শিরোনাম
◈ সাবেক এমপি কালামের মুক্তি ঠেকাতে কারাফটকে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান ◈ দেশের ৪ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস! ◈ আন্দ্রে রাসেল ও ডেভিড ওয়ার্নারসহ ৫ বিদেশি আসছে রংপুরের হয়ে খেলতে  ◈ ভিনিসিয়ুসকে ১৩০ কোটি ইউরোর প্রস্তাব সৌদি ক্লাবের ◈ যুক্তরাষ্ট্রে মাঝ আকাশে বিমান-হেলিকপ্টার সংঘর্ষ, বহু হতাহতের আশঙ্কা (ভিডিও) ◈ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ তালিকা চূড়ান্ত ◈ ভারতে নিজাম হাজারীর আটকের বিষয়ে যা জানা গেল ◈ বিএনপির ১০ 'দুর্বলতা' তুলে ধরলেন পিনাকী ভট্টাচার্য ◈ সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান: দরপত্র জমা না দেওয়ার কারণ জানালো ২ কোম্পানি ◈ করদাতাদের জবাই করবেন না, সরকারের খরচ কমান: নাসিম মঞ্জুর

প্রকাশিত : ২৮ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৪:৫৮ দুপুর
আপডেট : ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫, ০১:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিভিন্ন দাবি আদায়ে অস্থির শিক্ষাখাত 

মহসিন কবির: শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাগ্রহণ করে। ক্ষমতাগ্রহণের পরই বিভিন্ন দাবি দাওয়ায় সামাল দিতে অস্থির বেসামাল হয় অন্তর্বর্তী সরকার। কিছু দাবি দাওয়া মনে নিয়ে আন্দোলন সামাল দেয়। কিন্তু একের পর এক দাবি চলতেই থাকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মানুষের অনেক দাবি আছে। কিন্তু আওয়ামী সরকারের কাছে জানাতে পারবো না। এখন সুযোগ হয়েছে, তারা রাস্তায় নেমেছে। এরমধ্যে শিক্ষা বেশি অস্থির রয়েছে। এখন মাদ্রাসা শিক্ষকরা চাকরি জাতীয় করণের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছেন।  

দাবি আদায়ে দিনের পর দিন কর্মসূচি পালন করলেও তার কার্যকর সমাধান না হওয়ায় বাড়ছে নানা জটিলতা। এরই মধ্যে জাতীয়করণ দাবিতে আন্দোলনরত ইবতেদায়ি শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার দুপুর দুটা পর্যন্ত দাবি পূরণের আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা। জাতীয়করণ দাবিতে তিনদিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকরাও।

বিভিন্ন দাবিতে গত দুদিন সড়ক অবরোধসহ বেশ সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি বহাল দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কার্যালয়ের সামনে কয়েক দিন ধরে নানা কর্মসূচি পালন করছে ভর্তিচ্ছুরা। গতকাল সোমবারও তারা ইউজিসির ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গুচ্ছভর্তি পদ্ধতিই বহাল রাখার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এদিকে নির্ধারিত সময়ে বই ছাপায় ব্যর্থতা, বইয়ে বিতর্কিত তথ্য ছাপা এবং পতিত সরকারের সুবিধাভোগীদের পৃষ্ঠপোষকতাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের মধ্যে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান রোববার ওএসডি হয়েছেন। তবে তাকে নতুন করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য জোর তৎপরতা চলছে। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

এছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ সত্ত্বেও তড়িঘড়ি করে বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ‘জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর’ পদে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ৩৫৩৪ নিয়োগ আদেশ দেওয়া নিয়েও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে নিয়োগ-বঞ্চিত ভুক্তভোগীদের রিটের প্রেক্ষিতে ওই নিয়োগ আদেশ স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। তবে এটি নিয়ে নতুন করে জটিলতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শিক্ষা খাতের বর্তমান অস্থিরতা সম্পর্কে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বালাদেশ (ইউট্যাব)-এর প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছেন, বর্তমান সরকার রাষ্ট্র মেরামতের দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতায় বসেছেন। কিন্তু তাদের আশপাশে সবাই বিগত ১৭ বছরের সুবিধাভোগীরা রয়ে গেছে। তাদেরকে নিয়ে জঞ্জাল সরাতে গেলে সরকারের জন্য কঠিন হবেই।

তিনি বলেন, সরকার এখনো লোক চিনতে পারছে না। যে কারণে বিভিন্ন জায়গায় ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে। তারা সরকারকে ভুলভাবে পরিচালিত করছে।

একইভাবে ফ্যাসিবাদের দোসররাই শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে অস্থিরতা সৃষ্টি এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জানা গেছে, বিভিন্ন দাবিতে রোববার সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত রাস্তা অবরোধসহ ঢাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় সাত কলেজ শিক্ষার্থীরা। এতে রাজধানীতে তীব্র যানজটসহ অস্থিরতা দেখা দেয়। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ সেশন থেকে ঢাবির অধীনে সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাবি প্রশাসন।

গতকাল সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা গতকালও রাস্তা অবরোধ করে ঢাবি প্রো-ভিসির পদত্যাগে আলটিমেটাম দেয়। সন্ধ্যার পর তারা পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে বৈঠকে বসেন।

গুচ্ছে থাকতে ভিসিদের নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের : ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় গুচ্ছ পদ্ধতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে অস্থিরতা চলছে সংশ্লিষ্ট মহলে। গুচ্ছ পদ্ধতি বহাল দাবিতে ভর্তিচ্ছুরা ইউজিসির সামনে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। গতকালও তারা ইউজিসির ফটকে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন। এমনই পরিস্থিতিতে গতকাল বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব শারমিনা নাসরিন স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে গুচ্ছে থাকতে ভিসিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গুচ্ছ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে একমত প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে যেসব অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে, তা দূর করতে সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ পদ্ধতির আরও উন্নতি সাধন করা হবে বলে পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে পিএসসির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া ৩৫৩৪ নিয়োগ স্থগিত করেছে হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী এবং বিচারপতি কে. এম. রাশেদুজ্জামান রাজার দ্বৈত বেঞ্চ এ নিয়োগ স্থগিত করে। এর ফলে ২৯ জানুয়ারি কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজসমূহের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর এবং ইন্সপেক্টর পদে ৩৫৩৪ জনের যোগদান আটকে গেল।

তবে এটি স্থায়ীভাবে যাতে বাতিল হয় সেই দাবি জানিয়েছেন ওই পরীক্ষায় বাদ পড়া ভুক্তভোগীরা। তাদের দাবি প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে ওই পরীক্ষায় টাকার বিনিময়ে অনেক ছাত্রলীগ নেতাসহ কম মেধাবীরা নিয়োগ পেয়েছেন। অন্যদিকে বহু মেধাবী প্রার্থীরা বাদ পড়েছেন। এই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল দাবিতে আরও রিট করার প্রস্তুতি চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা আমার দেশকে জানিয়েছেন।

এদিকে এনসিটির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, এনসিটিবিতে এখনও চলছে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর ও তাদের সুবিধাভোগীদের দাপট। আওয়ামী সরকার পতনের পর কৌশলে চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান ওই সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান। আর তার নেতৃত্বেই এনসিটিবিতে ফ্যাসিবাদের দোসরদের শক্ত অবস্থানের পাশাপাশি নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও ব্যর্থতার ঘটনা ঘটে।

বিশেষ করে পরিমার্জিত পাঠ্যবইয়েও ইতিহাস বিকৃতি ও বিতর্কিত তথ্য ছাপার ঘটনায় বিভিন্ন মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তার চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় রোববার তাকে ওএসডি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি পক্ষ জোর তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিতর্কিত এই ব্যক্তি নিয়োগ পেলে অস্থিরতা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও ওএসডি হওয়ার আগে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অসত্য বলে দাবি করেন অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়