অভিনেতা ও পরিচালক সঞ্জয় খানের পুত্র ও ফিরোজ খানের ভাতিজা হওয়ায় চলচ্চিত্র জগতে জায়গা পেতে কষ্ট হয়নি তাঁর। ২০০৩ সালে, মাত্র ২২ বছর বয়সে ‘চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে’ সিনেমা দিয়ে অভিনয়–দুনিয়ায় অভিষেক হয় তাঁর। তিনি বলিউড অভিনেতা জায়েদ খান। বলিউড হিট ‘ম্যায় হু না’তে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি পান তিনি। আর এটাই তাঁর ক্যারিয়ারের একমাত্র সাফল্য।
এ ছাড়া তাঁর ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ ছবিই ফ্লপ। তবে বলিউডের এই ফ্লপ হিরোর সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৫০০ কোটি রুপি। আল্লু অর্জুন, প্রভাস, রণবীরদের চেয়েও ধনী তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস–এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন অভিনেতা।
জায়েদ খান অভিনীত ‘চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে’ ও ‘ম্যায় হু না’ দুটি ছবিই বক্স অফিসে ভালো ব্যবসা করেছিল। তবে হিট বলতে ‘ম্যায় হু না’। ২০০৫ সালে পরপর চারটি ছবিতে অভিনয় করেন জায়েদ। ‘ওয়াদা’, ‘দশ’, ‘শাদি নম্বর ওয়ান’ এবং ‘শব্দ’ নামের চারটি ছবি মুক্তি পায় অভিনেতার। সেগুলোর মধ্যে বক্স অফিসে মাত্র ‘দশ’ ছবিটি আয় করেছিল গড়পড়তার চেয়ে একটু বেশি। বাকি তিনটি ছবি ফ্লপ করে। ২০০৫-১২ সাল পর্যন্ত জায়েদ আরও ১০টি ছবিতে অভিনয় করেন। আর সেই সব কটি ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। এর মধ্যে ‘ফাইট ক্লাব’, ‘মিশন ইস্তাম্বুল’ ও ‘তেজ’-এর মতো হাই-প্রোফাইল ছবি ছিল।
২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লাভ ব্রেক আপ্স জিন্দেগি’ ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাও করেন জায়েদ। এই ছবিতে জায়েদের সঙ্গে অভিনয় করেন অভিনেত্রী দিয়া মির্জা। ছবির প্রযোজনার দায়িত্বেও ছিলেন অভিনেত্রী। দুজন মিলে একটি প্রযোজনা সংস্থা শুরু করেন। কিন্তু ছবি নির্মাণ নিয়ে মতের অমিল হওয়ার সেই সংস্থা ছেড়ে বেরিয়ে যান জায়েদ।
জায়েদের সর্বশেষ সিনেমা ছিল ‘শরাফত গায়ি তেল লেন’, যেটি কিনা ২০১৫ সালে মুক্তি পায়। এটিও বক্স অফিস সফলতা পায়নি। তারপর বড় পর্দা থেকে বিরতি নেন তিনি। মোট ১৫টি ছবিতে অভিনয় করেন জায়েদ, যার মধ্যে হিট শুধুই ১টি, ১৩টি ফ্লপ। আর একটা গড় উপার্জনকারী ছবি।
বড় পর্দায় ব্যর্থতার পর টেলিভিশনের পর্দায় জায়েদ তাঁর ভাগ্য বদল করতে যান। ২০১৭ সালে, ‘হাসিল’ নামের একটি হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে। তবে ছোট পর্দায় জায়েদের স্থায়িত্ব ছিল কম। ‘হাসিল’-এর পর আর কোনো ধারাবাহিকে অভিনয় করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
অভিনয়ে সাফল্যের দেখা না পেলেও ব্যবসায়ী হিসেবে বেশ সফল জায়েদ খান। বিভিন্ন স্টার্টআপ এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ করে তিনি পেয়েছেন সাফল্যের দেখা। চলতি বছর ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইটি নাও–এর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে জায়েদ খান প্রায় দেড় হাজার কোটি রুপি সম্পত্তির মালিক। যদিও এ বিষয়ে মুখ খোলেননি জায়েদ, এ প্রশ্ন রাখা হলে স্বীকারও করেননি বা অস্বীকারও করেনি। এমন কথা প্রসঙ্গে শুধুই হেসেছেন। আর যদি এ হিসাব ঠিক হয়, তবে সম্পত্তির নিরিখে জায়েদ রণবীর কাপুর (৫৫০ কোটি রুপি), প্রভাস (৪০০ কোটি রুপি), আল্লু অর্জুন (৩৫০ কোটি রুপি) এবং রাম চরণের (১ হাজার ৩০০ কোটি রুপি) মতো তারকাদের চেয়েও বেশি ধনী তিনি।
এক সাক্ষাৎকারে জায়েদের কাছ থেকে কোনো আর্থিক পরামর্শ আছে কি না, জানতে চাওয়া হলে তিনি শুধুই বলেছিলেন যে, ‘নিজের সাধ্যের মধ্যে থাকা উচিত’। তিনি আরও বলেন, ‘একটা কথা আছে, যদি তোমার ফেরারি কেনার সামর্থ্য থাকে, তাহলে একটা মার্সিডিজ কেনো, আর যদি তোমার একটা মার্সিডিজ কেনার সামর্থ্য থাকে, তাহলে একটা ফিয়াট কেন। আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে রয়েছি, আর সেখানে আপনার ভাবমূর্তিটা খানিক এমনই। আপনার সেভাবেই চলা উচিত, যেটা আপনি চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। কিছু মানুষ এটা মেনে চলেন, তবে ৮০ শতাংশ মানুষই এটা মেনে চলেন না। তাঁরা তাই ভেঙে পড়েন। তাঁদের ইএমআই আছে, ঋণ আছে, তারপরও তাঁরা বোকাবোকা কাজ করে বসেন। এটা আসলে একটা খরগোশের গর্ত।’
চলতি বছরের শুরুর দিকে ইনস্টাগ্রামে অভিনয়ে ফেরার পরিকল্পনার কথা জানান জায়েদ। তবে কামব্যাক প্রজেক্ট নিয়ে খুব বেশি কিছু বলতে চাননি এই অভিনেতা।
আপনার মতামত লিখুন :