শিরোনাম
◈ ফের নতুন ভাইরাসের সন্ধান, সতর্ক করলেন বিজ্ঞানীরা  ◈ মহাসড়কে বাস ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় ৩ ডাকাত গ্রেফতার (ভিডিও) ◈ বাংলাদেশকে ২৯ মিলিয়ন ডলার দেয়া নিয়ে মুখ খুলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ◈ 'সমঝোতার' ভিত্তিতে নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ ছয়টি পদে আলোচনায় যারা ◈ মিরপুরে এক রাতে ছয় স্থানে ডাকাতি, আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা (ভিডিও) ◈ স্যুট পড়ে এসির তাপমাত্রা কম রাখার প্রবণতা থেকে বের হতে হবে: জ্বালানি উপদেষ্টা ◈ সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ; ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত অর্ধশতাধিক (ভিডিও) ◈ জামায়াতের দাবি তাদের নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন হয়েছে: গোলাম মাওলা রনি (ভিডিও) ◈ ভারতের বিষাক্ত পানি ঢুকছে বাংলাদেশে: হুমকিতে জনস্বাস্থ্য ও কৃষি ◈ রগ, হাত-পা কাটা, জামায়েত ইসলামের কোন নীতি নেই :আ্যডভোকেট পাপিয়া (ভিডিও)

প্রকাশিত : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:২৮ দুপুর
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

নির্বাচনকে ফোকাসে রাখলেই হতে পারে জাতীয় ঐক্য, অন্যথায় বিবাদ বাড়বে

এল আর বাদল: রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাতীয় ঐকমত্য গঠন করতে হলে নির্বাচনকেই ফোকাস করতে হবে। অন্য কোনো ইস্যুকে সামনে এনে নির্বাচনে বিলম্ব করলে বিভেদ আরো বড়বে। তারা বলছেন দ্রুত নির্বাচনের জন্য যে সংস্কার প্রয়োজন আপাতত তাই করা উচিত সরকারের। সূত্র- ডয়েচেভেলে 

শনিবার বিকলে (১৫ ফেব্রুয়ারি) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের' সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো বৈঠকে বসে। কমিশন অন্যান্য স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গেও বৈঠক করবে। মূলত ছয়টি কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবকেই সামনে রেখে এই বৈঠক। তবে রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচনকে প্রাধান্য দিচ্ছে। 

বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা স্থানীয় সরকারের আগে জাতীয় নির্বাচন চাই। সরকার যত দ্রুত নির্বাচনের পথে হাঁটবে তত দ্রুত জাতীয় ঐকমত্য হবে। নির্বাচনের জন্য দ্রুত ন্যূনতম সংস্কার করে নিবাচন চাই আমরা।

কয়েকটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে। আর কোনো কোনো রাজনৈতিক দল আগে সংস্কার, পরে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা যা বললেন -

প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে  বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাসের প্রথম ইনিংস বা প্রথম অধ্যায় শেষ হয়েছে। আজ রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু হলো। প্রথম অধ্যায় পেরিয়ে দ্বিতীয় অধ্যায়ে সরকারের পদার্পণ হবে আগামীর জন্য নির্দেশনা। যেখানে নির্বাচন অয়োজনে থাকবে না কোনো প্রশ্ন।

বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি আন্তর্জাতিক বিশ্বের বিশ্বের সমর্থন কথা জানিয়ে তিনি বলেন, অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গিয়েও কোনো ফায়দা নিতে পারেনি ফ্যাসিস্টরা।

প্রতিজ্ঞা করি আমরা যেন গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের প্রতি অসম্মান না জানাই। যে কারণে তারা আত্মত্যাগ করেছিল সেটা যেন পরবর্তী সব প্রজন্ম মনে রাখে, তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে, তাদের আত্মত্যাগকে সার্থক করার জন্য আমরা সবাই মিলে সবরকম চেষ্টা করব, যেন তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারি, বলেন প্রফেসর ইউনূস।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তারা এ ত্যাগ না করলে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকলেও জবাব খোঁজার কোনো সুযোগ থাকতো না। প্রশ্ন আমাদের মনে যতটুকু ছিল, বহু বছর ধরে ছিল, কিন্তু প্রশ্ন করার সুযোগ পাইনি। অসংখ্য ছাত্র-জনতা আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা সেই সুযোগ পেয়েছি।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি জাতিসংঘের প্রতিবেদন এবং বাংলাদেশের প্রতি অ্যামেরিকাসহ সারা বিশ্বের সমর্থনের পর রাষ্ট্র গড়তে না পারা হবে ব্যর্থতা।

সংলাপ সফল হবে কীভাবে -

বিএনপি ও জামায়াতসহ ২৬টি রাজনৈতিক দলের ১০০ জন প্রতিনিধি এই বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। নানা ইস্যু থাকলেও সবচেয়ে আলোচনায় ছিল জুলাই চার্টার, সংস্কার, গণহত্যার বিচার ও জাতীয় নির্বাচন।

কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, নির্বাচনকে ফোকাসে রেখে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে হলে ঠিক যতটুকু সংস্কার করা প্রয়োজন ততটুকু করলেই জাতীয় ঐক্য হবে। আর এই নির্বাচন করতে রাজনৈতিক দলগুলো ঠিক যতটুকু সংস্কার চায় ততটুকু করা দরকার। বাকি সংস্কার নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দিতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সুফল নানা কারণে আমরা পাওয়ার জায়গা থেকে সড়ে গেছি। পরস্পরের মধ্যে একটা অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। তাই ঐকমত্যের সহজ পথ হলে, সরকার, রাজনৈতিক দল, ছাত্র সবার জায়গা থেকে যদি প্রত্যাশার মাত্রা কমিয়ে আনা যায়। এখনও যদি অনেক বড় বড় বিষয় বা ইস্যু নিয়ে আমরা ঐকমত্যের চেষ্টা করি, সেটা বিভেদকে আরো বাড়িয়ে দেবে। তারপরে যদি আস্থার সৃষ্টি হয়, ঐকমত্য হয় তাহলে ধীরে ধীরে আরো বড় বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাবে।

আমার মনে হয় এই সময়ে নির্বাচনকে ফোকাসে রাখা উচিত। রাষ্ট্রের দীর্ঘ মেয়াদি সংস্কারের যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে না। এই সংস্কার না হলে নির্বাচন করা যাবে না সেটা ভুল। একটি ভালো নির্বাচনের জন্য জন্য যা যা করা দরকার তা করলেই হলো। সংস্কারের চেয়ে বেশি প্রয়োজন নির্বাচনের সময় পুলিশ বাহিনীর যাতে কনফিডেন্স থাকে তার ব্যবস্থা করা। বলেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বড় বড় সংস্কার করে নির্বাচন করতে হবে এই দাবিগুলো ভেগ। গণহত্যার বিচার করে নির্বাচন করতে হবে। এখন বিচার কতদিনে করা যাবে, কার বিচার? কতজনের বিচার? এগুলোর জন্য তো বছরের পর বছর লেগে যাবে। নানান জন নানা কথা বলছেন। প্রত্যেকে তার পলিটিক্যল ইন্টারেস্টের জায়গা থেকে কথা বলছেন। যে যার সুবিধা চাইবে, সেটা খারাপ কিছু না। কিন্তু নির্বাচন টার্গেট হলে সবার কথায় তো হবে না। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মিনিমাম যেটুক সংস্কার না করলেই নয়, সেটুকু সংস্কার করে নির্বাচন দেয়া দরকার। এই বিষয়ে ঐকমত্য হবে বলে আশা করি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল মনে করেন, ঐকমত্যের ফোকাস কী হবে তার চেয়ে আমাদের ভাবা উচিত ঐকমত্য কিসে বাধাগ্রস্ত হবে, তা জানা। সেই বিষয়গুলো নিয়ে অযথা আলোচনা না করা। এই সরকার নির্বাচিত সরকার না। তারা তো চলে যাবে। কত সময় থাকবে জানি না। তবে নির্বাচিত সরকারের কাছে দ্রুত ক্ষমতা দিয়ে চলে যাওয়াই ভালো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, আসলে নির্বাচন ব্যবস্থাটা নিয়ে ঐকমত্য সবার আগে দরকার। সবার একমত হতে হবে, রেজিস্টার্ড দলগুলো কেউ নির্বাচন বর্জন করবে না। নির্বাচনে অংশ নেবে। সেটা টার্গেট করে আলাপ আলোচনা করলে দ্রুত সমাধানে পৌঁছা যাবে। এই সরকারের সামনে অনেক ইস্যু আছে। সংস্কারের ইস্যু আছে কিন্তু মূল বিষয় হলো নির্বাচন এবং সেটাকে কেন্দ্র করেই সব কিছু হলে ঐকমত্য হবে।

এদিকে, সংলাপ শুরুর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, জুলাই চার্টারের ওপর নির্ভর করবে আমাদের নির্বাচনটা কবে হবে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা হয়তো কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারব। আর পরে যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসবে, তারা বাকিগুলো বাস্তবায়ন করবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়