শিরোনাম
◈ কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কার, হল খুলবে ২ মে ◈ ইরানে ৮ পাকিস্তানিকে হত্যা, জবাব চায় ইসলামাবাদ ◈ আরাকান আর্মির বাধায় তিন মাস ধরে বন্ধ ইয়াঙ্গুন-টেকনাফ পণ্য আমদানি, রাজস্ব ঘাটতি ২৪৮ কোটি টাকা ◈ স্প‌্যা‌নিশ লি‌গে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের জয় ◈ ১০ জুন বাংলা‌দেশ - সিঙ্গাপুর ম্যাচ, ২২ মের মধ্যে জাতীয় স্টেডিয়াম প্রস্তুত চায় বাফুফে ◈ বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজ সম্প্রচার নিয়ে অনিশ্চয়তা, শেষ ভরসা বিটিভি?  ◈ তোফায়েল আহমেদের মৃত্যুর খবরটি গুজব! ◈ বাংলাদেশের বিএনপিকে নিয়ে ভারত এখন কী ভাবছে? ◈ ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে: টিউলিপ ◈ গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি: ঝুঁকিতে নতুন বিনিয়োগ?

প্রকাশিত : ১৩ এপ্রিল, ২০২৫, ০৯:৪৫ রাত
আপডেট : ১৫ এপ্রিল, ২০২৫, ১১:০২ দুপুর

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর দ্রুত সংস্কারের তাগিদ

মহসিন কবির: আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শনিবার (১২ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে বৈঠকে এ তাগিদ দেন তিনি। 

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা চলতি বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলেন। বৈঠকের পর রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমনটি জানানো হয়। তবে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি একাধিকবার সংশোধন করায় নির্বাচনের সময়কাল নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। 

গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ৫৭ মিনিটে প্রেস উইংয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঐকমত্য কমিশনের বরাত দিয়ে জানানো হয়, ‘আগামী ডিসেম্বর মাসে জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।’ রাত ৯টা ১৩ মিনিটে তাতে সংশোধনী আনা হয়। এর পর রাত ৯টা ২১ মিনিটে সংশোধনীতে প্রেস উইং জানায়, ভুলবশত কেবল ডিসেম্বর মাস উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে তাগিদ দিয়েছেন ড. ইউনূস।

নির্বাচনের এই সময়সীমা নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, সর্বশেষ আমরা যখন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করি, তখন তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা তাঁকে বিষয়টি জনগণের সামনে উপস্থাপন করার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু তিনি সেটি না করে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের সুরে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে নানা কথা বলছেন। এ অবস্থায় আমরা আবারও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করব। আগামী বুধবার তাঁর সঙ্গে বৈঠক শেষে এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে।

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ড. ইউনূস চার মাস ধরেই বলে আসছেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কিছু নেই। নির্বাচন ওই সময়সীমাতেই হবে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুধু ডিসেম্বর ভুলবশত উল্লেখ করা হয়েছিল।

প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও রাত পৌনে ৯টার দিকে জানানো হয়েছিল, ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনে সংস্কার সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়েছেন ড. ইউনূস। ১৮ মিনিট পর তা সংশোধন করে জানানো হয়, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘প্রেস উইংয়ের বক্তব্যে আমি খুব বেশি অবাক হইনি। কারণ, আগেও প্রধান উপদেষ্টা এক রকম কথা বলার পর তাঁর প্রেস উইং ভিন্ন কথা বলেছে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে। এবারও সে রকম ঘটনা ঘটল।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পর সরকারের দায়িত্ব নেওয়া ড. ইউনূস ঐকমত্য কমিশনেরও সভাপতি। গত ১২ ফেব্রুয়ারি তাঁর নেতৃত্বে ছয় মাস মেয়াদি এ কমিশন গঠিত হয়। আগে গঠিত পাঁচ সংস্কার কমিশনের ১৬৬ সুপারিশে ইতোমধ্যে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। এখন এসব দলের সঙ্গে চলছে আলোচনা। আগামী বৃহস্পতিবার বিএনপির সঙ্গে আলোচনার কথা রয়েছে। নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবিতে এর আগের দিন ১৬ এপ্রিল ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন দলটির নেতারা।

গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে সরকারপ্রধানের সঙ্গে ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেন আলী রীয়াজ ও বদিউল আলম মজুমদার। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। তিনি সমকালকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সময় নষ্ট না করে দ্রুত সংস্কারকাজ শেষ করতে বলেছেন। ঐকমত্য কমিশনের বরাত দিয়ে প্রথম সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুধু ডিসেম্বর মাস উল্লেখের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে বিভ্রান্তির কিছুই নেই।’

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ঐকমত্য কমিশনের প্রথম সভায় সরকারপ্রধান জানিয়েছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যেসব সুপারিশে একমত হবে, তা নিয়ে তৈরি হবে জুলাই সনদ। এর ভিত্তিতেই বাস্তবায়ন করা হবে সংস্কারের সুপারিশ।

এর আগে গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রথমবারের মতো ড. ইউনূস জানিয়েছিলেন, ছোট সংস্কার হলে আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। বড় সংস্কার হলে নির্বাচন হবে ২০২৬ সালের জুনে। পরের চার মাসে তিনি দেশে-বিদেশে একই কথা বলেছেন।

বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন নিশ্চিত করতে দলটির কয়েক নেতা আন্দোলনের কথাও বলেছেন। দলটির ভাষ্য, নির্বাচন বিলম্বের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। প্রতিদিনই বিএনপি নেতারা বলছেন, স্থিতিশীলতার জন্য নির্বাচন প্রয়োজন।

জামায়াতে ইসলামী আগে সংস্কারে জোর দিলেও সম্প্রতি বলেছে, তারাও নির্বাচনের রোডম্যাপ চায়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতাদের উদ্যোগে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অবশ্য এখনও সংস্কারে জোর দিচ্ছে।

ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, আগামী মাসের প্রথম দিকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম দফার সংলাপ শেষ হবে। দলগুলো যেসব সুপারিশে একমত হয়নি, সেগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। এর পর দ্বিতীয় দফার সংলাপ হবে। আগামী জুলাই-আগস্টের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হবে। তার পর সংস্কার বাস্তবায়ন শুরু করবে সরকার।

গতকালের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে ঐকমত্য কমিশন জানায়, সংস্কারের জন্য জনমত যাচাই এবং জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার গতকাল রাতে গণমা্যেমকে বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস। বৈঠকে তিনি আমাদের কাছে সংস্কার কার্যক্রমের খোঁজখবর নেন। জানানোর পরে তিনি এটি দ্রুত শেষ করার তাগিদ দেন।’

প্রেস উইংয়ের বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার তাগিদে আমার কাছে মনে হয়েছে, তিনি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের ব্যাপারে উদগ্রীব। আর সেভাবেই সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে বলেছেন।’

জামা‌য়াতের সহকারী সেক্রেটা‌রি জেনারেল আবদুল হা‌লিম গণমাধ্যমকে বলে‌ন, নির্বাচন বিল‌ম্বিত হোক তা জামায়াত চায় না। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের যে প্রতিশ্রু‌তি সরকারপ্রধান দিয়েছেন, এ সময়ের মধ্যে ভোট হতে হবে।

জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এন‌সি‌পি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আ‌রিফুল ইসলাম আদীব গণমাধ্যমকে বলে‌ন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের যে সময়সীমা সরকারপ্রধান দিয়েছেন,  এতে দ্বিমত নেই। তবে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। সং‌বিধান, বিচার বিভাগ ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার হতে হবে। নির্বাচন ক‌মিশনের আচরণ নিরপেক্ষ নয়। তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।

রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- বাংলাদেশ জাসদ ও জাকের পার্টির পৃথক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।  জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে এসব আলোচনা হয়। বাংলাদেশ জাসদের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান। ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন ইন্দু নন্দ দত্ত, মুশতাক হোসেন, এটিএম মহব্বত আলী প্রমুখ। অন্যদিকে, জাকের পার্টির পক্ষে আলোচনায় নেতৃত্ব দেন মহাসচিব শামীম হায়দার। প্রতিনিধি দলে ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া, রাজনৈতিক উপদেষ্টা এজাজুর রসুল, অতিরিক্ত মহাসচিব মুরাদ হোসেন জামাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুন্নেছা জামান রেণু প্রমুখ।

আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। এ সময় অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এসেছে, এটি মূলত জনগণের দাবি। মে মাসের মধ্যভাগে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষ করে দ্বিতীয় পর্যায়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঐকমত্য কমিশন রাষ্ট্র সংস্কারের একটি সুনির্দিষ্ট পথ খুঁজে বের করতে পারবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে। সংবিধান, জনপ্রশাসন, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমনÑ এই পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৯টি দলের মধ্যে ৩২টি দল মতামত দিয়েছে। কমিশন ২০ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে এবং ইতোমধ্যে ৮টি দলের সঙ্গে আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়