বাংলাদেশি মুসলিম শিল্পীদের পশ্চিমবঙ্গে সিনেমা করতে হলে বাংলাদেশে হিন্দু অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে, নয়তো তাদের বয়কটের হুমকি দিলেন বিজেপি নেতা ও রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য।
এক সাংবাদিক সম্মেলন করে বিজেপির এই সিনিয়র নেতা প্রশ্ন তোলেন জয়া আহসান থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ নেতাদের কলকাতায় আশ্রয় নেওয়া প্রসঙ্গে। মহান মুক্তিযুদ্ধকে চরম অবমাননা করে বিজেপি এই নেতার দাবি ওটা ছিল ক্ষমতা দখলের জন্য মোল্লাতন্ত্রের লড়াই।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতার বিষয়ে কলকাতার অনেক স্বনামধন্য পরিচালককে প্রশ্ন করা হলেও মুখ খোলেন না যারা এখনও বাংলাদেশের শিল্পীদের সিনেমায় কাস্ট করছেন, কিন্তু কলকাতায় অনেক বাঙালি অভিনেতা অভিনেত্রী রয়েছেন, বাইরে থেকে অভিনেতা-অভিনেতাদের আনার আগে তবে কী সচেতন হতে হবে! সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শমীক জানিয়েছেন, কোন শিল্পীসত্তাকে কোনো প্রতিভাকে আমরা কোনো ধর্ম বা উপাসনার পদ্ধতির মোড়কে রাঙিয়ে দিতে চাই না বা তাদের বিচ্ছিন্ন করতে চাই না। কিন্তু এই মুহূর্তে তাদেরকে বয়কট করতে হবে। এই মুহূর্তে ওপার বাংলার যারা মুসলিম ধর্মালম্বী অভিনেতা-অভিনেত্রী আছেন, তারা বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করুন। হিন্দুর ওপর এই ঘৃণ্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন। তারপর শুটিংয়ে নামুন।
ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, তিনি তো ওপার বাংলার মানুষ, টলিউড যার নিয়ন্ত্রণে, বিষয়টা দেখুন শুধু খেলাধুলা দেখলে হবে না। তিনি অনেক বিধি-নিষেধ আরোপ করেছিলেন, তপন সেনের পর্যন্ত শুটিং বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যারা ওপারে অত্যাচার করবে আর এপারে এসে সিনেমা করবে আর প্রতিবাদ করবে না এটা তো হতে পারে না। আমি তো নাম উল্লেখ বলছি গৌতম ঘোষের প্রতিবাদ কোথায় গেল? প্রসেনজিতের মত একজন অভিনেতা অন্তত তার থেকে তো সমাজ এটা প্রত্যাশা করে। যে একটা কোনো কথা বলুক উনি।
জয়া আহসান কলকাতায় আছেন এমন প্রশ্নের জবাবে শমিক বলেন, উনি কলকাতায় কেন থাকবেন না? উনি অভিনয় করতে এসেছেন। কিন্তু উনি প্রতিবাদ করুক। জয়া আহসানের হিন্দু দর্শক তো ওপার বাংলাতেও আছেন। উনি জয়া আহসান না হয়ে জয়া ভাদুরি হলে তাহলে একটা প্রশ্ন ছিল। কিন্তু উনি জয়া আহসান। ওনাকে প্রতিবাদ করতে হবে। ওনার ছবি হিন্দুরা দেখছেন ওনার ছবি মুসলমানরাও দেখছেন। আমরা এই ঘৃণ্য রাজনীতি চাই না। কিন্তু হিন্দু হয়ে বাংলাদেশে জন্মানো কী অপরাধ?
ভারতের রাজ্যসভার গুরুত্বপূর্ণ এই সদস্য বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সাংবাদিকদের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ওখানে সব মৌলবাদী অশিক্ষিত-মূর্খ লোকজন বসে আছেন। কে কার পন্থী কেউ জানে না। কে চিটফান্ডের মালিক, কে বিএনপি, কে আওয়ামী লীগ ওরা দিনের শেষে সবাই মৌলবাদী। টোটাল তালিবানাইজেসন হয়ে গেছে, যে অত্যাচার আফগানিস্তানে পর্যন্ত হয়নি সেই অত্যাচার আজকে বাংলাদেশে হচ্ছে। আফগানিস্তানের অত্যাচার এই মাত্রায় পৌঁছায়নি। আফগানিস্তানে হয়তো সৌধকে দখল করেছে, হয়তো স্কুল থেকে জোর করে বের করে দিয়েছে, খেলার মাঠ বন্ধ করে দিয়েছে, নারীদের বোরখা ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু আফগানিস্তানে এভাবে অন্য ধর্মীদের জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে, গণধর্ষণ, কিশোরীদের ধর্মান্তর করা, তাদের কালেমা পড়ানো, লাইব্রেরি ভেঙে দেয়া, এই অত্যাচার আফগানিস্তানিও হয়নি। আজকে যেটা বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে।'
বিজয় দিবসের প্রাক্কালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে হেয় করে এই সংসদ সদস্য বলেন, ওটা কোন বাংলা ভাষার আন্দোলন ছিল না দুটো মোল্লাতন্ত্রের লড়াই ছিল কে ক্ষমতা দখল করবে। বাংলা ভাষাটা শুধু মৌখিক বলার জন্য। কোথায় গেলেন এবার থেকে যারা ওপারে যেতেন কবিতা পড়তে আর নিয়ম করে উপঢৌকন নিয়ে এসে বলতেন এপার বাংলা ওপার বাংলা এক। একসঙ্গে যারা যৌথ সিনেমা করতেন তারা কোথায়?
এসময় বাংলাদেশী অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর প্রসঙ্গ তুলে শমীক বলেন , চঞ্চল চৌধুরী পৃথিবীখ্যাত নাম। বাংলাদেশের হৃদয় সম্রাট আমাদের এখানে ফলোয়ার। এখন তিনি সম্পূর্ণ গৃহবন্দী। জীবন সংশয়ের অবস্থা। বাংলাদেশের অন্যান্য নায়ক নায়িকাদের নাম বলে আমি আর তাদের ব্যস্ত করতে চাই না। যারা এদিকে আশ্রয় নিয়ে আছেন তারা ভালো থাকুক সুস্থ থাকুক।
এরপরেই আওয়ামী লীগ নেতাদের ভারতে আশ্রয় নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আজ কেন বাংলায় আশ্রয় নিয়েছে? আগে যারা বলতেন বাংলাদেশ থেকে ঢুকলেই অনুপ্রবেশকারী। আজ তো বোঝা যাচ্ছে কারা অনুপ্রবেশকারী। রোহিঙ্গাদের ডেকে এনেছিলেন শেখ হাসিনা জবাবে কক্সবাজার টাকে কি বানিয়ে দিয়েছে। ওপার বাংলার তো কোন মুসলমান মেয়েকে জোর করে তুলে নিয়ে হিন্দু বানানো হচ্ছে না। কোন মসজিদ ভাঙা হচ্ছে না তাহলে তারা কেন এপারে আসবেন। তারা তো বলেছিলেন এটা অপবিত্র ভূমি, যুদ্ধ ভূমি এদেশে আমরা থাকবো না। আমাদের জন্য তো পৃথক হোমল্যান্ড পাকিস্তান দরকার আছ। তাদের জন্য তো দেশভাগ হয়েছে। তারা আবার নতুন করে দেশে আসবেন কেন ? আর তাদের নাম নতুন করে ভোটার লিস্টে উঠবে কেন? উৎস: আরটিভি অনলাইন।
আপনার মতামত লিখুন :