সংস্কৃতি উপদেষ্টা হওয়ার পর অনেকেই ‘ফ্যাস্টিস্টের দোসর’ বলছেন, এ বিষয়েও নিজের অবস্থান পরিস্কার করেন ফারুকী। বলেন, ‘ফ্যাস্টিস্টের দোসর’ বলতে পারেন, বলতে ভালো লাগতে পারে! কিন্তু আমি এমনই দোসর যে, ২০১৫ সালে একটা লেখা লিখেছিলাম ‘কিন্তু এবং যদির খোঁজে’। ওই লেখার চার-পাঁচ দিনের মধ্যে তৎকালীন সরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন সেলস (সিআইসি) আমার সব ট্যাক্সের ফাইল তলব করেছে তা না, আমাকে ও তিশাকে হাজির হতে হয়েছে তদন্ত করার জন্য। এখন এটা বলতে পারেন, এতোদিন কেন এটা আমি বলি নাই। কারণ আমার প্রয়োজন নাই সেম্পেথি নেয়ার।
“কথা বলার জন্য, লেখার কারণে অতীতে কেউ কেউ আমাকে কখনও জামায়াত-শিবির ট্যাগ দিয়েছে। কেউ আওয়ামী লীগ বানিয়েছে, কখনও বা অন্য দলের হিসেবে ট্যাগ দিয়েছে। কিন্তু অনেকে ভাবেনি, একটা লোককে কোনো দল নিজেদের ভাবছে না কেন? কারণ, আমি কোনো দলেরই না। আমি শিল্পী, যখন যেটা খারাপ মনে হয় বলে যাবো। শিল্পীর কোনো দল নেই।”
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিজের ওপর আসা চাপের দু-একটি উদাহরণও দেন ফারুকী। বলেন, একটি লেখার জন্য আমার সব ট্যাক্সের ফাইল ধরে তদন্ত শুরু হয়েছিল। তিশা (ফারুকী স্ত্রী) ও আমাকে তদন্তের মুখোমুখি করা হয়েছিল।
সোমবার (১১ নভেম্বর) মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ফারুকী বলেন, গতকাল (রোববার) পর্যন্ত উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে ‘না’তে ছিলাম। পরে এসে হ্যাঁ বললাম। কারণ, আমি দেশের জন্য কিছু করতে চাই। সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে চাই। ব্যক্তিগত কাজের সূত্রে আগে থেকেই তার কাজের ধরনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বলেও জানান ফারুকী।
সংস্কৃতি উপদেষ্টার দায়িত্ব নেয়া প্রসঙ্গে ফারুকী বলেন,“আমি ফ্যাস্টিস্ট বিরোধীতা করেছি বিবেকের কারণে। নিশ্চয় এই পদের জন্য না। এবং আপনি নিশ্চয় বিশ্বাস করবেন, আমি মারা গেলে মন্ত্রী হিসেবে কেউ আমাকে মনে রাখবে না, মনে রাখবে ফিল্ম মেকার হিসেবে। আলহামদুলিল্লাহ, আই হ্যাভ অ্যান আইডেন্টিটি, এন্ড আই অ্যাম হ্যাপি উইথ দ্যাট।”
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণের পর সোমবার (১১ নভেম্বর) প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। এ সময় তিনি তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। তবে কিছু প্রশ্নের ব্যাপারে তাকে বেশ কৌশলী উত্তর দিতে দেখা যায়।
দায়িত্ব নিয়ে প্রথম দিন অফিস করলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। কেমন কাটলো প্রথম দিনের সরকারি গুরুদায়িত্ব? কেমন পেয়েছেন টিমমেট? কী কী করতে চান অদূর ভবিষ্যতে? এমন নানা বিষয়ে প্রশ্ন এলো সাংবাদিকদের তরফে। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সব প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন ফারুকী।
তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান সফল না হলে আজ হয়তো আমি জেলে থাকতাম। তবে, উপদেষ্টা হবার মতো কোনো লক্ষ্য থেকে ফ্যাসিবাদের বিরোধিতা করিনি। আমি শিল্পী, যখন যেটা খারাপ মনে হয় বলে যাবো। শিল্পীর কোনো দল নেই।
এক সাংবাদিক ফারুকীকে নিয়ে বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজের করা একটি মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চান। উত্তরে ফারুকী শুরুতে মেজর হাফিজের প্রশংসা করেন। বলেন, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার ভূমিকা ছিল। কিন্তু তিনি (মেজর হাফিজ) বোধহয় সোশ্যাল মিডিয়া দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছেন।
এ সময় বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকে তিশার অভিনয় নিয়েও সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন আসে। ফারুকী বলেন, তিনি আপাতত এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে চান না।
ফারুকী বলেন, যত দিন থাকবো দায়িত্বে, কিছু কাজ করে যেতে চাই। আর যদি না পারি, তাহলে যখন চলে যাবো, তখন বলবো যে আমি ব্যর্থ।
ফারুকী বলেন, আমি যে টিম পেয়েছি, তা দুর্দান্ত। সবার সহযোগিতায় ভালো কিছুর প্রত্যাশাই করছেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :