রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরীক্ষার কেন্দ্রে পোঁছে দিচ্ছে রাবি শিক্ষকের স্কুটি। বুধবার (৩১ মে) সকালে ক্যাম্পাস জুড়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
শুধু আজ নয় ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে তিনদিন ধরে নিজের স্কুটি পিডিএফ টিমকে দিয়ে এমন মহানুভবতার এক পরিচয় দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এক শিক্ষক। ওই শিক্ষকের নাম হলেন ড. গোলাম কিবরিয়া ফেরদৌস। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দূরদূরান্ত থেকে আগত প্রতিবন্ধী ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রে পৌঁছানো থেকে শুরু করে তাদেরকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করতে কাজ করে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) টিম। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলাচল করতে কষ্ট হয় এমন শিক্ষার্থীদেরকে এই স্কুটি দিয়ে তাদেরকে নিদ্রিষ্ট কেন্দ্রে পৌঁছে দেন পিডিএফ টিমের সদস্যরা। পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের রিসিভ করে আবার অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে দেন তারা।
ময়মনসিংহ থেকে কলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছেন তৌফিক। তিনি দুচোখে কিছুই দেখতে পান না। তাকে এই স্কুটি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন’স কমপ্লেক্সে পৌঁছে দেন পিডিএফ সদস্যরা। স্কুটি সেবা পেয়ে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমার দুচোখ অন্ধ। আমি একাই ময়মনসিংহ থেকে এখানে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পিডিএফ সদস্যরা আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। আমার কাগজপত্র হারিয়ে ফেলেছিলাম। পিডিএফ সদস্যরা অল্প সময়ে কাগজ পত্র তুলে এবং শ্রুতি লেখক ব্যবস্থা করে স্কুটি দিয়ে দ্রুত কেন্দ্রে পৌঁছে দেন আমাকে। এসময় তিনি অসংখ্য ধন্যবাদ জানান পিডিএফ সদস্যদেরকে।
বগুড়া থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছেন তোফায়েল নামে এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমি অনেক দূর থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছি। এখানে আসার পর পিডিএফ সদস্যরা আমাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। হুইল চেয়ার করে আমাকে নিদ্রিষ্ট কেন্দ্র পৌঁছে দেন তারা।
শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন হাবিবা আক্তার নামের এক পিডিএফ সদস্য। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে তথ্য দিয়ে, কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকছে পিডিএফ সদস্যরা।
বিভিন্ন পরীক্ষার কেন্দ্রে আমাদের সদস্য কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের কাছ থেকে পাওয়া স্কুটি দিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিভিন্ন কেন্দ্রে পৌঁছে দিচ্ছে আমাদের সদস্যরা।
শিক্ষকের কাছ থেকে স্কুটি পেয়ে পিডিএফ সভাপতি আশিকুর রহমান সোহাগ বলেন, রাবি শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় আমাদের পিডিএফ স্বেচ্ছাসেবী সদস্যরা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, ও হুইলচেয়ার ব্যক্তিদের অতিদ্রুত কেন্দ্রে পোঁছে দেওয়ার জন্য আমাদের বিশেষ টিম সবসময় কাজ করে যাচ্ছে। পিডিএফ এর উপদেষ্টা ড.গোালাম কিবরিয়া ফিরদৌস স্যার আমাদেরকে স্কুটি দিয়ে সহযোগিতা করায় আমাদের কাজ অনেক সহজতর হয়ে গেছে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান পিডিএফ সভাপতি।
স্কুটি দিয়ে সহযোগিতার কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. গোলাম কিবরিয়া ফেরদৌস বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এখন আর সমাজের বোঝা নয়। প্রতিবছর রাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে এখানে প্রচুর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা আসে। ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে ক্যাম্পাসের অনেক রাস্তায় যানবাহন চলাচল করতে পারে না। আমার স্কুটির সামনে শিক্ষক লেখা রয়েছে ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমার গাড়ি চলাচল করলে বাঁধা দিবে না। যেসব প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হাঁটতে পারে না, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা চোখে দেখতে পায় না।
অনেক সময় তাদের কেন্দ্র অনেক দূর পরে তাদের কথা চিন্তা করেই আমার স্কুটি পিডিএফ টিমকে তিনদিনের জন্য দিয়েছি। এ স্কুটি দিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিভিন্ন কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে রাবির পিডিএফ টিম কাজ করছে।
এ অধ্যাপক আরও বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রতিবন্ধীবান্ধব। শুধু আমি নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের উচিত প্রতিবন্ধী পাশে দাঁড়ানো কারণ তাদের ছাড়া আমাদের সমাজ কখনো উন্নয়ন করা সম্ভব না। এসময় তিনি সকলকে পিডিএফ এর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
প্রতিনিধি/এসএ
আপনার মতামত লিখুন :