গ্র্যামি বিজয়ী গায়িকা ডাফি, এক দশকেরও বেশি সময়ের নীরবতা ভেঙে টিকটকে ফিরে এসেছেন। তাঁর জনপ্রিয় গান ‘মার্সি’–এর রিমিক্স রেকর্ড করেছেন তিনি। সেটির প্রচারের অংশ হিসেবে টিকটকে তাঁর ক্যামিও উপস্থিতি দেখা গেছে। এ নিয়ে ভক্তদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।
‘ইমোশন’ নামের একটি মিউজিক প্রোডাকশন কোম্পানি তাদের পোস্টে জানিয়েছে, ডাফি তাদের সঙ্গে ইউ. কে. গ্যারেজ মিক্স তৈরি করছেন। সেই পোস্টে ডাফিকে তাঁর ২০০৮ সালের হিট গান ‘মার্সি’–তে লিপ–সিঙ্ক করতে দেখা যায়। ক্যামেরার দিকে তিনি একটি দুষ্টুমিষ্টি চোখ টিপিও দেন।
‘মার্সি’ গানটি যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই শিল্পীর প্রথম অ্যালবাম ‘রকফেরি’–এর একটি ট্র্যাক। এটি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডে বছরের সেরা পপ ভোকাল অ্যালবাম হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল। ডাফি ‘মার্সি’ গানের জন্য সেরা নারী পপ ভোকাল পারফরম্যান্স বিভাগে মনোনীত হয়েছিলেন এবং সেরা নতুন শিল্পীর তালিকায়ও তাঁর নাম ছিল। পরবর্তীতে তিনি আরও একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেন এবং মিউজিক ভিডিওতে অভিনয়ও করেন। কিন্তু ২০২০ সালে জানান, তাঁকে মাদক খাইয়ে অজ্ঞান করে অপহরণ করা হয়েছিল। সে সময় তিনি ধর্ষণেরও শিকার হয়েছেন। এ কারণেই দীর্ঘ দিন জনসমক্ষে আসেননি।
ডাফি সোশ্যাল মিডিয়াতে এক পোস্টে লিখেছিলেন, ‘অনেকেই জানতে চান, আমার কী হয়েছিল, আমি কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলাম এবং কেন? সত্যিটা হলো, বিশ্বাস করুন, আমি এখন ঠিক আছি এবং নিরাপদ, আমাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল, মাদক খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়েছিল এবং কয়েক দিন ধরে আটকে রাখা হয়েছিল। অবশ্যই আমি বেঁচে গেছি, কিন্তু সুস্থ হতে অনেক সময় লেগেছে। এটা বলার কোনো সহজ উপায় নেই। তবে আমি আপনাদের বলতে পারি, গত দশ বছরে, বহু দিন আমি আবার সূর্যের আলো অনুভব করতে চেয়েছি, এখন সেটি পাচ্ছি।’
এই পোস্টের দুই মাস পর, আরও হৃদয়বিদারক বিবরণ দেন ডাফি।
একটি ব্লগ পোস্টে তিনি লেখেন, ‘সেদিন আমার জন্মদিন ছিল। একটি রেস্তোরাঁয় আমাকে মাদক খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়, এরপর চার সপ্তাহ ধরে মাদক দেওয়া হয় এবং বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি বিমানে ওঠার কথা মনে করতে পারি না, যখন জ্ঞান ফেরে বুঝতে পারি একটি চলমান গাড়ির পেছনের সিটে রয়েছি।’
তিনি জানান, তাঁকে একটি হোটেল রুমে নিয়ে গিয়ে অপহরণকারী ধর্ষণ করে। সেই ব্যক্তি তাঁকে হত্যার হুমকিও দিয়েছিল।
ডাফির আসল নাম এইমি অ্যান ডাফি। তিনি সেই দুঃসহ স্মৃতি স্মরণ করে বলেন, ‘সে আমাকে ছুড়ে ফেলতে পারত। যখন সে ঘুমাচ্ছিল, তখন পাশের শহর বা নগরে পালিয়ে যাওয়ার কথা ভেবেছিলাম, কিন্তু আমার কাছে কোনো নগদ টাকা ছিল না এবং আমি ভয় পেয়েছিলাম যে, সে আমার বিরুদ্ধে পুলিশ ডাকবে...আমি জানি না, সেই দিনগুলো সহ্য করার মতো শক্তি আমি কীভাবে পেয়েছিলাম!’
অবশেষে ডাফি পালাতে সক্ষম হন। তিনি জানান, একজন মনোবিদের পরামর্শ নিয়ে এবং বহুবার বাসা পরিবর্তন করে বছরের পর বছর ধরে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করেছেন। গানের ক্যারিয়ার নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন।
ডাফি বলেন, ‘আমি এখন এই স্মৃতি ভুলে যেতে চাই। আশা করি, “ডাফির কী হয়েছিল” এই প্রশ্ন আর কেউ করবে না। । এখন আপনারা জানেন আমি মুক্ত।’
ডাফির এই প্রত্যাবর্তনে ভক্তরা যেমন আনন্দিত, তেমনি তাঁর জীবনের গল্প বহু মানুষকে সাহস জুগিয়েছে।