শিরোনাম
◈ কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার নদীতে বিলীন ◈ ভারতে থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, কোন আইনের বলে ভারতে থাকবেন শেখ হাসিনা? ◈ (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার ◈ স্থিতিশীল ডলারের দর, ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ◈ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘গ্যারান্টিতে’ নগদ টাকার সংকট কাটছে যে ৫ ব্যাংকের ◈ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চলছে, জাবিতে কোন কমিটিই নেই : ছাত্রদল ◈ গণপিটুনিতে মৃত্যু: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখপ্রকাশ, বৈষম্যবিরোধীদের নিন্দা, ফেসবুকে নানা সমালোচনা ◈ ভারতের গোলা যাচ্ছে ইউক্রেনে, ক্ষুব্ধ রাশিয়া ◈ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সুনামগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার গ্রেফতার ◈ মব জাস্টিস শুধু সহিংসতা ও অন্যায় সৃষ্টি করে: সমন্বয়ক হাসনাত

প্রকাশিত : ৩০ এপ্রিল, ২০২২, ১০:৪৭ দুপুর
আপডেট : ২৯ আগস্ট, ২০২২, ০৬:০৯ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কবীর সুমনের মতো একজন মহান শিল্পীর সঙ্গে কাজ  করতে পারা স্বপ্নের মতো: আসিফ আকবর

ভূঁইয়া আশিক রহমান: [২] আমাদের নতুন সময়: আপনার একটা আফসোস বা অভিযোগ আছে, দেশের অন্যান্য সকল সংগঠন নিজেদের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকলেও সংগীতশিল্পীরা এক নন। সেই জায়গাটা কি পরিবর্তন হয়েছে?

আসিফ আকবর: না, এখনো সেই পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। পরিবর্তন হবেও না। কারণ একটা নাটকে ২০০ জন লোক লাগে। একটি সিনেমায় ৪০০ লোক লাগে। কিন্তু গানে এতো লোক লাগে না। একজন গায়কই এখানে মুখ্য। একজন হিট গায়কের নিজের ভূমিকাই যথেষ্ট। একজন শিল্পী থাকেন কেন্দ্রবিন্দুতে। একটা পর্যায়ে ক্যাসেটের বাজারে উত্থান-পতন থাকে। ফ্লপ-হিটের ব্যাপারও থাকে। কার গান বা এলবাম আগে যাবে, পত্রিকায় কার ছবি আগে যাবে, কার ছবি পরে যাবেÑএ ধরনের প্রবণতা আমাদের মধ্যে আছে। যে কারণে সংগীতশিল্পীদের মধ্যে ঐক্য সম্ভব নয়। ঐক্য হবেও না কখনো!

[৩] তরুণ গায়কদের অনেকেই ভালো করছেন। কিন্তু আরেকজন আসিফ আকবর বের হচ্ছেন না। কিন্তু কেন? কী মনে হয় আপনারÑ ট্যালেন্টের অভাব, নাকি তরুণদের পরিশ্রমে অনীহা, অথবা ইন্ডাস্ট্রি সাপোর্ট দিচ্ছে না?

আসিফ আকবর: দেশে সংগীতে ট্যালেন্টের অভাব নেই। তবে যারা ট্যালেন্ট তাদের সিলেকশনে সমস্যা আছে। হয়তো তারা বুঝতে পারেন না মানুষ কী ধরনের গান শুনে অভ্যস্ত অথবা তাকে কীভাবে প্রেজেন্ট করা উচিত। কারও কারও গানের দখলও থাকে না। যেমন ক্লোজআপের একজন স্টার নিজেই সুর করে গাইতে শুরু করেছেন। আরেকজন আনকোরা লোক লেখা শুরু করেছেন। আনকোরা একজনের গানের কথা ও সুরের ভিত্তিটা ততো মজবুত থাকে না। ইনভেস্ট করে সিনিয়রদের কাছে গেলে একটা ভালো গান পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু তা যাবে না। নিজেরাই গান বানিয়ে ফেলেন। এর ফলে তরুণ শিল্পীদের গ্রহণযোগত্যটা তৈরি হয়নি। এটা একটা আফসোসের ব্যাপার। তবে তাদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ ছিলো অডিও ক্যাসেটে। যেখানে বারোটা গান থাকবে। অডিও ক্যাসেটের যুগ থেকে তারা সিঙ্গেলসে চলে এসেছে। সিঙ্গেলস মানে হচ্ছে যদি হিট হন, তাহলে কাজ পাবেন, তা না হলে বাদ। ফলে তরুণ শিল্পীরা এখন ওয়ানওয়ে টিকিটে পড়ে গেছেন। যে কারণে তারা সেভাবে নিজেদের প্রকাশ করতে পারছেন না। আর যারা আসছেন তারা সাসটেইন করতে পারছেন না। 

[৪] ২০২০ সাল থেকে উপমহাদেশের কিংবদন্তি সুরকার ও সংগীতশিল্পী কবীর সুমনের লেখা গান ও সুরে গাইছেন। কবীর সুমনের সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগছে? কোনো সমস্যা হয় কি? 

আসিফ আকবর: উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী কবীর সুমন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। উনার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কবীর সুমনের মতো একজন মহান শিল্পীর সঙ্গে কাজ করতে পারা একটা স্বপ্নের মতো ব্যাপার। মীর আরিফ বিল্লাহ নামে একজন ভদ্রলোক আমাকে একদিন ফোন করলেন। তার সঙ্গে আমার অনেকক্ষণ কথা হয়। আরিফ সাহেবের কথাবার্তা আমার পছন্দ হয়। সাতক্ষীরার ছেলে। খুব স্মার্ট কথা বলেন। তিনি বাংলাদেশে কবীর সুমনের প্রমোটর। মীর আরিফ বিল্লাহর কাছে মনে হয়েছে, আমার ভয়েসটা যদি কবীর সুমনের কাছে পড়ে, তাহলে নতুন কিছু হবে। আমারও ওই ধরনের গান দরকার। এটা আরিফ বিল্লাহর রিয়েলাইজেশন ছিলো। অতঃপর আরিফ বিল্লাহ সাহেব কবীর সুমনের সঙ্গে আমার একটা লিংকআপ করে দেন। আমার কিছু গান কবীর সুমনকে শোনান। তারপর আরিফ বিল্লাহ আমাকে বললেন, এখন আপনি কবীর সুমনকে হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট করতে পারেন। তখন হোয়াটসঅ্যাপে আমি কবীর সুমনকে সালাম দিয়ে একটা মেসেজ পাঠাই। সেখানে লিখি, ‘শ্রদ্ধেয় অগ্রজ সালাম। আমি বাংলাদেশের ছোট একজন শিল্পী, আসিফ আকবর। আমি আপনার লেখা গান গাইতে চাই’। তখন উনি আমাকে পাল্টা মেসেজ দিলেন অডিও রেকর্ডের মাধ্যমে। সর্বসাকুল্যে উনার সঙ্গে তিনদিন কথা বলেছিলাম। কথা বলে বুঝলাম, উনার সঙ্গে কথা বলার জন্য টেলিফোন ছোট একটা মাধ্যম! উনার সঙ্গে পাশাপাশি বসে কথা বলতে হবে দিনের পর দিন। কারণ উনি অনেক বড় জ্ঞানী মানুষ। জ্ঞানের আধার। সংগীতের যেকোনো সমস্যার সমাধান কবীর সুমনের কাছে আছে। 

[৫] বাংলাদেশের সিনিয়র শিল্পী, সুরকার ও গীতিকারদের শূন্যতা পূরণ করতে পারছেন কি কবীর সুমন?

আসিফ আকবর: মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী মারা গেছেন, লাকী আকন্দ নেই, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ভাই মারা গেছেন। দেশের সংগীতাঙ্গনে অনেক বড় শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। আলম আঙ্কেল কাজ করেন না। তিনি অসুস্থ। আমি চাই একটু ভালো লিরিক। ভালো গান। ক্যারিয়ার তো হয়ে গেছে। নতুন করে হিটের কিছু নেই। এখানে কিছু অলঙ্কার দরকার। বাংলাদেশের সংগীতের বোদ্ধা সিটিজেনরা গান থেকে সরে গেছেন। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য ভালো লিরিক দরকার। নতুন প্রজন্মকে লিরিকের মর্ম বোঝানোর জন্যও কাজ করা দরকার। এই থিংকিং থেকেই কবীর সুমনের সঙ্গে কাজ করা। উনিও খুব ইন্টারেস্টেড ফিল করেছেন। কেন উনি আমাকে পছন্দ করেন জানি না। উনার সঙ্গে স্টেইট কথা বলেছি। এরপর থেকে আমাকে গান পাঠান, আমি শুনি। 

এই মুহূর্তে পাক-ভারত উপমহাদেশে কবীর সুমন মোস্ট সিনিয়র, মোস্ট লয়াল, মোস্ট জিনিয়াস ও মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট মিউজিসিয়ান। উনার সঙ্গে কাজ করতে পারা সৌভাগ্যের ব্যাপার। উনি প্রতিনিয়তই গান পাঠাচ্ছেন আমাকে। সময় দিচ্ছেন। উনাকে আমি মাস্টার পাঠাই, কখনো কখনো ডেমো পাঠাই। কোনো কারেকশন আছে কিনা তিনি অডিও টেপে বলে দেন, কোথায় কোথায় সমস্যা আছে। উনার সাবজেক্টগুলো খুবই সুন্দর। 
কবীর সুমনের একটা গানের লিরিক, ‘যে ভাষাতে গোসল করি, সেই ভাষাতেই স্নান’। আপনাকে যদি বলি, ভাই আমি স্নানে যাচ্ছি, আপনি তখন ভাববেন, শালায় বোধহয় হিন্দু! যদি বলি, গোসল করে আসছি, তখন ব্যাপারটা আপনার ভালো লাগবে। যদি আপনাকে বলি, ‘দাদা’, তাহলে ভাববেন হিন্দু! কিন্তু দাদা আদরের একটি ডাক। গোসল যেমন বাংলা শব্দ, স্নানও বাংলা শব্দ। মানুষ এসবে ভুল করে। মানুষ কি আরবি চায়, নাকি সংস্কৃতি কিংবা ইংরেজি বুঝি না। যদিও কারও বোঝা, না বোঝায় কিছু যায় আসে না আমার। যেটা ভালো লাগে আমার, সেটাই করি আমি। কবীর সুমন আমার ভালোলাগাটাকে আমার ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। আমার খুব ভালো লাগে তার লিরিক। 

[৬] কবীর সুমনের বিশেষ কোন গুণটির কথা বলবেন, যা আপনাকে মুগ্ধ করে?
আসিফ আকবর: কবীর সুমনের ধৈর্য্য আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করে। বিশেষ করে গানের ব্যাপারে। আমাকে উনি একটা গান পাঠিয়েছিলেন ‘রাগ’-এর উপরে। আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। গানটা খুব সুন্দর। তবে আমার গাইতে খুব কষ্ট হবে। গাইতে হয়তো পারতাম চেষ্টা করলে, সময় লাগতো। আবার মনে হয়েছে, ওই ক্যাপাবিলিটি আমার নেই। আমি উনাকে স্টেইট বলে দিয়েছি যে, শ্রদ্ধেয় অগ্রজ আমি তো এটা গাইতে পারবো না। এই গানটাতে আমি অপারগ। ব্যাপারটা পজেটিভলি নিয়েছিলেন উনি। সাধারণত কবীর সুমনের মাপের শিল্পীরা মাইন্ড করেন এ ধরনের কাজে। বাংলাদেশের কেউ হলে মাইন্ড করতেন। ‘আমি একটা গান দিলাম, তুমি গাইলা না’Ñএ ধরনের একটা মনোভাব প্রকাশ পেতো। কিন্তু কবীর সুমন তা করেননি। এটাই উনার মুক্তমন। বড় মানসিকতার পরিচয়। আমার খুব ভালো লেগেছে উনার এই উদারতায়। 

[৭] কবীর সুমন একজন শিল্পী, সুরকার, গীতিকার। আপনার মুগ্ধতা কোন জায়গায়?
আসিফ আকবর: এ ব্যাপারে কিছু বলা খুব মুশকিল। আমরা ছোটবেলা থেকেই কবীর সুমনের ফ্যান বা ভক্তশ্রোতা। ভক্ত মানে ভক্তÑ সেই মাত্রার ভক্ত। বহু বছর ধরে আমরা উনার গান শুনে আসছি। গেয়ে আসছি। কবীর সুমনের গানের লিরিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। গানের কথা। সুর উনি বিভিন্নভাবে করে থাকেন। বাংলা ভাষায় এতো সহজ, মানুষের মনে দাগ কাটার মতো লিরিক এই সময়ে পাওয়া অসম্ভব। এটা একটা ইউনিক ব্যাপার, যা উনি করতে পারছেন। 

[৮] কবীর সুমনের লেখা ও সুরে সিরিয়ার ছেলেসহ যে কটি গান গেয়েছেন, অলমোস্ট সবগুলো বেশ সাড়া ফেলেছে। আমার অন্তত তাই মনে হয়। কবীর সুমন-আসিফ জুটি কি তবে জমে গেলো!
আসিফ আকবর: জমে গেছে তো বটেই। তবে কবীর সুমন তো এখন আর নাম-ডাকের জন্য কাজ করেন না। উনি বাংলা ভাষায় গান লেখেন। গান গান। সুর করেন। বাংলা খেয়ালের ডেভেলপমেন্টে কাজ করছেন। ওই ব্যাপারটা উনি খুব নাছোরবান্দার মতো ধরে রেখেছেন! উনার এই আন্দোলন মোটামুটি সফলতার পথে। কবীর সুমনের বাংলা খেয়াল নিয়ে জাতীয় জাদুঘরে একটা প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করে রেখেছি। উদ্যোক্ততা বাংলাদেশ আইন সমিতি। উনি অনেক আগেই বাংলাদেশে আসতেন। কিন্তু হঠাৎ উনি অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। আমরা খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভয় পাওয়া মানে কী? উনার অসুস্থতা মানে একপ্রকার আমাদেরও অসুস্থতা! অসুস্থ হওয়ার পর কবীর সুমন বললেন, আমি হয়তো যেতে পারবো না। 

বাংলাদেশে কবীর সুমনের অনেক ভক্ত আছেন। তারা খুব করে চাইছেন আমি যেন উনাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসি। আমার সঙ্গে তারা নিয়মিত যোগাযোগ করেন। বলেন, ভাই আপনি পারবেন। কবীর সুমন আপনাকে অনেক ভালোবাসেন। পছন্দ করেন। আপনি বললে উনি আসতে রাজি হবেন। তাদের আমি আশ^স্ত করেছি। বলেছি, আমি চেষ্টা করছি, খুব শিগগিরই কবীর সুমনকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার। কবীর সুমন বাংলাদেশে আসবেন। উনাকে আমরা আনবোই। দরকার পড়লে চার্টার্ড বিমানে করে বাংলাদেশে নিয়ে আসবো। কোনো প্রোগ্রাম যদি নাও হয়, তবুও শেরাটন বা অন্য কোথাও রেখে উনার সঙ্গে আমরা দেখা করবো। কবীর সুমনের সঙ্গে দেখা করতেই হবে আমাদের, সেটা যেকোনো মূল্যে। তবে উনার সুস্থ থাকা বড় বিষয়। উনি যখনই হ্যাঁ বলবেন, তখনই তাঁকে বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করবো। 

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়