অপূর্ব চৌধুরী: [২] কক্সবাজার সৈকতের পাড় জুড়ে পড়ে থাকা প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন, ফলের খোসা, জুতা এবং সিগারেটের প্যাকেট সহ বিভিন্ন বর্জ্যে হুমকির মুখে পড়ছে সমুদ্রের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। পর্যটকদের সচেতন করার জন্য তেমন কোন উদ্যোগ না থাকায় তারা তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র অব্যাহতভাবে সৈকত পাড়ে ফেলছেন যত্রতত্র।
[৩] সম্প্রতি কক্সবাজারের লাবণী, ইনানী, কলাতলী ও পাটুয়ার টেক সহ কয়েকটি পয়েন্ট সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ভ্রাম্যমাণ হকারদের কাছ থেকে ফল, পানির বোতল, জুস ও আইসক্রিম খেয়ে সেগুলোর মোড়ক যেখানে সেখানে ফেলছেন পর্যটকরা। অনেকে আবার ধূমপান করে সিগারেট ফেলছেন পানিতে। ঢেউয়ের সাথে পানিতে ভেসে যাচ্ছে অধিকাংশ বর্জ্য।
[৪] চা খেয়েও প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম কাপ পাড়ে ফেলতে দেখা যায় অনেককে। ছেঁড়া স্যান্ডেল, প্লাস্টিকের দড়ি এবং কাঠের টুকরো প্রায় সবগুলো পয়েন্টেই লক্ষ্য করা যায়। তবে এসময় কোন পরিচ্ছনতাকর্মী কিংবা প্রশাসনের কাউকে দেখা যায়নি প্রতিকারে।
[৫] সৈকতের পাড়ে প্রতিটা বেঞ্চের পেছনে বালতি রাখা আছে ময়লা-আবর্জনা ফেলতে। কিন্তু সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত না থাকায় অধিকাংশ পর্যটকরাই সে বিষয়ে জানেন না। পয়েন্টগুলোতে নেই পর্যাপ্ত ডাস্টবিনও।
[৬] বিশেষজ্ঞদের মতে, সমুদ্র সৈকতে এসব বর্জ্যের ফলে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এসব বর্জ্য মানুষের জন্যও স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ।
[৭] সৈকতের পাড় থেকে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য বার্জার কোম্পানি নিজস্ব উদ্যোগে ২৫জন মহিলা কর্মী নিযুক্ত করেছে বলে জানা গেছে। যারা সকালে ও বিকালে সৈকত পাড় থেকে ময়লা পরিষ্কার করেন। এর পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও মাঝেমধ্যে পর্যটকদের সচেতন করার প্রচেষ্টা চালানো হয়। তবে এসব উদ্যোগ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
[৮] সমুদ্র সৈকতের অদূরে নোঙ্গর করা লাইটার জাহাজগুলো থেকেও প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে নানা প্রকার বর্জ্য যা পর্যায় ক্রমে ভেসে ভেসে তীরে এসে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটাচ্ছে। এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় আনতে হবে এখনই।
[৯] গাজীপুর থেকে কক্সবাজার ঘুরতে আসা মো. আহসান উল্লাহ বলেন, আমরা প্রতিবছরই এখানে আসি। ময়লা-আবর্জনা না ফেলার বিষয়ে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন দেখিনি এখানে। সবাই জানেনা কোথায় ডাস্টবিন আছে। যেখানে সেখানেই ময়লা-আবর্জনা দেখা যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে এবং সবাইকে সচেতন হতে হবে।
[১০] কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা মো. রিয়াদ বলেন, পর্যটকদের সচেতন করা দরকার। কোথায় ডাস্টবিন আছে কিংবা কোথায় ময়লা ফেলতে হবে সে বিষয়ে প্রচারণা চালাতে হবে। ডিজিটাল বোর্ড বা ব্যানারে পর্যটকদের জন্য সচেতনতামূলক তথ্য প্রচার করা যেতে পারে। পাশাপাশি সবাইকে সচেতন হতে হবে।
[১১] ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা ডিউটি করার সময়ে পর্যটকদের সচেতন করি। হকারদের নির্দেশনা দেওয়া আছে কোন পলিথিন যেন তারা ব্যবহার না করেন সমুদ্র পাড়ে। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে।
[১২] নাম প্রকাশ না করার শর্তে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের এক সহকারী পরিচালক বলেন, সমুদ্র পাড়ের ময়লা-আবর্জনার ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। তবে ময়লা-আবর্জনা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পৌরসভার। তারা সমন্বয় করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছেন। সম্পাদনা: কামরুজ্জামান
আপনার মতামত লিখুন :