শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১১:১৮ দুপুর
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২:১৮ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কাজী হাবিবুল আউয়ালের যত বিতর্কিত মন্তব্য

এম এইচ বাচ্চু : অবশেষে পদত্যাগ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ পাঁচ কমিশনার। কয়েকবার পদত্যাগের দাবি উঠলেও তখন তারা পদত্যাগ করেননি। অনেকে মন্তব্য করেছেন, এই পদত্যাগ যদি তারা ২০২৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে করতেন, তাহলে তারা বিতর্কিত কম হতেন এবং সম্মান পেতেন। এখন পদত্যাগ করে অসম্মানিত হলেন। কারণ পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশিদা সুলতানা ও মো. আনিছুর রহমানের গাড়িতে জুতা নিক্ষেপ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর পদত্যাগ করার আগে সংবাদ সম্মেলনে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিতর্কিত হয়েছে। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে ব্যক্তির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে, দলের সঙ্গে নয়। সম্প্রতি ভেঙে দেওয়া সংসদের ২৯৯টি আসনে নির্বাচন প্রার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হয়েছে, দলের মধ্যে নয়। ২৯৯ আসনে এক হাজার ৯৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ২০২৪ সালে একদলীয় নির্বাচন হওয়ার কারণে কারচুপি বা সরকারিভাবে প্রভাবিত করার প্রয়োজনও ছিল না। নির্বাচন এক দলের ভেতরেই হয়েছে। বহুদলের মধ্যে হয়নি।

২০২৩ সালে ১ অক্টোবর বলেছেন, সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক ও সমালোচনা হতে পারে। অতীতেও হয়েছে। ৫০, ৬০, ৭০ বছরের ইতিহাস ঘাঁটলেও বিতর্ক পাওয়া যাবে। এমনকি ব্রিটিশ আমলের নির্বাচন নিয়েও কিছু কিছু বিতর্ক হয়েছে। তখন হয়তো মাত্রাটা কম ছিল।

কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, ‘আমরা যে নির্বাচনটি করতে যাচ্ছি, সেটার একটা বিশেষ দিক হচ্ছে, অভিযোগ বা বিতর্কের মাত্রাটা একটু অতিরিক্ত। ২০১৪ ও ২০১৮-এর চাপটা এসে আমাদের ওপর পড়েছে, এই নির্বাচন কমিশনের ওপর পড়েছে। আমরাও নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছি....মানুষের যে...। এগুলো সত্য হতে পারে, অসত্য হতে পারে, মিথ্যা হতে পারে, সত্য হতে পারে। আমরা সেদিকে যাচ্ছি না।’

২০২৩ সালে ৪ অক্টোবর বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে কে নির্বাচনে এল, কে এল না, সেটা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। ব্যাপকসংখ্যক ভোটার ভোট দিলেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা যাবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘ইসি নির্বাচনের লিগ্যালিটি (আইনগত দিক) দেখবে, নির্বাচনের লেজিটিমেসি (বৈধতা/ন্যায্যতা) নিয়ে মাথা ঘামাবে না।’

সিইসি বলেন, ‘যদি এক শতাংশ ভোট পড়ে এবং ৯৯ শতাংশ নাও পড়ে, আইনগতভাবে নির্বাচন সঠিক হবে। লেজিটিমেসির ব্যাপারটা ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু আইনত নির্বাচন সঠিক হবে। লেজিটেমেসি নিয়ে ইসি মাথা ঘামাবে না। ইসি দেখবে, ভোটটা অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে— এক শতাংশও যদি ভোট পড়ে এবং ভোটার যারা আসছে, তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি, তাদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে, তারা নির্বিঘ্ন ও স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

২০২৪ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলা জট প্রসঙ্গে সিইসি বলেছেন, এত মামলা কেন ঝুলে আছে, তা নিয়ে কোনো গবেষণা নেই। এই মামলাজটের কারণে কিছু লোকের লাভ হয়, তাই মামলাজট কীভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দিতে কেউ এগিয়ে আসে না।

২০২৪ সালে ২৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংবিধান স্থগিত না করেই যেভাবে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কার্যক্রম চলছে, তাতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচন কমিশনের ‘সাংবিধানিক সংকটে’ পড়ার বিষয়টি সামনে এনেছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর ১৯ দিন চুপ থাকলেও শনিবার সংবাদপত্রে কলাম লিখে সেই ‘সংকটের’ কথা তুলে ধরেছেন শেখ হাসিনার সময়ে দায়িত্ব নেওয়া হাবিবুল আউয়াল। তার ভাষায়, ‘বিপ্লবের উদ্দেশ্যসমূহকে এগিয়ে নিতে’ অসামরিক ফরমান জারি করে সংবিধান পুরোপুরি অথবা আংশিক স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

‘বিপ্লব ও ফরমান: সরকার ও সংবিধান’ শিরোনামে ওই কলাম লেখার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেছেন, আলোচনার জন্য কাউকে তিনি পাচ্ছেন না। তাই নির্বাচন কমিশন যে ‘সাংবিধানিক সংকটে’ পড়েছে, সেটা পত্রিকায় লিখে জনগণকে অবহিত করাই সমীচীন মনে করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংবিধান স্থগিত না করেই যেভাবে অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কার্যক্রম চলছে, তাতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচন কমিশনের ‘সাংবিধানিক সংকটে’ পড়ার বিষয়টি সামনে এনেছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।

২০২৪ সালে ২১ মে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে সিইসি বলেছেন, প্রথম ধাপের নির্বাচনে ৩৬ শতাংশ ভোট পড়েছিল। দ্বিতীয় ধাপে ভোটের হার কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সিইসি বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে ৩০ শতাংশ ভোটকে কখনোই খুব উৎসাহব্যঞ্জক মনে করেন না। ভোটের হার কম হওয়ার একটা প্রধান কারণ হতে পারে, দেশের একটা বড় রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে ভোট বর্জন করেছে এবং জনগণকে ভোট প্রদানেও নিরুৎসাহিত করেছে। যেকোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এ ধরনের চেষ্টা হতে পারে। পক্ষ–বিপক্ষ থাকতে পারে।

সিইসি বলেন, ‘আমাদের ভোট নিয়ে কোনো সংকট নেই। সংকটটি হচ্ছে রাজনীতিতে। আমি মনে করি, রাজনীতি যদি আরও সুস্থ ধারায় প্রবাহিত হয়, ভবিষ্যতে হয়তো ভোটার স্বল্পতার যে সমস্যাটুকু... এগুলো কাটিয়ে উঠবে।’

সিইসি বলেন, তিনি আশা করেন রাজনীতিতে যে সংকট রয়েছে, সেটা অবশ্যই একটা সময় কাটিয়ে ওঠা যাবে এবং সুস্থ ধারায় দেশের সামগ্রিক রাজনীতি প্রবাহিত হবে। ভোটাররা উৎসাহিত হবেন। আরও উৎসাহব্যঞ্জক পরিবেশে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসবেন।

২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন,  সরকারের তরফ থেকে সহযোগিতা না থাকলে নির্বাচন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সফল হবে না। তাদের সহযোগিতা পেলে নির্বাচনটা আরও বেশি সফল হবে।

তিনি বলেন, 'রাজনৈতিক দলগুলোর প্রজ্ঞা রয়েছে। তারা চিন্তা করবেন। রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে সুন্দর নির্বাচন হবে, এটা আমি বিশ্বাস করি না। প্রতিটি দল বলতে চাচ্ছে, রাজপথে দেখা হবে, রাজপথে শক্তি পরীক্ষা হবে। রাজপথে শক্তি দেখিয়ে সত্যিকারের যে গণতান্ত্রিক নির্বাচন সেটা হবে না।'

জাতীয় নির্বাচনের পর ২০২৪ সালে ১৮ জানুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুসম্পন্ন হয়েছে। জাতি একটি চলমান সংকট থেকে উঠে এসেছে, যেটা নিয়ে উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা ছিল। তবে এটি স্থায়ী সমাধান বলে তিনি মনে করেন না। কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, নির্বাচন তুলনামূলকভাবে ভালো হয়েছে। সংবাদপত্র পড়ে তিনি মূলত জেনে থাকেন। অনেকে সুনাম করেছে, অনেকে অপবাদ দিয়েছে। দুটোই বিবেচনায় নিতে হবে।

২০২২ সালে ৭ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, 'ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক সংকট প্রকট হবে না। ইভিএম নিয়ে কোনো সংকট দেখছি না। রাজনৈতিক অঙ্গনে যে সংকট দেখছি তা ইভিএম নিয়ে নয়, আরও মোটাদাগে সংকট। আমরা আশাকরি এই সংকট কেটে যাবে। যদি ফয়সালা হয় সব ভোট ব্যালটে হবে। রাজনৈতিকভাবে শতভাগ সমঝোতা যদি হয় অসুবিধা নেই। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।

২০২৩ সালে ২৭ নভেম্বর সিইস বলেছেন, দেশের গণতন্ত্রে মাঝে মাঝে ধাক্কা আসে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা ভাবতে হবে। একটি দেশ বা জাতি একটি প্রজন্মকে নিয়ে থেমে থাকবে না। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম আসতে থাকবে। আমেরিকার গণতন্ত্র আড়াইশো বছরের। বিলেতের গণতন্ত্র ৩শ’ থেকে ৪শ’ বছরের। বিলেতের ইতিহাস হয়তো দেড় হাজার থেকে দুই হাজার বছরের কিন্তু তাদের গণতন্ত্র টিকে আছে অন্তত ৩০০ বছর ধরে। আমাদের গণতন্ত্র কিন্তু নতুন। মাঝে মাঝে ধাক্কা আসে। সামরিক শাসন, গণঅভ্যুত্থান ইত্যাদি হয়ে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় এখনও স্থিরভাবে আমরা ৫০ বছর এগুতে পারিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়