বলে আসছেন। 

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বেড়েছে। দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে পলিথিন। এখন রাতারাতি পলিথিন বন্ধ হলে সমস্যায় পড়বেন নাগরিকরা। 

এছাড়া কেউ কেউ বলছেন বিকল্প ব্যবস্থা না করে পলিথিন বন্ধ করা উচিৎ হবে না। কেউ বলেছেন এখনই বন্ধ করা উচিৎ। সোশ্যাল মিডিয়ার পলিথিন বন্ধ নানা জন নানা মন্তব্য করেছেন। 

আগামী ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন জাতীয় সব ধরনের ব্যাগ নিষিদ্ধ এবং কোনো ক্রেতাকে এ ব্যাগ দেওয়া যাবে না। এছাড়া পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ কার্যক্রমে কাঁচা বাজার ও পলিথিন উৎপাদন কারখানায় অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। পলিথিন ব্যাগ বন্ধে আগামী ১ নভেম্বর থেকে কঠোর মনিটরিং করা হবে বলে জানানো হয়েছে। 

এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছিলেন, আগামী ১ অক্টোবর থেকে সুপারশপে কোনো ধরনের পলিথিন বা পলিপ্রপিলিনের ব্যাগ রাখা যাবে না। এমনকি ক্রেতাদের এ ধরনের ব্যাগ দেয়াও যাবে না।

তিনি আরও জানিয়েছিলেন, পলিথিনের বিকল্প হিসেবে প্রতিটি সুপারশপ বা শপের সামনে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ রাখা হবে ক্রেতাদের জন্য। এ উদ্দেশে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ১ অক্টোবরের শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধের ব্যাপারে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালানোর কথাও জানিয়েছিলেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। একইসঙ্গে পত্রিকায় এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।

এসময় উপদেষ্টা পলিথিনের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে বলেন, ‘প্লাস্টিক পলিথিনের অপ্রতিরোধ্য ব্যবহার পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি মাটির উর্বরতা কমিয়ে দিচ্ছে, নদী-নালা ও জলাশয় দূষিত করছে এবং জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এসব কারণে প্লাস্টিক পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে সব পর্যায়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।’

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর বিধান অনুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০২ সালের ১ মার্চ বিএনপি সরকার দেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তারপর পেরিয়েছে ২২ বছর। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, এরপর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ শাসন করেছে। তবুও আইন থাকা সত্ত্বেও দেশে পলিথিন ব্যবহার রোধ করা সম্ভব হয়নি। পলিথিন ব্যবহার কমার বিপরীতে সুপারশপ থেকে সবখানেই বেড়েছে পলিথিনের ব্যবহার।

নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার বন্ধে পরিচালিত অভিযানে গত ৫ বছরে ৬ কোটি টাকার বেশি জরিমানা করা হয়েছে। এই সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ১৭০ জনকে; জব্দ করা হয়েছে দুই হাজার টনের বেশি মালামাল। এ বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি বিগত সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী জাতীয় সংসদে এসব কথা জানিয়েছেন।

শহিদুল নামে একজন ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, ১ নভেম্বর থেকে সব ধরনের পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ। বিকল্প পাটের সোনালী ব্যাগ। পাট শিল্প এগিয়ে যাক। 

আরমান হাসান নামে একজন ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, আজ থেকে সারা দেশে সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ । ১ নভেম্বর থেকে কাঁচা বাজারে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২২ বছরেও পলিথিনের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর না হওয়ায় কঠোর অবস্থানে অন্তর্বর্তী সরকার।

মো. ইব্রাহিম  একজন ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, বর্তমানে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ হয়েছে কিন্তু যারা গাড়িতে বসে বমি করেন তারা অবশ্যই সাবধানে থাকবেন। 

শেখ আবদুল্লাহ ইয়াসিন একজন ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, বর্তমানে পলিথিন আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। সে বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করে সোনালি পাটের ব্যাগ ব্যবহারে। কিন্তু তা কতটুকু সম্ভব? 

মিজান নামে একজন ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, জাতির কাছে প্রশ্ন ?
পহেলা নভেম্বর  থেকে যদি পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে বাসে  বমি করার জন্য আপুদের কি দেওয়া হবে। 

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদারের গণমাধ্যমকে বলেছেন, ২০০২ সালে যখন পলিথিন নিষিদ্ধ করা হয়, তখন বেশ সফলতা এসেছিল। প্রথম মাসছয়েক বাজার থেকে প্লাস্টিক পণ্য উধাও হয়ে গিয়েছিল। বাজার তদারকি ও আইনের প্রয়োগ ছিল। একই সময়ে তখন অল্পকিছু বিকল্পও বাজারে ছিল। এটার উপযুক্ত বিকল্প কাপড়ের, পাটের, কাগজের কিংবা পাতার বা তন্তুর তৈরি বিকল্প ব্যাগ আমরা মানুষের হাতে দিতে পারিনি। বাজার মনিটরিং জোরদার করলে সাময়িক সময়ের জন্য পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ হতে পারে, কিন্তু যদি বাজারে উপযুক্ত বিকল্প দিতে পারি, তাহলে এটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করা যাবে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করার বিষয়টি নির্ভর করে সরকারের কঠোরতার ওপর। সরকার যদি বিএনপির প্রয়াত পরিবেশমন্ত্রী শাজাহান সিরাজের মতো পলিথিন বন্ধে কঠোর হয় তাহলেই পলিথিন বন্ধ সম্ভব। অন্যথায় এটি প্রায় অসম্ভব। কারণ হিসেবে অনেকেই মনে করছেন, মানুষের হাতে বিকল্প সস্তা কোনও উপকরণ আপাতত নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়