মহসিন কবির: জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন (এনআইডি) নিয়ে দোটানায় রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি কার অধীনে এনআইডি থাকবে। নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ এনআইডি সেবা নির্বাচন কমিশন থেকে সরিয়ে ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন’ নামে নতুন একটি পৃথক কমিশনের অধীনে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে সরকার। তবে সরকারের সে প্রচেষ্টায় আবারও বাদ সাধছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনআইডি শাখার কর্মকর্তারা জানান, এনআইডি সেবা ইসি থেকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা ঠেকাতে তারা আন্দোলনে নেমেছেন। দাবি না মানা হলে প্রথমে অর্ধদিবস কর্মবিরতি, এরপর পূর্ণদিবস ধর্মঘট করা হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন তারা। তাতেও দাবি আদায় না হলে সারাদেশে নির্বাচন কমিশনের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন তারা।
এনআইডি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন থেকে সরিয়ে নেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। তবে কীভাবে এটি হতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরের সামনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের দাবি নিয়ে এলে সিইসি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, আমরা লিখিতভাবে সরকারকে জানাবো, এনআইডি কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের অধীনেই থাকা উচিত। জরুরি ভিত্তিতে এই বিষয়টি সরকারকে জানানো হবে। আমাদের যখন মিটিংয়ে ডাকা হয়েছে, তখন আমরা এই বিষয়টি জানতে পেরেছি। তবে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে বলে আমরা জানি না।
তিনি বলেন, সরকার হয়তো মনে করছে, একটি জায়গা থেকে সার্ভিস দেওয়া হবে। তবে আমরা শুনেছিলাম, নির্বাচন কমিশনের অধীনেই এই কার্যক্রম চলবে।
নির্বাচন কমিশন বলছে, দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকদের এ সেবাটি নির্বাচন কমিশনই দিয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে কমিশনের দক্ষ জনবলও রয়েছে। কিন্তু সেসব বিবেচনায় না নিয়ে বিগত সরকার ইসি থেকে এনআইডি সেবা সরিয়ে নিতে আইন পাস করেও ব্যর্থ হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় অন্তর্বর্তী সরকারও একই পথে হাঁটছে। ফলে সেবাটি নিজেদের কাছে রাখতে সরকারকে আবারও চিঠি দেওয়া হবে।
বর্তমানে এনআইডি কার্যক্রম ইসির অধীনে এবং জন্মনিবন্ধন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের আলোকে জন্মনিবন্ধন ও এনআইডি নিয়ে পৃথক একটি কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। শুধু তা-ই নয়, বিয়ে, বিয়েবিচ্ছেদ ও দত্তকনিবন্ধন এবং মৃত্যুনিবন্ধনও হবে প্রস্তাবিত ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন কমিশন’ নামক এ সংস্থার অধীনে। নাগরিকদের একই ছাতার নিচে নিবন্ধন সংক্রান্ত সব সেবা দিতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সে লক্ষ্যে সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন শীর্ষক একটি চিঠি নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবকে পাঠানো হয়।
এতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়া প্রণয়ন সময়োপযোগী। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের আওতাধীন না রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করা সমীচীন। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্মনিবন্ধন সনদ, জন্মনিবন্ধন সনদের ভিত্তিতে এনআইডি এবং এনআইডির ভিত্তিতে পাসপোর্ট প্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় অনাবশ্যক জটিলতা ও জনদুর্ভোগ পরিহার করা আবশ্যক।
এ উদ্দেশ্যে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সহিত আলোচনাপূর্বক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ পরিমার্জন করে উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে উপস্থাপন করা যেতে পারে।
সূত্র জানায়, এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণে সিদ্ধান্ত দেন। আর সে সিদ্ধান্তের আলোকেই নতুন কমিশন গঠন ও নিবন্ধন সংক্রান্ত নাগরিক সেবা কার্যক্রম পরিচালনার দিকে এগোচ্ছে সরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মনির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ করেছেন তা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পর চূড়ান্ত করবে। এর আগে তড়িঘড়ি করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া মানেই কোনো এক পক্ষের স্বার্থ এখানে রয়েছে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।শুধু তাই নয়, প্রধান নির্বাচন কমিশনারও (সিইসি) এনআইডিকে ইসি থেকে হাতছাড়া করতে রাজি নন।