শিরোনাম
◈ ইসরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ কমান্ডার নিহত, পাল্টা আক্রমণ ◈ নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করেই ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট করেছি: সংসদে প্রধানমন্ত্রী  ◈ পাট ও বৈচিত্র্য পূর্ণ পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে ভর্তুকি দেওয়া হবে: বস্ত্রমন্ত্রী ◈ সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যায় সাড়ে ৩ লাখ ডলার সহায়তা দিলো যুক্তরাষ্ট্র ◈ কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করেছে বিএনপি: ওবায়দুল কাদের ◈ নতুন শিক্ষাক্রমে প্রশ্নফাঁসের সুযোগ নেই: শিক্ষামন্ত্রী ◈ অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে শাহবাগ ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা ◈ ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশে পরীক্ষামূলকভাবে হাইড্রোজেন জ্বালানী ব্যবহার সম্ভব হবে: প্রধানমন্ত্রী  ◈ আবারও আবার বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার ◈ প্রত্যয় কর্মসূচি: অর্থমন্ত্রীকে আলোচনায় বসার চ্যালেঞ্জ ঢাবি শিক্ষক সমিতির

প্রকাশিত : ২৪ জুন, ২০২৪, ০৬:২৫ বিকাল
আপডেট : ২৪ জুন, ২০২৪, ০৬:২৫ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

রাজশাহীতে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর, দুশ্চিন্তায় অধিবাসীরা

ইফতেখার আলম, রাজশাহী: [২] তীব্র তাপপ্রবাহ, খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে রাজশাহীর খাল-বিল, মাঠঘাট-জলাশয় শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে পরিবেশ, কৃষকের ক্ষেতসহ সর্বত্র। পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে যাওয়ায় অগভীর-গভীর অনেক নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে দেখা দিয়েছে খাওয়ার পানির সংকট, সেচের জন্যও ভোগান্তিতে পড়েছেন চাষিরা। ফলে পানির জন্য বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ নামাজ আদায় করা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে ব্যাঙের বিয়েও। তবুও দেখা নেই বৃষ্টির, এমনকি তাপপ্রবাহের পারদ ক্রমেই বেড়ে যাওয়ায় দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের জনজীবন। পাশাপাশি আম, লিচু, বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ফলন বিপর্যয় হয়েছে। 

[৩] জানা যায়, খরা মৌসুমে পানি সংকটের আলোচনায় এত দিন উত্তরাঞ্চলে শুধু রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত তানোর উপজেলার নাম শোনা যেত। তবে গত বছর থেকে রাজশাহীর প্রায় সব উপজেলাতেই ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে। এক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বরেন্দ্র অঞ্চলে কম বৃষ্টিপাত ও তিনটি মৌসুমের পুরো চাষাবাদে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহারকে দায়ি করা হচ্ছে।

[৪] গবেষকরা বলছেন, বৃষ্টির অভাবে বর্ষা মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিক না হওয়া ও নির্বিচারে পানি তোলায় এ অঞ্চলে তাপপ্রবাহের সময়সীমা বেড়েছে। এতে কৃষিকাজ ও খাওয়ার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তারা আরও বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে সবুজ প্রকৃতি ও জলাধার হারিয়ে যাচ্ছে। এদিকে, বৃষ্টিপাতও কমে এসেছে। যেটুকু বৃষ্টি হচ্ছে, সেটুকু পানিও কোনো কাজে লাগছে না। ফলে প্রতিবছর রাজশাহী অঞ্চলে ৪ ফিট করে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে তাপমাত্রা।

[৫] সরেজমিনে দেখা যায়, খরায় বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহীর সর্বত্র পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি দেখা দিয়েছে তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নে। পানি সংকটের কারণে এখানকার বাসিন্দারা প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে পানি সংগ্রহ করছেন তাদের গৃহস্থালি কাজ ও খাওয়ার জন্য। একই চিত্র বাঘা উপজেলার কয়েকটি গ্রামেও। টিউবওয়েল ও ডিপ টিউবওয়েলেও উঠছে না পানি। এসব গ্রামের মানুষকেও পানি সংগ্রহের জন্য ছুটতে হচ্ছে দূর-দূরান্তে।

[৬] এদিকে, পানির অভাবে ও তীব্র তাপপ্রবাহে রাজশাহী অঞ্চলে কৃষিজমি ফেটে চৌচির হয় গেছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় সেচ দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। তাপপ্রবাহে ধানের জমিতে সেচের খরচ দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানান তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের কৃষক লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, রাতে জমিতে সেচ দিলে দুপুরের পর তা শুকিয়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যা হতে হতে ধানের ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। এখন ধান রক্ষাই কঠিন হয়ে পড়েছে। সেচ ছাড়া বোরো ফসল বাঁচানো কোনোভাবে সম্ভব নয়।

[৭] তানোরের মাহালিপাড়ার বাসিন্দা মর্জিনা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে পানি পাওয়া যায় না। পাশে যাদের ডিপ (ডিপ টিউবওয়েল) আছে, ট্যাংক আছে তাদের কাছে থেকে খাবার পানি নিয়ে আসছি। প্রতিদিন সময় করে ৪-৫ বার পানি আনতে হচ্ছে।’ বাঘা উপজেলার চক রাজাপুর এলাকার বাসিন্দা মো. মোস্তাকিম। তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিনই খাবার পানির জন্য অন্য এলাকায় ছুটতে হচ্ছে। আসলে পানির স্তর আনেক নিচে নেমে গেছে। ফলে আমাদের এখানে পানি উঠছে না। তাই বাধ্য হয়েই পাশের এলাকা থেকেই পানি আনতে হচ্ছে।’

[৮] পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) তথ্য বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কম বৃষ্টিপাত, দীর্ঘস্থায়ী খরা ও ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর ক্রমশ নিচে নামছে। গত গ্রীষ্মে রাজশাহীর তানোর এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমেছে ১১৩ ফুট পর্যন্ত। ভূগর্ভস্থ পানির পুনর্ভরণ (স্বাভাবিক) না হওয়ায় গড়ে এ অঞ্চলে চার ফুট করে নেমেছে পানির স্তর। সেইসঙ্গে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে তাপমাত্রা।

[৯] যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল কাফির রাজশাহী জেলা ও মহানগর নিয়ে একাধিক গবেষণা রয়েছেন। বিভিন্ন সাময়িকীতেও তা প্রকাশিত হয়েছে। এই পরিবেশ গবেষক বলেন, ‘রাজশাহী জেলায় ২০০০ সালে ১৭২ বর্গকিলোমিটর জায়গাজুড়ে নগরায়ণ ঘটেছিল। ২০২০ সালে তা ৩৮৭ বর্গকিলোমিটার ছাড়িয়েছে। ২০০০ সালে ১ হাজার ২২৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে সবুজায়ন ছিল ২০২০ সালে, যা কমে নেমে এসেছে ৯২৬ বর্গকিলোমিটারে। ২০০০ সালে ২৯৮ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিভিন্ন জলাধার ছিল। যা কমে এখন ১৮০ বর্গকিলোমিটারে নেমে এসেছে। ২০০০ সালে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রকৃতি নিজেই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সেদিন আর দূরে নয়, যেদিন ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃতির আমাদের দেওয়ার কিছুই থাকবে না।’

[১০] রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, অনাবৃষ্টি, তাপপ্রবাহ, প্রচণ্ড খরায় রাজশাহী অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে দ্বিগুণ হারে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২৫-৪০ বছরের মধ্যে এ অঞ্চলে মাটির নিচে পানি থাকবে না।

[১১] সমস্যা সমাধানে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে বৃষ্টির পানির অপচয় না করে এই পানিকে কার্যকরভাবে মাটির নিচে পৌঁছে দিতে হবে। আর নদীনালার পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। সেচে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য নদীনালা, খালবিল খনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে। এছাড়া, অধিক সেচনির্ভর বোরোর পরিবর্তে কম সেচের ফসল আবাদ করতে হবে। বরেন্দ্র এলাকায় প্রচুর বৃক্ষরোপণ করতে হবে, তাহলে বার্ষিক বৃষ্টিপাত বাড়বে। বৃষ্টিপাত বাড়লে পানির স্তর স্বাভাবিক থাকবে। সম্পাদনা: এ আর শাকিল

প্রতিনিধি/এআরএস

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়