মনিরুল ইসলাম : এফডিসি আর চ্যানেল আই প্রাঙ্গনে জানাজা নামাজ শেষে বেলা ৩ টা ১৫ মিনিটে কিংবদন্তি অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমানের দাফন বনানী কবরস্থানে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নেতা সানি রহমান।
এদিকে, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত খ্যাতিমান চিত্রনায়িকা অঞ্জনা রহমানের মৃত্যু নিয়ে রহস্যের গুন্জন চলছে এফডিসি অঙ্গনে।
চিত্র নায়িকা মুক্তিসহ দুই/ চারজন অভিযোগ করে বলেন, লাশ গোসলের সময় অন্জনার শরীরে ৪/৫টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এই কথা যিনি গোসল করিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বলে তারা জানান। নায়ক আলমগীর ও উজ্জ্বল এর সামনে তারা এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। এ সময় বিনোদন সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। এফডিসির প্রযোজক- পরিবেশক সমিতিট রুমে মৃত্যু রহস্য নিয়ে আলাপচারিতা চলতে থাকে। কেউ কেই অন্জনার পালিত পুত্রের দিকে অভিযোগের আঙ্গুলি তুলেন। এক পর্যায়ে তাকে ডেকে আনা হলে মনির বলেন, আপনারা সন্দেহ করলো পোস্টমর্টেম করাতে পারেন। তা হলে রহস্য বের হয়ে যাবে। তার কথা বলার সময় শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর এসে হাজির হন। উপস্থিত ছিলেন জয়সহ শিল্পী সমিতির অনেকে।
জানা যায়, এক সপ্তাহের বেশি সময় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে শুক্রবার রাত ১টা ৩৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই নায়িকা। তবে মৃত্যু নিয়ে এবার বেঁধেছে রহস্যের জাল। কেউ কেউ বলেন, এই আঘাতের চিহ্নের পিক রয়েছে। পরে বাদ জোহর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত সকলে শরীক হন। জানাজা নামাজের আগে প্রযোজক - পরিবেশক সমিতি, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতি, ফিল্মক্লাব, বাচসাস তাঁর লাশবাহী কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
সূত্র জানায়, অন্জনার মৃত্যু রহস্য নিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ও শিল্পী সমিতি আলোচনা করে পরে মৃত্যু রহস্য নিয়ে বক্তব্য দিবে।
এদিকে, শেষ বিদায়ের জন্য অভিনত্রেীকে সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে গোসল সম্পন্ন করা হয়। সে সময় তার শরীরের নানা জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। এরপর অঞ্জনার মরদেহ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে নেওয়া হলে, সেখানেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই অসুস্থ ছিলেন এই নায়িকা। এরপর শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন না হলে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। চিকিৎসকের পরামর্শে চেকআপের পরে তার রক্তে ইনফেকশন ধরা পড়ে। এক সপ্তাহের বেশি সময় চিকিৎসা নিলেও কোনো উন্নতি হয়নি অঞ্জনার। পরে বুধবার ১ জানুয়ারি তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে অঞ্জনাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু মনিরকে লক্ষ্য করে বলেন, প্রয়োজনে- অপ্রয়োজনে আমাকে কল দিয়ে সব সময় কথা বলতা। টাকা নিয়ে যেতা। বিকাশেও টাকা নিয়েছো। অন্জনা আপা অসুস্থ এই খবরটা জানাওনাই কেন। জবাবে মনির বলেন, আপনি বিদেশে আছেন বলে কল দেই নাই। খসরু বলেন, আমার তো আর মোবাইল বন্ধ ছিলো না।
হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে পারিনি বলে নায়ক আলমগীরসহ আরও ২/ ৩ জনকে কল দিয়ে অন্জনার পালিত পুত্র টাকা সংগ্রহ করেছে বলে উপস্থিত নায়ক আলমগীরসহ অনেকেই বলেন। কে কতো টাকা দিয়েন তার সংখ্যাও উল্লেখ করে মনির এর কাছে তা জানতে চান। মনির এ নিয়ে কোন কথা বাড়াননি।
১৯৮১ সালে 'গাংচিল' এবং ১৯৮৬ সালে 'পরিণীতা' চলচ্চিত্রের জন্য অঞ্জনা রহমান দুইবার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এ ছাড়া মোহনা, পরিণীতা ও রাম রহিম জন চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিভাগে তিনবার বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন তিনি।
১৯৭৬ সালে বাবুল চৌধুরীর 'সেতু' চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে অভিনয় জীবনে পথচলা শুরু করেন অঞ্জনা। তবে তার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র শামসুদ্দিন টগর পরিচালিত 'দস্যু বনহুর'। রহস্যভিত্তিক এই সিনেমাতে তার বিপরীতে ছিলেন সোহেল রানা।
প্রায় তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন গুণী এই অভিনেত্রী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো- অশিক্ষিত, সুখের সংসার, যাদু নগর, সখী তুমি কার, নেপালী মেয়ে, রাখে আল্লাহ মারে কে, একই রাস্তা, অঙ্কুর, মাধবীলতা, জবরদস্ত, জিদ্দী, আশীর্বাদ, শাহী কানুন, রূপসী বাংলা, বাপের বেটা, মরুর বুকে, প্রমাণ, বিক্রম, আকাশপরি, রাজার রাজা, বিধিলিপি, দিদার, আনারকলি, অগ্নিপুরুষ, টার্গেট, আন, মহারাজ, মানা, আশার প্রদীপ, প্রতিরোধ, বেদনা, সোনার পালঙ্ক, চোখের মনি, প্রেমের সমাধি, ঈমানদার, অংশীদার, ইত্যাদি। ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইলো... তাঁর অভিনীত সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি গান। এটি অশিক্ষিত সিনেমার একটি সুপার- ডুপাট হিট সং।