শিরোনাম
◈ সাবেক এমপি কালামের মুক্তি ঠেকাতে কারাফটকে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান ◈ দেশের ৪ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস! ◈ আন্দ্রে রাসেল ও ডেভিড ওয়ার্নারসহ ৫ বিদেশি আসছে রংপুরের হয়ে খেলতে  ◈ ভিনিসিয়ুসকে ১৩০ কোটি ইউরোর প্রস্তাব সৌদি ক্লাবের ◈ যুক্তরাষ্ট্রে মাঝ আকাশে বিমান-হেলিকপ্টার সংঘর্ষ, বহু হতাহতের আশঙ্কা (ভিডিও) ◈ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ তালিকা চূড়ান্ত ◈ ভারতে নিজাম হাজারীর আটকের বিষয়ে যা জানা গেল ◈ বিএনপির ১০ 'দুর্বলতা' তুলে ধরলেন পিনাকী ভট্টাচার্য ◈ সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান: দরপত্র জমা না দেওয়ার কারণ জানালো ২ কোম্পানি ◈ করদাতাদের জবাই করবেন না, সরকারের খরচ কমান: নাসিম মঞ্জুর

প্রকাশিত : ২৮ জানুয়ারী, ২০২৫, ১০:২০ দুপুর
আপডেট : ২৯ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৮:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভোটের আগে জোটের লড়াই

মহসিন কবির: জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জোটবদ্ধ হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। কিছু জোট আছে আবার জোটে নতুন দল অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। বড়দলগুলোকে ছোট দলকে কাছে টানার প্রতিযোগীতায় নেমেছে। বিএনপি সঙ্গে আন্দোলনে জোটবদ্ধ হচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুইদলের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। 
 
বৈঠকে ইসলামী শরিয়াহ বিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া ও ইসলাম বিরোধী কথা না বলাসহ ১০ বিষয়ে একমত হয়েছে বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।

যে সব বিষয়ে দুটি দল একমত হয়েছে-

১. আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ মুক্ত স্বাধীন সার্বভৌম টেকসই রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা।

২. দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি ও টাকা পাচারকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।

৩. ভোটাধিকারসহ সব মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা।

৪. ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

৫. দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং সব অধিকার বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করে নিয়ে আসা।

৬. আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী সব শক্তি দেশ পুনর্গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা।

৭. ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে আঘাত করে কথা না বলা।

৮. আগামীতে যেন আওয়ামী লীগের মতো আর কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে ব্যাপারে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকা।

৯. ইসলামী শরিয়াহ্বিরোধী কোন সিদ্ধান্ত না নেওয়া এবং ইসলাম বিরোধী কোনো কথা না বলা।

১০. প্রশাসনে এখনো বিদ্যমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের দ্রুত অপসারণ করা।

আওয়ামী লীগ ভোটে থাকতে পারবে না ধরে নিয়ে আসছে সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী বলয় গড়ার চেষ্টা করছে একসময়ের মিত্র জামায়াতে ইসলামী। ধর্মভিত্তিক দলের জোট এবং অন্যদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতার এ প্রচেষ্টা আটকাতে তৎপর বিএনপিও। জামায়াত যে দলগুলোর দিকে হাত বাড়াচ্ছে, বিএনপিও সেগুলোকে কাছে টানছে।

শেখ হাসিনার পতন ঘটানো গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বিএনপির প্রকাশ্য বিরোধ ও জামায়াতের বন্ধুভাব থাকলেও দু’পক্ষই যোগাযোগ রাখছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সূত্র এবং নেতারা সমকালকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

জামায়াত এবং চরমোনাইর পীরের ইসলামী আন্দোলনের দীর্ঘ আদর্শিক বিরোধ থাকলেও ২১ জানুয়ারি দু’দলের প্রধানের দেখা হয়। ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সঙ্গে বরিশালের চরমোনাই গিয়ে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানের সাক্ষাৎ নতুন আলোচনার জন্ম দেয়।

বিএনপির একাধিক নেতা একে ‘স্বাধীনতাবিরোধী এবং ফ্যাসিবাদের সহযোগীর মিলন’ আখ্যা দিয়ে কটাক্ষও করেন। সোমবার চরমোনাই পীরের সঙ্গে দেখা করতে দলটির কার্যালয়ে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সাক্ষাৎ এমন সময়ে হচ্ছে, যখন চরমোনাই পীর জামায়াতসহ অন্য ধর্মভিত্তিক দল নিয়ে ইসলামী জোট গঠনে সক্রিয় হয়েছেন। চাঁদাবাজি, দখলের জন্য বিএনপি নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করছেন। বিএনপি শাসনামলের ব্যর্থতার ফিরিস্তি দিয়ে দলটি ক্ষমতায় যেতে মরিয়া বলে প্রকাশ্যে সমালোচনা করছেন। 
যাদের নিয়ে জোটের চেষ্টা

মামুনুল হকের বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, আবদুল বাসিত আযাদের খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে নিয়ে জোট গঠনের চেষ্টা করছে জামায়াত এবং ইসলামী আন্দোলন। অন্য দুই নিবন্ধিত ধর্মভিত্তিক দল ইসলামী ঐক্যজোট এবং খেলাফত আন্দোলন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল। তাই দল দুটিকে জোটে রাখা হবে না। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সংশ্লিষ্ট অনিবন্ধিত নেজামে ইসলাম গত ১৮ ডিসেম্বর জামায়াত কার্যালয়ে গিয়ে বৈঠক করেন। এর আগে আগস্টের বৈঠকে ছিল খেলাফত মজলিসসহ অন্য ধর্মভিত্তিক দল। ছিল না চরমোনাই পীরের দল। 

বাংলাদেশ খেলাফতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, আদর্শিক পার্থক্য থাকলেও ইসলামী দলগুলোকে এক নির্বাচনী মঞ্চে আনতে চেষ্টা চলছে। জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, জমিয়ত, দুই খেলাফত একসঙ্গে আসতে কথা বলছে। সব দলই সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। তবে শুধু ইসলামী নয়, অন্য গণতান্ত্রিক এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর সঙ্গেও নির্বাচনী সমঝোতার আলাপ আছে।

দলগুলোর সূত্র জানিয়েছে, নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, ১২ দলীয় জোটকে বৃহত্তর সমঝোতায় কাছে টানার চেষ্টা করেছে জামায়াত। গত ১৫ আগস্ট জামায়াতের মহানগর কার্যালয়ে যান ১২ দলীয় জোটের নেতারা। এ জোটে রয়েছে জাতীয় পার্টি (জাফর), জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশ, বিকল্পধারার একাংশ, ইসলামী ঐক্য জোটের একাংশ, বাংলাদেশ জাতীয় দলসহ কয়েকটি দল।

১২ দলীয় জোট ইতোমধ্যে বিএনপির দিকে ভিড়ে ন্যূনতম সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের কথা বলছে। জোটের সমন্বয়ক এবং জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাকে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে সহায়তায় স্থানীয় নেতাকর্মীকে চিঠি দিয়ে নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি। 

অন্তর্বর্তী সরকার এবং অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের ঘনিষ্ঠ একটি দলের নেতা গণমাধ্যমকে বলেছেন, অন্য দলগুলো কাছে টানা এবং ধরে রাখার ক্ষমতা বিএনপিরই বেশি। বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে বিএনপির বিজয় প্রায় নিশ্চিত। 

ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, জয়ী হলে আন্দোলনের সঙ্গী দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার করবে। ভোটের মাঠে বিএনপির চেয়ে অনেক পিছিয়ে থাকা জামায়াত দলগুলোকে ৫ থেকে ১০ আসন ছাড়লেও বিএনপির কাছ থেকে একটি দুটি আসন পেলেও সংসদে যাওয়া অধিকতর নিশ্চিত । এ সমীকরণে দলগুলো জামায়াতের বদলে বিএনপির ডাকেই সাড়া দেবে।

ইতোমধ্যে এ বক্তব্যের প্রতিফলন দেখা গেছে জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় থাকা খেলাফত মজলিসের অবস্থানে। দলটি ২২ জানুয়ারি বিএনপির আমন্ত্রণে গুলশান কার্যালয়ে যায়। দ্রুত নির্বাচনসহ সাত দাবিতে ঐকমত্য পোষণ করে। গত ২৯ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফতের সম্মেলনে যোগ দিয়ে জামায়াতের আমির বলেছিলেন, ইসলামী দলগুলোর মাথায় আর কেউ কাঁঠাল ভেঙে খেতে পারবে না।

খেলাফতের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, বিএনপির ডাকে বৈঠকে গেলেও ইসলামী দলগুলোর জোট গঠন প্রচেষ্টা থেকে সরে দাঁড়াইনি। বিএনপির সঙ্গে কথা হয়েছে জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে। আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলগুলোর প্রতীক ভিন্ন হলেও প্রতি আসনে একক প্রার্থী রাখার চেষ্টা রয়েছে। 
২০১৮ সালের নির্বাচনে খেলাফতকে দুটি আসন ছেড়েছিল বিএনপি। 

২০২১ সালের মার্চে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতায় কর্মসূচিতে সহিংসতার মামলায় খেলাফত এবং জমিয়তের শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তার হন। ওই বছরের জুলাইয়ে খেলাফত মজলিস এবং জমিয়ত বিএনপির জোট ছাড়ার মাসখানেকের মধ্যে তাদের জামিন হয়। এতে স্পষ্ট হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের চাপেই বিএনপির জোট ছেড়েছিল দল দুটি। সংসদে যেতে বিএনপির সহযোগিতা প্রয়োজন– এ সমীকরণ থেকে পুরোনো মিত্রের সঙ্গে খেলাফত ফিরছে বলে রাজনৈতিক সূত্রের ভাষ্য। 

৫ আগস্টের পর বিএনপির সমালোচক ছিল গণঅধিকার পরিষদ। দলটির সঙ্গে জামায়াতের সমঝোতার কথা শোনা যাচ্ছিল। এ দলটিকেও পাশে টেনেছে বিএনপি। গণঅধিকার সভাপতি নুরকে পটুয়াখালী-৩ এবং সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ঝিনাইদহ-২ আসনে সহায়তা করতে অক্টোবরে বিএনপি চিঠি দেওয়ার পর অবস্থান বদলেছে। 

ছাত্র নেতৃত্বের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির রাজনৈতিক দল ফেব্রুয়ারিতে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। এ দল ভোটের রাজনীতিতে কতটা প্রভাব রাখবে, এর ওপরও নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনের জোট। ছাত্রনেতারা প্রকাশ্যে গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রশিবিরের সহযোগিতার কথা বলছেন। দুই সংগঠনেই এমন অনেক নেতা আছেন, যারা অতীতে শিবিরের রাজনীতি করেছেন। সেই তুলনায় ছাত্রদল, বিএনপির রাজনীতি করা আসা নেতাকর্মী সংখ্যায় কম। সংস্কারের পর নির্বাচন– ছাত্রদের এ অবস্থানকে সমর্থন করতে দেখা যাচ্ছে জামায়াতকে।

ছাত্রনেতারা আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে চান না। উপদেষ্টা মাহফুজ আলম প্রকাশ্যে ঘোষণায় জানিয়েছেন। জামায়াতের একজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকলে এক হিসাব, না থাকলে ভিন্ন। আওয়ামী লীগ না থাকলে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা বা জোটের সম্ভাবনা নেই। বরং বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার চেষ্টা করবে জামায়াত। ছাত্ররা যদি দল গঠনে সফল হয় এবং বিএনপির সঙ্গে যে বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক থাকে, তবে ছাত্রদের সঙ্গে জামায়াতের জোট না হলেও অপ্রকাশ্য নির্বাচনী সহযোগিতার সম্পর্ক থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়