মহসিন কবির: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অন্য চার কমিশনারকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়। অফিসের সাজসজ্জার কাজ পুরোদমে চলছে। নতুন কমিশনের যোগদানের আগে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে নির্বাচন ভবনে। কোনো ব্যক্তি ভবনে প্রবেশ করতে চাইলে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছেন প্রধান ফটকের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।
রোববার (২৪ নভেম্বর) শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন শুরু করবেন নতুন কমিশন। তাই আগে থেকেই পূর্বপ্রস্তুতি নিয়েছে ইসি। এর আগে ইসি সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কৌতূহল ছিলো কারা আসছেন কমিশনে। সেই কৌতূহল কেটে গেছে।
জানা গেছে, সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নতুন করে রং করা হচ্ছে। সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে গাড়ি। ইসি ভবনের তৃতীয় তলায় সিইসির অফিস রুমে দেখা যায়, ডেকোরেশনের কাজ করছেন মিস্ত্রিরা। রুম এখনও পুরোপুরি তৈরি হয়নি।
ইসির পরিচালক (জনসংযোগ) মো. শরিফুল আলম গণমাধ্যমকে বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। দুই দিন ধরে কমিশনারদের অফিসকক্ষ প্রস্তুত করা হচ্ছে। এসে যেন তারা দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাস পর ৫ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ও চার নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করেন। এরপর গত ২৯ অক্টোবর ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটি গঠন করার পর নির্বাচন কমিশনে প্রতি পদের জন্য দুই প্রার্থীকে মনোনীত করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাবের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ফলে ২১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাব করে সার্চ কমিটি। এরপর রাষ্ট্রপতি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং ৪ নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ ।
নবগঠিত নির্বাচন কমিশন জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এই নতুন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করবে, জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে, এমনটিই আশা করি।’
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা আশা করি এই কমিশন কার্যকর ভূমিকা পালন করবে এবং একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং ভয়ভীতিহীন নির্বাচন করবে।’ এক্ষেত্রে প্রশাসনকে নিরপেক্ষ রাখার বিষয়টিকে নতুন কমিশনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন তিনি। প্রশাসনকে দলনিরপেক্ষভাবে সাজানোর পাশাপাশি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে, এমন বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ এ নেতার।
এদিকে নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের চ্যালেঞ্জ এবং অগ্রাধিকার কী হতে পারে, তা নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটের নামে বিগত তিনটি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে চরম তামাশা করা হয়েছে। ভোটের কথা বলা হলেও এসব নির্বাচনে জনগণ ছিল ভোটাধিকার বঞ্চিত। ইসি এবং ভোটের প্রতি রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষের আস্থা উঠে গেছে। সেজন্য ভোটের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানোই নতুন কমিশনের মূল কাজ হবে। মানুষকে ভোটে আনাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ। সেটি অর্জনে ইসির কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যন্ত কোনো স্তরে কর্তৃত্ববাদী কেউ থাকলে তাদের সরিয়ে প্রশাসন ঢেলে সাজাতে হবে কমিশনকে।
আপনার মতামত লিখুন :