শিরোনাম

প্রকাশিত : ০২ জুন, ২০২৪, ০৬:০২ বিকাল
আপডেট : ০২ জুন, ২০২৪, ০৬:০২ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জাবিতে ঈদের ছুটিতে ক্যাম্পাসে গাছ কাটার হিড়িক

আশরাফুল প্রধান, জাবি: [২] গত ৩০ মে থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চলছে ঈদের ছুটি ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশ। বন্ধ ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে আন্দোলনের মুখে বন্ধ থাকা ভবনগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। এতে কাটা পড়েছে কয়েকশত গাছ।

[৩] রোববার (২ জুন) সকাল আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ভবন ও কলা ও মানবিকী অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জন্য কেটে সাইট ঘেরাওয়ের মাধ্যমে ভবন নির্মাণের সূচনা করে কর্তৃপক্ষ। এর পর একে একে এই জায়গা দুইটিতে আরও প্রায় দুই শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়। 

[৪] সরেজমিনে দেখা যায়, চারুকলা অনুষদের ভবন নির্মাণের জন্য সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হলের এক্সটেনশন অংশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় চারুকলা বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের। তাদের সহায়তায় ও প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে অন্দোলনের মুখে বন্ধ থাকা চারুকলা অনুষদের ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়।

[৫] অপরদিকে শিক্ষকরা সর্বসম্মতিক্রমে কলা অনুষদের পাশেই ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলেও তাদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের পাশে ভবন নির্মাণের জন্য প্রায় দুই শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। 

[৬] দুটি জায়গায় কেটে ফেলা গাছগুলোর ঠিক পাশেই অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের ’মেইন বার্ডস’ খ্যাত প্রায় সাড়ে সাত একর আয়তন বিশিষ্ট লেকের। লেকটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম পাখি আসা শুরু করে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণীর আবাসস্থল হওয়ায় জীববৈচিত্র্যের জন্য সংবেদনশীল জায়গা হিসেবে পরিচিত এটি। পরিবেশবিদ ও পরিকল্পনাবিদদের মতে জীববৈচিত্র্যের জন্য সংবেদনশীল জায়গায় ভবন নির্মাণ করার জন্য ইআইএ বা ইনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট (পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন) করা প্রয়োজন। কিন্তু এসব করা হয় নি এ ভবনগুলো নির্মাণের ক্ষেত্রে।

[৭] নির্বিচারে গাছ কেটে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভবন প্রয়োজন কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে ভবন নির্মাণ চাই না। আমরা উন্নয়নের বিপক্ষে ন‌ই কিন্তু আমরা চাই উন্নয়ন হোক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের মাধ্যমে।

[৮] মানববন্ধনে শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন, ‘ছুটি হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছ কাটার সংস্কৃতি বহু পুরোনো। এবারেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। শিক্ষার্থীরা হলে নেই এই সুযোগে গাছ কাটার উৎসবে মেতেছে তারা। আজকে গাছ কাটার সময় চারুকলা বিভাগ নিজেদের বিভাগের শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। ভবন নির্মাণে আমাদের আপত্তি নেই, আমাদের একটাই দাবি মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ করা হোক।’

[৯] বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক খো. লুৎফল এলাহী বলেন, ‘এভাবে ছুটির মধ্যে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির সুযোগে ভবন নির্মাণ করা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু। কলা ও মানবিক অনুষদে আমাদের চাওয়া ছিল ভবনটি বর্তমান ভবন সংলগ্ন স্থানে করার। এতে ভবন কিছুটা ছোট হলেও পরিবেশ ও প্রাণ প্রকৃতির তেমন ক্ষতি হতো না। কিন্তু তারা সেদিকে কর্ণপাত না করে লেকের পাশে যে স্থান নির্ধারণ করেছে তাতে তৃতীয় প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের পথকে উন্মোচন করলো।’

[১০] এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম এম ময়েজ উদ্দিন বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের নির্ধারিত জায়গাতেই ভবন নির্মাণ করছি। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো কিছুই আমরা করছি না। এছাড়া যে গাছগুলো কাটা হয়েছে সেই গাছগুলো আমরা নিজেরাই রোপন করে পরিচর্যা করব। সকল অংশীজনদের সুপারিশকে গ্রহণ করে এবং তাদের নিয়ে আমরা একটা টিম তৈরি করব যাতে তারা আমাদের অগ্রগতিতে লক্ষ্য রাখতে পারেন। সম্পাদনা: এ আর শাকিল

প্রতিনিধি/এআরএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়