মহসিন কবির: কয়েকটি শিক্ষাঙ্গনে ফের অশান্ত দেখা দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধীদের সঙ্গে কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় রাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন দাঙ্গা লাগানোর জন্য একটি পক্ষ অশান্ত করছেন শিক্ষাঙ্গন। মানিকগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধিদের মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ ছাত্রাবাসের সিট নবায়নের ধার্যকৃত ফি-কে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদল কর্মীদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রবিবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যার আগে ঘটনার সূত্রপাত হয়।
এর জেরে কলেজ ৩ দিনের বন্ধ ঘোষণা করে হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্রাবাস ছেড়ে নিজেদের বাড়িঘরে ফিরছেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ক্যাম্পাস ছাড়ার আগে শিক্ষার্থী কামরুল জানান, ছাত্রাবাসে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের হলের সিটের ফি কমানোর দাবি ছিল সম্পূর্ণ ন্যায্য। কিন্তু এই দাবিকে উপেক্ষা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে না বসে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিটিং করায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়। বিষয়টি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এরপর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) চারটি আবাসিক হলে পবিত্র কোরআন শরিফ পোড়ানোর ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। রোববার (১২ জানুয়ারি) বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা, ‘আল কোরআনের অপমান, সইবে নারে মুসলমান, আল কুরআনে আগুন দাওনি, দিয়েছ মুসলিমদের কলিজায়, ছাই চাপা আগুন বুকে নিয়েই রুখে দাঁড়াব আমরা, জান দিব তাও কোরআনের অবমাননা সইব না’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পবিত্র কোরআন পুড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই ষড়যন্ত্রকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে যোগ দেন ছাত্রশিবির, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর জন্য যারা চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ আমরা একত্রিত হয়েছি। কোরআন মাজিদ পৃথিবীর একমাত্র নির্ভুল পবিত্র গ্রন্থ। কোরআন মাজিদে আঘাত করে মুসলমানদের কলিজায় আঘাত করা হয়েছে। ফ্যাসিবাদের দোষর এবং আধিপত্য কায়েমকারীদের তাড়াতে চাই। যারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর মাধ্যমে জুলাই বিপ্লবের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করতে চায় তারা ভুলের মধ্যে রয়েছে। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষার মাধ্যমে তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দেব।
মানিকগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধিদের দুই গ্রুপের মারামারির ঘটনায় মেহেরাব খান ও মিরাজ নামে দুই ছাত্র প্রতিনিধি আহত হয়েছেন। মেহেরাব মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আর মিরাজ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জ পৌরসভার বেউথা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত মেহেরাব খান ও মিরাজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মানিকগঞ্জের ছাত্র প্রতিনিধি।
ছাত্র প্রতিনিধি ওমর ফারুক জানান, ১৩ জানুয়ারি মানিকগঞ্জে 'জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র' প্রকাশের লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির জন্য প্রতিটি উপজেলা থেকে আন্দোলনে যারা সক্রিয় ভূমিকা রাখে তাদের মানিকগঞ্জে ডাকা আলোচনা সভায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সমন্বয়ক ইসমাইল হোসেন রুদ্র মানিকগঞ্জের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের নিয়ে পৌরসভার বেউথা এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে আলোচনা সভা করেন। সভার শেষ পর্যায়ে দুই গ্রুপের মাঝে কথা কাটাকাটি হলে তা মারামারির পর্যায়ে পৌছায়। এতে দুই গ্রপের মেহেরাব খান ও মিরাজ আহত হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে আটক নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা পুতুল চন্দ্র রায়কে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। তার মুক্তি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার ঝড় উঠেছে। ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর টিএসসি সংলগ্ন চায়ের দোকান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে আটক করে প্রক্টরিয়াল টিমের হাতে তুলে দেন। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের জয়-লেখক কমিটির স্কুল ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। পরে এই নেতাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. রফিকুল ইসলাম।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবিতে সচিবালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করেছেন অনশনরত শিক্ষার্থীরা। সোমবার বিকেল ৫টার দিকে সচিবালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করেন তারা। এর আগে বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে পদযাত্রা শুরু করেন তারা। অনশনকারী অসুস্থ শিক্ষার্থীরা রিকশায় এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা হেঁটে যাত্রা করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বিপ্লবে বলীয়ান নির্ভীক জবিয়ান, একশন টু একশন, ডাইরেক্ট একশন, আপোষ না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম, লজ্জা লজ্জা, ইউজিসি ইউজিসি, অনশন অনশন চলছে চলবে, কবে দিবা ক্যাম্পাস, প্রশাসন কি করে, আমার ভাই অনশনেসহ নানা স্লোগান দেন।
আপনার মতামত লিখুন :