শিরোনাম
◈ সাকিব-তামিম চাইলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে পারবেন: বিসিবি সভাপতি ◈ নারী এশিয়া কাপের ফাইনালে রোববার ভারত ও বাংলাদেশ মুখোমুখি ◈ ঢাকা মেট্রোকে হারিয়ে এনসিএল ক্রিকেটের ফাইনালে রংপুর বিভাগ ◈ আইসিসির কাছে বিশপের সুপারিশ, শামীম-জাকেরকে ‘স্পিরিট অব ক্রিকেট’ পুরস্কার দেয়া হোক  ◈ ‘জনশক্তি’ নামে কোনো রাজনৈতিক দল গঠনের আলোচনা হয়নি, জানালো জাতীয় নাগরিক কমিটি ◈ সাড়ে চার মাসে সাবেক সচিব, অতিরিক্ত সচিব, উপসচিবসহ ১২ জন গ্রেপ্তার ◈ হাসিনার ফেরিওয়ালা যখন প্রিয়াঙ্কা ◈ সমাজের উচ্চ পর্যায়ের যারা দুর্ঘটনা ঘটায় তাদের বিচার হয় না: উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ◈ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ ◈ সন্দেহজনকভাবে অবসরপ্রাপ্ত সচিব ইসমাইল বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার

প্রকাশিত : ২৬ মে, ২০২৩, ০৫:৩১ বিকাল
আপডেট : ২৬ মে, ২০২৩, ০৫:৩৩ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

গৃহিণী থেকে বৃহৎ সিটির নগরমাতা জায়েদা খাতুন

জায়েদা খাতুন ও তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম

এ এইচ সবুজ, গাজীপুর: আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ সিটি করপোরেশন গাজীপুর। আর এই সিটির নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী গৃহিনী জায়েদা খাতুনকে নিয়ে দেশবাসী তথা নগরের সর্বত্রই মানুষের মাঝে কৌতূহলের অন্ত নেই। অনিন্দ্য এক বিজয়ের স্বাক্ষী হলেন গাজীপুর নগরীর মানুষ। ভোটের মাধ্যমে তারা বেছে নিলেন আগামী দিনের নগর অধিপতিকে। এখন সবার মনের ভেতর একটাই প্রশ্ন- কে এই জায়েদা খাতুন? অনেকেই তার সম্পর্কে জানতে চান। এখন বলছি জননন্দিত এই নগরমাতা সম্পর্কে।

নতুন নগরমাতা জায়েদা খাতুন: একইসঙ্গে তিনি সবচেয়ে বেশি লোকের বসবাস গাজীপুর সিটির নির্বাচিত প্রথম নারী নগরমাতা ও দেশের দ্বিতীয় নারী নগরমাতা। এছাড়াও তিনি সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের গর্ভধারিণী রত্নগর্ভা মা। জায়েদা খাতুনের স্বামীর নাম মরহুম মো. মিজানুর রহমান। তার স্বামীর বাড়ি জেলার কালীগঞ্জের দূবার্টি গ্রামে। তিনি ৫ বছর আগে মারা গেছেন। জায়েদা খাতুনের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে জয়দেবপুরের কানাইয়া গ্রামে। ১৯৬২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়। গৃহিণী হিসেবেই স্বামীর ঘর সামলানো প্রধানতম কাজ ছিলো এই স্বশিক্ষিত ও স্বল্পভাষী মানুষটির। 

স্থানীয়রা বলছেন, রাজনীতির মারপ্যাঁচে অনভ্যস্ত জায়েদা খাতুন চৌকাঠ পেরোননি কোনদিন। এলাকায় জনদরদি হিসেবে পরিচিত তিনি। শিক্ষার্থীসহ গরিব-দুঃখী মানুষকে বরাবরই আর্থিক সহায়তা করেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানেও সহায়তা করেন তিনি। সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমসহ তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছেন। তবে এই মেয়র জায়েদা খাতুনের বিরুদ্ধে নেই কোন মামলার অভিযোগ।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে গাজীপুর সিটির তৃতীয় মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী জায়েদা খাতুন। জীবনের প্রথম নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেই বাজিমাত করেছেন এ প্রার্থী। গৃহিণী থেকে একটি নগরীর দায়িত্ব নিতে যাওয়া জায়েদা হারিয়েছেন ক্ষমতাসীন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকেও। নির্বাচন তো দূরের কথা কোন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেননি তিনি। এমনকি রাজনীতি বা সামাজিক কোন ক্ষেত্রে তার নাম শোনাও যায়নি। জায়েদা খাতুনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় ও সাবেক মেয়র। ২০১৮ সালে তিনি বিএনপির প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। তবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ ওঠায় তিনি মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। 

জায়েদার নির্বাচনী ইশতেহার: মহানগরের উন্নয়ন ও নগরবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন জায়েদা খাতুন। নির্বাচিত হলে পাঁচ বছরের জন্য হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের ঘোষণা দেন। পাশাপাশি তার ছেলের অসমাপ্ত কাজ শেষ করারও অঙ্গীকার করেন। এছাড়াও সেখানে নানা উন্নয়ন কার্যক্রমের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়াও জায়েদা খাতুনের নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন ছেলে জাহাঙ্গীর আলম।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, জাহাঙ্গীর আলমের জন্যই পরিচিতি অর্জন এবং নির্বাচন-রাজনীতিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছেন জায়েদা খাতুন। এমনকি জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তাকেই ভিত্তি করে চমক দেখিয়েছেন মা জায়েদা খাতুন। নির্বাচনের দিন কানাইয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন জায়েদা খাতুন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, সত্যের জয় হবে ইনশাল্লাহ। 

দেশের প্রথম নারী সিটি মেয়র নারায়ণগঞ্জের সেলিনা হায়াৎ আইভী। ২০১১ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করে জয়ী হন তিনি। এরপর ২০২৩ সালে দেশের দ্বিতীয় নারী মেয়র হলেন জায়েদা খাতুন। এদিকে গাজীপুরবাসি পেল তাদের প্রথম নগরমাতা।

গাজীপুরবাসীর উল্লাস: শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শেষ হয়েছে গাজীপুর সিটির নির্বাচন। আর প্রথম নারী মেয়র পেয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে নগরবাসী। সরেজমিনে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টায় ফল ঘোষণার পর রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের বাইরে ও বিভিন্ন এলাকায় বিজয় মিছিল বের করতে দেখা গেছে জায়েদার কর্মী সমর্থকদের। এসময় তাদের ঘড়ি ঘড়ি স্লোগানে উল্লাসে মেতে উঠতে দেখা যায়।

জাহাঙ্গীর আলমের প্রতিক্রিয়া: নতুন মেয়র ঘোষণা হওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জায়েদার ছেলে ও সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গাজীপুরের নির্বাচনে নৌকার জয় হয়েছে, ব্যক্তির পরাজয় হয়েছে। 

তিনি আরো বলেন, আমি মায়ের কর্মী হিসেবে তার কাজে সহযোগিতা করব, আমি আমার মেয়র থাকাকালীন অভিজ্ঞতা দিয়ে গাজীপুরের জন্য কাজ করব। মায়ের সঙ্গে থেকে গাজীপুরকে পরিকল্পিত নগরী করে দেব। কোন সন্ত্রাসীর কাছে মাথা নত করবো না।

৪৮০ কেন্দ্রের ভোটের প্রাপ্ত ফল: গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জায়েদা খাতুন ঘড়ি প্রতীকে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়েছেন। আর আজমত উল্লা খান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। তবে অন্য কোন প্রার্থী এই দুইজনের ভোটের কাছাকাছি ছিলেন না।

প্রতিনিধি/একে

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়