চাকরির জন্য নাম এসেছে তালিকায়। কিন্তু যোগদান করতে পারছেন না। এই হতাশা নিয়ে সময় পার করছেন ৬ হাজার ৫৩১ জন। তিন ধাপে শিক্ষক নিয়োগের কথা ছিল। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু নানা জটিলতায় আটকে আছে তৃতীয় ধাপের নিয়োগ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই জটিলতা দ্রুত কাটানোর চেষ্টা করছে। জটিলতা কাটলে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে ২০২৫ সালের মধ্যে এক লাখ শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সম্ভব। কারণ এই পরিমাণ শিক্ষকের পদ বছরের মধ্যেই খালি হবে।
জটিলতা থাকলেও শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধির নানা উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। ২০২৫ সালে এক লাখ শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। বিগত সরকারের এক লাখ শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনায় ইতিমধ্যে ৪৫ হাজার ৫২৭ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নিয়োগের অপেক্ষায় ৬ হাজার ৫৩১ জন। সেই সঙ্গে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ৯ হাজার ৫৭২টি সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃজন করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছর ও পরবর্তী সময়ের শূন্যপদ বিবেচনায় নতুন নিয়োগের চিন্তা করা হবে।
২০২৩ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক লাখ শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছিল। যা ২০২৫ সালের মধ্যে হওয়ার কথা। ২০২২ সালে ৩৭ হাজার ৫৭৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০২৩ সালে ফের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। দুই ধাপে নিয়োগ সম্পন্নের পর দেশে ঘটে যায় গণঅভ্যুত্থান। প্রথম ধাপে ২ হাজার ৪৯৭ ও দ্বিতীয় ধাপে নিয়োগ পান ৫ হাজার ৪৫৬ জন। আটকে যায় তৃতীয় ধাপের নিয়োগ। সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা সংক্রান্ত আগের সব পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন, আদেশ, নির্দেশ, অনুশাসন রহিত করে। আইন ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়েই বিধিমালা অনুযায়ী চলতি বছরের ৩১শে অক্টোবর প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ তৃতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়। এই চাকরিপ্রত্যাশীরা যোগদানের এলাকায় সম্পন্ন করেছেন সকল অফিসিয়াল কাজ। অনেকে হাতে পেয়েছেন যোগদান পত্রও।
তৃতীয় ধাপের শিক্ষক নিয়োগের আপত্তি বাধে কোটা নিয়ে। ২০১৮ সালে সরকার যখন কোটা বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন দিয়েছিল। তখনো প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব নিয়োগ বিধিমালা অনুসারে। ‘কেন নতুন প্রজ্ঞাপন অনুসারে ফলাফল প্রকাশ করা হলো না?’ তা জানতে ৩১ জন চাকরিপ্রত্যাশী হাইকোর্টে রিট করেন। ফলে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত হয়ে যায়।
এই থমকে থাকা শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে একপ্রকার বিপাকেই পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। সরকার পরিবর্তন, প্রশাসনে রদবদলসহ নানা কারণে একপ্রকার চুপ করে আছে ডিপিই। নিয়মিতভাবেই অবসরে যাচ্ছেন প্রাথমিকের শিক্ষকরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পন্ন হয়েছে ৪৫ হাজার ৫২৭ শিক্ষক নিয়োগ। এ ছাড়াও বাকি রয়েছে পার্বত্য তিন জেলায় শিক্ষক নিয়োগ। এখন তৃতীয় ধাপের নিয়োগ (৬ হাজার ৫৩১ জন) সম্পন্নের পর শূন্যপদ তালাশ করবে ডিপিই। এই পদগুলো পূরণের উদ্যোগ শুরু হবে ২০২৫ সালেই। ডিপিই সূত্রে জানা যায়, আগামী বছরের মধ্যভাগে শূন্যপদের তালিকা সংগ্রহ শেষে নিয়োগের উদ্যোগ হাতে নেয়া হবে। এ ছাড়াও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃজনের জন্য প্রায় সাড়ে ৬৫ হাজার পদ সৃজনের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। যাচাই শেষে ৯ হাজার ৫৭২টি পদ সৃজনের অনুমতি দেয়া হয়।
ডিপিই’র এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায় যেটা অন্তর্ভুক্ত হবে সেটা মেনেই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হবে। বৈঠকেই বিষয়টির সুরাহা হবে।
সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯৩ শতাংশ শিক্ষকই মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হবে। শিক্ষক নিয়োগে থাকবে না পোষ্য কোটা। তবে শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও গণিতে দক্ষ করে তুলতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট নিয়োগের ২০ শতাংশ গণিত ও বিজ্ঞানের বিষয়গুলো থেকে পাস করাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। উৎস: মানবজমিন।
আপনার মতামত লিখুন :