আট থেকে আশি সব বয়সীরা একটা নামেই মুগ্ধ, শাহরুখ খান। অনেকের কাছেই এটা শুধু একটা নামই নয়, অনুভূতিও বটে। ভারতীয় তারকা হয়েও যার পরিচিতি বিশ্ব জুড়ে।
গত ২ নভেম্বর ছিল এই বলিউড বাদশাহর জন্মদিন। আর এই জন্মদিন উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও তার ভক্তরা আয়োজন করেছিলেন ‘এসআরকে ডে’। এই আয়োজনে শুধু এক নজর শাহরুখকে দেখতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভক্তরা মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় উপস্থিত হন। সেই আয়োজনে শাহরুখও তার ভক্তদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী আড্ডা দেন। এবারের আয়োজনে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ছয় বাংলাদেশি। তারা হলেন ঢাকার নুজহাত সেঁজুতি, সাদিয়া আক্তার ইরা, ফাহাদ খান, মাহবুব শুভ, সাদিকুল ইসলাম ও চট্টগ্রামের রুবা বদরুন নাহার।
‘এসআরকে ইউনিভার্স বাংলাদেশ’ গ্রুপটির অ্যাডমিন ফাহিম আজিজের মাধ্যমে মুম্বাইয়ের বান্দ্রার বালগন্ধর্ভা রঙ মন্দির স্টুডিওতে অনুষ্ঠিত ‘এসআরকে ডে’-তে আমন্ত্রণ পান তারা।
একটি জাতীয় দৈনিকের সাথে আলাপকালে তারা শেয়ার করেছেন নিজেদের অনুভূতি। এর মধ্যে ফাহাদ খান শাহরুখের সঙ্গে দেখা করার জন্য এমবিএর মিড টার্ম পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। যেকোনো মূল্যে এবার দেখা করবে এমন প্রত্যয় নিয়ে মুম্বাই ছুটে যান। তিনি বলেন, ৩৬ ঘণ্টা জার্নি করে দীপাবলির দিন পৌঁছাই। এরপর যখন জানতে পারি, নিরাপত্তাজনিত কারণে এসআরকে মান্নাতের সামনে আসবে না তখন কিছুটা মনঃক্ষুন্ন হই। পরে ভাবতে থাকি ইভেন্টে আসবে তো! রাতে ঘুম হয়নি এগুলো ভেবে। কিছুক্ষণ পর পর ঘুম ভেঙে যেত। এর পর পরদিন ইভেন্ট পাস সংগ্রহ করে অডিটরিয়ামের ভেতরে গেলাম। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার অনেকক্ষণ পর শাহরুখ এলেন। ৩-৪ মিনিট একদম ফ্রোজেন ছিলাম আমি। মানুষটাকে সামনে থেকে দেখতে পারার অনুভূতির কোনো ব্যাখ্যা হয় না। ছবি তোলার সময় হ্যান্ডশেক করি আর তখন উনি বলেন ‘বেটা পেহলে তো পিক কে লিয়ে পোজ কারো ফাটাফাট’। ব্যস হয়ে গেল ড্রয়িংরুমে টাঙানোর মতো একটা লাইফটাইম ছবি।
মাহবুব শুভ বলেন, চোখের সামনে শাহরুখ খান, কান্না করব নাকি চিৎকার করব বুঝতে পারছিলাম না। নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ‘শাহরুখ আই লাভ ইউ’ বলে চিৎকার করে ফেললাম, ওপাশ থেকে তিনি ‘লাভ ইউ অল’ বলে রিপ্লাই করলেন। আমি ওখানেই থমকে ছিলাম। ছবি তোলার ব্যাপারে মাথায় একটা চিন্তা ছিল, যেভাবেই হোক শাহরুখ খানের পাশে বসব। তার পাশে সিট পেয়েছিও। বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় তারকা আমার সামনে। আমি উনার হাত ধরে বলি, ‘লাভ ইউ স্যার’। তিনি তখন আমাকে বললেন ‘সামনে দেখো’। আমি ভয়ে হাত পেছনে নিয়ে নিই। পর উঠে চলে যাওয়ার সময় তিনি আমাকে বলেছিলেন ‘টেক কেয়ার ইউর সেলফ’।
নিজেকে সবচেয়ে ভাগ্যবান দাবি করে সাদিয়া আক্তার ইরা বলেন, আমার মা ও আমি দুজনই শাহরুখ খানের অনেক বড় ফ্যান। একসময় ভাবতাম শাহরুখ খানের সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করে ফেললাম, হ্যান্ডশেকও করে ফেললাম। সবকিছু এখনো রূপকথার মতো লাগছে। ৩০ বছর ধরে শাহরুখের ফ্যান নুজহাত সেঁজুতি। তিনি পিএইচডির জন্য ভারতে অবস্থান করছেন। এবার শাহরুখের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ কোনোভাবেই মিস করতে চাননি। তিনি বললেন, ইচ্ছে ছিল, শাহরুখ খানের ওপর পিএইচডি স্টাডি করার কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। প্রথমবারের তো এত কাছ থেকে দেখতে পেরেছি। এই মুহূর্তটার তুলনা কোনোকিছুর সঙ্গেই হয় না। ৩১ বছরের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে রুবা বদরুন নাহারের। দিওয়ানা সিনেমা থেকেই তার ফ্যান। বললেন, টিনএজে প্রতি বছর শাহরুখ খানের জন্মদিন পালন করতাম। এবার কিংয়ের সঙ্গেই জন্মদিন পালনের সুযোগ হয়ে গেছে। মুম্বাই যখনই যাই, মান্নাতে ছুটে যেতাম। সময় পেলেই মান্নাতের সামনে চলে যাই। যদি এক ঝলক দেখা মিলে সেই আশায়। এবার ফাইনালি ৩১ বছরের স্বপ্ন পূরণ হলো। যখন তিনি এন্ট্রি নিলেন, আমি জাস্ট বিমোহিত, বাকরুদ্ধ!
পুরো আয়োজনে ভক্তদের সঙ্গে আড্ডা, মাস্তি, নাচ, গান, প্রশ্নোত্তরে আড়াই ঘণ্টা সময় কাটিয়েছেন শাহরুখ খান। এ দুই ঘণ্টাই ভক্তদের স্মৃতির পাতায় বিশাল কিছু। ভক্তদের খালি হাতে ফেরাননি বাদশাহ। প্রত্যেককে উপহার দিয়েছেন গিফট আর হৃদয় ভরা ভালোবাসা।
যেই ফ্যান গ্রুপের মাধ্যমে তারা শাহরুখের সঙ্গে দেখা করতে পেরেছেন সেই ‘এসআরকে ইউনিভার্স বাংলাদেশ’ গ্রুপের অ্যাডমিন ফাহিম আজিজ জানান, নিখাদ ভালোবাসা থেকে গ্রুপটি খুলেছিলেন। ২০২২ সালের শেষ দিকে এসে শাহরুখের ফ্যান গ্রুপ ‘এসআরকে ইউনিভার্স’-এর সঙ্গে যুক্ত হন এবং অফিশিয়ালি শাখা হিসেবে নিযুক্ত হয়। উৎস: দেশ রুপান্তর।
আপনার মতামত লিখুন :