শিরোনাম
◈ বাংলাদেশে চালু হলো স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা, খরচ পড়বে  কত? ◈ ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে দেশের বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না: বাণিজ্য উপদেষ্টা বশিরউদ্দীন ◈ ড. ইউনূসের অনুরোধ রাখলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ◈ সৌদি আরবে ১৪টি নতুন তেল-গ্যাস খনির সন্ধান ◈ চীন বাদে সব দেশের ওপর নতুন শুল্ক স্থগিত করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ◈ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল: বাংলাদেশ না ভারত কে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে? ◈ বেকারদের সুখবর দিলেন বিডা চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ◈ এনসিপির সঙ্গে হেফাজতের বৈঠক, ৪ বিষয়ে একমত প্রকাশ ◈ এবার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ পেলেন খলিলুর রহমান ◈ যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী কী পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ, কী কী রপ্তানি করে

প্রকাশিত : ০৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:৪০ দুপুর
আপডেট : ০৯ এপ্রিল, ২০২৫, ০৬:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে একজোট হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো

মহসিন কবির: নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একেক সময় একেক ধরনের বক্তব্যে কেউ আস্থা রাখতে পারছে না। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায় ৫২টি রাজনৈতিক দল। দলগুলোর দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতেই হবে। এখানে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এজন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চান তারা। তা না হলে এপ্রিলের শেষদিকে রাজপথে নামার কর্মসূচি দেওয়া হবে। এ নিয়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপি ও তার মিত্রদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। 

এ বছরের ডিসেম্বরে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে ঐকমত্য হয়েছে বিএনপি ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।  শনিবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠকে এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণের কথা জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। রাত ৮ থেকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা, গণহত্যার বিচার এবং সংস্কার ও সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা হয়।

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমানের নেতৃত্বে সদস্যের প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন- নায়েবে আমির ড. আহমদ আবদুল কাদের, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী ও অর্থ সম্পাদক মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী।

বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা যেমন সংস্কার চাই, আমরা গণহত্যার বিচার চাই; কিন্তু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া উত্তরণের বিষয়টি আমরা সর্বাগ্রে বিবেচেনা করতে চাই। আমাদের জোরালো দাবি প্রধান উপদেষ্টা অবশ্যই দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দেবেন যাতে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা যায়।

তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের দাবির সঙ্গে তারা (হেফাজতে ইসলাম) একমত হয়েছেন। সে জন্য হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এবং তার অন্তর্ভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো

সূত্র জানায়, বিএনপিসহ ৫২টি (নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত) রাজনৈতিক দল চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে একমত হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দিন-তারিখসহ একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ চায় এসব দল। এ দাবিতেই প্রয়োজনে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার বিষয়েও ঐকমত্য হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দলের ভূমিকা কি হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। যদিও এসব দলগুলোও প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে।

দলগুলোর শীর্ষ নেতারা জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সময় সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছেন মাত্র। কিন্তু তাতে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই। এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে কি ধরনের সংস্কার করা হবে, সেজন্য কতটা সময় প্রয়োজন, তাও স্পষ্ট নয়। এ অবস্থায় নেতারা প্রত্যাশা করেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নির্বাচনের সময় সুনির্দিষ্ট করে এপ্রিলের শুরুতে সরকার একটি রোডম্যাপ দেবে। 

এদিকে সরকারের প্রায় ৮ মাস শেষ হয়েছে, অথচ নির্বাচন নিয়ে কোনো কিছু দৃশ্যমান নয়। এ কারণে সন্দেহের মাত্রা আরও বাড়ছে। তবে সরকারের উচিত হবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সন্দেহ ও অনাস্থা যাতে তৈরি না হয়, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন পিছিয়ে দিতে নানা ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু কোনোভাবে কোনো চক্রান্ত সফল হতে দেওয়া হবে না। রুখে দেওয়া হবে। দেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ মেনে নেওয়া হবে না। অনির্দিষ্টকালের জন্য সংস্কার হতে পারে না। বিএনপি এখন রাস্তায় নামে না। কিন্তু দল ও দেশের জনগণের স্বার্থে আঘাত এলে আবার মাঠে নামবে।

এ প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছেন, দ্রুত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা এখন সব রাজনৈতিক দলের দাবি। দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে সংসদ ও সরকার গঠন করবে। নির্বাচিত সরকার আগামী দিনে মানুষের আশা পূরণ করবে।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, অহেতুক কোনো বিলম্ব না করে জাতির আশা-আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ করতে যতটুকু সময়ের প্রয়োজন, সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার সম্পূর্ণ করে অবিলম্বে নির্বাচনের তারিখ ও রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত।

এ প্রসঙ্গে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা বলেছি নির্বাচনও দরকার, প্রয়োজনীয় সংস্কারও হওয়া দরকার। তবে যৌক্তিক সময় মানে অস্পষ্ট বিষয় নয়। এটা লাগামহীন কোনো বিষয়ও নয়। অনেকে মনে করেন, আমরা সংস্কার চাই, নির্বাচন চাই না-এটা ঠিক নয়। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন না হলে ১৪, ১৮ ও ২৪ এর নির্বাচনে যা হয়েছে-ফের সেগুলো হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে।’

তিনি বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন-এ কথার মধ্যে একটা তাৎপর্য আছে। এক মাস বা দুমাস সময় বেশি লাগলে এতে কি আসে যায়। রাজনৈতিক দলগুলো একমত থাকলে এটি কোনো সমস্যা নয়।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, কবে নাগাদ নির্বাচন হবে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ হলে সবার জন্য ভালো হতো। সুনির্দিষ্ট হলে সংশয় হয়তো কেটে যেত।

১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেছেন, আমাদের জোট বা দলের অবস্থান হলো দ্রুত নির্বাচন। নির্বাচন দেরি হলে নতুন নতুন সংকট সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, কিছুদিনের মধ্যে সরকার যদি সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের রোডম্যাপ না দেয়, তাহলে অতীতের মতো সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচন আদায়ে যুগপৎভাবে আন্দোলনে নামব।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, আশা করছি সৃষ্ট অনাস্থা ও সন্দেহ দূর করার বিষয়ে সরকার একটা উদ্যোগ নেবে। তিনি মনে করেন, সরকারের মধ্যকার আলাপ-আলোচনা সম্পন্ন করে এ বছরের মধ্যই যাতে নির্বাচন হতে পারে, সরকার প্রধান সে ব্যাপারে দলগুলোকে আশ্বস্ত করবে। এরপরও কোনো কিছু স্পষ্ট না হলে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির জন্য রাজপথে নামার প্রয়োজন হতে পারে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা যে স্বল্প ও দীর্ঘ সংস্কারের কথা বলেছেন-সেখানে অনেক কিছু পরিষ্কার করেননি। সুতরাং এটা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বলেছে নির্বাচন ব্যবস্থা ভালো করার জন্য যা যা সংস্কার করা দরকার, তা করেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দেন এবং তা ২০২৫-এর মধ্যেই সম্ভব।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটা সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা হলে তা প্রধান উপদেষ্টার জন্য একটা সম্মানজনক বিষয় হতে পারে। ফলে নির্বাচনের সময়সীমা স্পষ্ট করা না হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হবে; যা কারও জন্যই মঙ্গলজনক হবে না।

তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার গণমাধ্যমকে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আমরা বলেছি সংস্কার সাপেক্ষে নির্বাচন। এছাড়া আগে গণপরিষদ নির্বাচন হওয়া দরকার। তিনি মনে করেন, নির্বাচনি রোডম্যাপ ইতোমধ্যে ঘোষিত হয়েছে। কারণ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বারবার বলছেন-ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তার মানে রোডম্যাপ আছে, কিন্তু সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হয়নি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়