মহসিন কবির : বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারের এই উদ্যোগে সমর্থন দেয়। তবে বিএনপি শুরু থেকেই সরকারকে সংস্কার ও নির্বাচনের জন্য যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা বলে আসছে। তবে জামায়াতের অবস্থান কিছুটা ভিন্ন, দলটি সংস্কারের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে কবে নাগাদ নির্বাচন হতে পারে সে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আভাস দেওয়া হয়নি। বিএনপি ইতোমধ্যে জোট দলের ৬ জনতে নিজ আসনে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছে। নেতাকর্মীদের বলেছেন তাদের সহযোগিতা করতে। অন্যান্য দলও যে যার মত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, তার সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের রূপরেখা চূড়ান্ত করেনি। তার সরকারের কাজ সবকিছু স্বাভাবিক করা এবং সংস্কার সম্পন্ন করা। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করবে অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময়সূচি (এখনই) টানা হবে না। আমাদের কাজ বিভিন্ন বিষয়ের নিষ্পত্তি করা ও নতুন সংস্কার এজেন্ডার বাস্তবায়ন।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে সার্চ কমিটি গঠন হয়ে গেছে। দু’ একদিনের মধ্যে তারা কাজ শুরু করবেন। আইন অনুযায়ী কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ পেশ করতে হবে।
ইসি গঠনে অনুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান। রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুজন বিশিষ্ট নাগরিক সদস্য হলেন- বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিন্নাতুন নেছা তাহমিদা বেগম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন এবং নির্বাচনি মালামাল সংগ্রহের মতো প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো আবারও করতে হবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে। এসব কার্যক্রম একসঙ্গে পুরোদমে চালালে আগামী ছয় মাসে তা শেষ করা সম্ভব বলে মনে করেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। ওইসব কাজ শেষ করার পর নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করতে পারবে নতুন নির্বাচন কমিশন। সাধারণত তফশিল ঘোষণার ৪৫-৬০ দিনের মধ্যে ভোটগ্রহণ হয়। সেক্ষেত্রে সরকার চাইলে আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো মতবিনিময়ের প্রয়োজন নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে আমরা সুস্পষ্ট মতামত নেবো।
জনগণ বিভ্রান্ত হয় এমন কথা না বলতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মানুষের মধ্যে নতুন যে স্বপ্ন তৈরি হয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে হলে সতর্ক থেকে এগোতে হবে। ধৈর্য ধরে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। জোর করে চাপিয়ে দেয়া বা জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া কোন সংস্কারই টেকশই হবে না। মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন যতো তারাতারি হবে রাষ্ট্রের পরিবর্তনও তারাতারি হবে। সবাই চাই সংস্কার দ্রুত হোক। বিএনপি কোন বিপ্লবী রাজনৈতিক দল নয়। তাই রাতারাতি বিপ্লব নয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্বাস করে বিএনপি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক বলেছেন, এখনো সময় চলে যায়নি। নির্বাচনের সঠিক তারিখ নির্ধারণ করুন। অনেকেই বাহানা করে আপনাকে বুঝাতে পারে ‘সংস্কার করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।’ কিন্তু সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের তারিখও ঘোষণা করুন। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন, যেখানে জনপ্রতিনিধিরা ক্ষমতায় আসবেন, সংসদে যাবেন। অভিজ্ঞ মানুষ দ্বারা দেশ পরিচালিত হবে। সেই সংসদে সংবিধান পরিবর্তন, পরিবর্ধন হবে- এটাই জনগণের চাওয়া আপনার কাছে।
যথাসম্ভব প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ শেষ করে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানিয়েছে ১২ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ এলডিপি।
জাকের পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার বলেছেন, ‘নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব দূর করতে হবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে ই- ভোটিং ও ব্লক চেইন টেকনোলজি প্রবর্তন করতে হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :