শিরোনাম
◈ দলীয় কোনো কমিটিতে অন্য দলের কাউকে নেওয়া যাবে না: বিএনপি ◈ পাঠ্যবইয়ে আ’লীগ ‘সবচেয়ে বড় দল’, বিএনপির জন্ম ‘সামরিক শাসনামলে’ ◈ যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত হাসিনার দুর্নীতির ফিরিস্তি খুঁজতে ◈ নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংস্কারের বৈধতা দিতে পারব না: ফখরুল (ভিডিও) ◈ ভারতীয় জেলেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার: অভিযোগ প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের ◈ রাখাইনে জান্তাবাহিনীর বিমান হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত, পুড়েছে শতাধিক বাড়িঘর ◈ তামিম ইকবাল প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে আট হাজারি ক্লাবে  ◈ সমন্বয়ক সারজিসের ইলিয়াসকে উপদেষ্টা বানানোর দাবি, যা জানা গেল ◈ রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দিয়ে মিয়ানমারে জাতীয় ঐক্য সরকার জরুরি ◈ শেষ ওভারে ২৬ রান, সোহান তান্ডব ফরচুন বরিশালের বিরুদ্ধে রংপুরের দুর্দান্ত জয়

প্রকাশিত : ০৯ জানুয়ারী, ২০২৫, ১০:৫৩ দুপুর
আপডেট : ০৯ জানুয়ারী, ২০২৫, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

বিলুপ্ত হচ্ছে পৌরসভা, জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ আসছে সরকারি চাকুরিজীবীদের

এল আর বাদল : স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন প্রধান সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে দেশের অনেক পৌরসভা বিলুপ্তির সুপারিশ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেই সাথে সরকারি চাকুরিজীবীদের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে কাজ শুরুর কথাও জানিয়েছেন।

এছাড়া দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনের আইন বাতিল, সরাসরি মেয়র বা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ বন্ধসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হতে পারে বলেও জানিয়েছে কমিশন। সূত্র-বিবিসি বাংলা

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে শর্টকার্ট কোন পদ্ধতি নেই। তাই একে ঢেলে সাজাতে তৃণমূলত থেকে শুরু করে অনেকের মতামত আমরা গ্রহণ করছি। সেখানে এসব নানা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ উঠে এসেছে।

এই সংস্কার কমিশন সারাদেশের ৪৯ হাজার মানুষের মতামত নিয়ে চুড়ান্ত সুপারিশ পেশ করবে। আগামী ২৪শে ফেব্রুয়ারি চুড়ান্ত প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেয়ার কথাও ভাবছে কমিশন। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা এবং জেলা পরিষদের সব পদ থেকে চেয়ারম্যানদের অপসারণ করা হয়ছে।

যে কারণে বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানে সেবা নিতে গিয়ে অনেকে ভোগান্তিতে পড়ছে। এ অবস্থায় স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর করতে কেউ কেউ এসব প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনের কথাও বলছে।

তবে সংস্কার কমিশন এই প্রশ্নে এখনই সমাধান দেখছে না। কমিশন মনে করছে, সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা গেলে চাইলে একই দিনে স্থানীয় সরকারের সবগুলো প্রতিষ্ঠানে ভোট করা সম্ভব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর ইমেজ সংকট তৈরি হয়েছে, মানুষের আস্থা কমছে। গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে।

পৌরসভা বিলুপ্তির প্রস্তাব কেন?
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে বাংলাদেশে বর্তমানে দেশে ৩৩০টি পৌরসভা রয়েছে। এসব পৌরসভায় ৩০ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা কর্মচারি রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, পৌরসভা কর্মকর্তা কর্মচারিদের বেতন ভাতার একটা অংশ সরকার দিবে, বাকি অংশ পরিশোধ করতে হবে পৌরসভার নিজের আয় থেকে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজস্ব আয় পর্যাপ্ত না থাকায় সরকারি বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা দেওয়ার সামর্থ্য অধিকাংশ পৌরসভার নেই।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে বলেন, কিছু কিছু পৌরসভা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। পৌরসভা করতে লোকাল রিসোর্স লাগে। কিন্তু ওই সব পৌরসভা তাকিয়ে ছিল কেন্দ্রের দিকে।

মি. আমিনুজ্জামান বলেন, যখন শুধুমাত্র সরকার বা কেন্দ্রীয় অনুদানের দিকে যখন পৌরসভাগুলোকে পথ চেয়ে বসে থাকতে হয় তখন তা চালানো খুব কঠিন হয়ে পড়ে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের একশোরও বেশি পৌরসভা রয়েছে যারা বেতন ভাতা দিতে পারছে না। যে কারণে সে সব পৌরসভা কার্যত অচল রয়েছে।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, আর্থিকভাবে পুরোপুরি অচল পৌরসভার সংখ্যা একশোর কম না। যে সব পৌরসভা চলে না সেগুলো দেখে শুনে অ্যাসেমেন্ট করে বিলুপ্ত করার সুপারিশের পরিকল্পনা রয়েছে।

তবে সংস্কার কমিশন মনে করছে এক্ষেত্রে হঠাৎ করেই বিলুপ্ত করা যাবে না এসব পৌরসভা। বিলুপ্ত করার পর সেগুলো কি ইউনিয়ন নাকি উপজেলার অর্ন্তভুক্ত করতে হবে সেগুলোও নির্ধারণ করে বিলুপ্ত করার সুপারিশ করা হতে পারে। এখনই এই ধরনের সংস্কার করার পেছনে নিজেদের যুক্তি তুলে ধরেন কমিশন প্রধান অধ্যাপক আহমেদ।

বিবিসি বাংলাকে মি. আহমেদ বলেন, যেহেতু সরকার পৌরসভার নির্বাচিত পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে, কোন নির্বাচিত মেয়র নাই, সে কারণে এখন করলেই সবচেয়ে ভাল।

সরকারি চাকরিজীবীরাও প্রার্থী হতে পারবে?
স্থানীয় সরকার কিংবা জাতীয় নির্বাচন, বাংলাদেশের নির্বাচনের আইনে সরকারি চাকরিতে থেকে নির্বাচন করার কোন সুযোগ নেই। বর্তমান স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন যে সব সুপারিশ করার কথা ভাবছে সেখানে সরকারি চাকরিজীবীরাও ভোটে অংশ নেয়ার সুযোগ পেতে পারে।

কারণ হিসেবে সংস্কার কমিশনের যুক্তি হলো বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে যারা নির্বাচিত হন তাদের অনেকেই শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক থেকে পিছিয়ে থাকে। তাছাড়াও অনেকে জনপ্রতিনিধি বিষয়টিকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। এতে করে সেবার মান যেমন কমে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে, তেমনি অনেকেই জড়িয়ে পড়েন দুর্নীতিতে।

বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে স্থানীয় সরকার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বার উঠিয়ে দেয়া হবে। সরকারি বেসরকারি চাকরিজীবী সবার ক্ষেত্রে বার উঠিয়ে দেয়া হবে। সবাই নির্বাচন করত পারবে। তিনি মনে করেন, এতে শিক্ষিত ও ভালো কাউন্সিলর পাওয়ার সুযোগ পাবে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলো।

এছাড়াও সংসদ সদস্যরা যাতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে সে ব্যবস্থা করা, স্থানীয় সরকারে সংরক্ষিত নারী সদস্যদের ক্ষমতা বাড়ানো, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার বিধান বাদ দেয়াসহ বেশ কিছু সুপারিশ নিয়ে কাজ করার কথাও জানিয়েছে সংস্কার কমিশন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়