মাহমুদুল হাসান, কুবি: [২] দেশব্যাপী শিক্ষার্থী হত্যা, নিপীড়ন ও হয়রানির প্রতিবাদে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মানববন্ধনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে আসতে চাইলে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ফলে ছয়জন শিক্ষকই দাঁড়াতে পেরেছেন এই মানববন্ধনে।

[৩] বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বেলা ১১টা ৫৬ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী এম. আনিছুল ইসলামের সঞ্চালনায় এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। 

[৪] মানববন্ধনে উপস্থিত ছয়জন শিক্ষক হলেন- বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কামরুন নাহার শিলা, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া, ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষক জয় রাজ বংশী, বাংলা বিভাগের প্রভাষক গোলাম মাহমুদ পাভেল। 

[৫] মানববন্ধনে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিন বলেন, আমরা আজকে সবাই এখানে দাড়িয়েছি একটা বিচারহীন রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য। শুধুমাত্র নিজের মৌলিক অধিকার চাইতে গিয়ে যেভাবে শতশত শিক্ষার্থী, সাধারণ জনগণ সেখানে শিশু, কিশোর, তরুণ, যুবক তাদেরকে মেরে ফেলা হয়েছে সেটা গণহত্যা। এই গণহত্যার মধ্যে দিয়ে যা করা হয়েছে সেটি একবারে নিজের যে ক্ষমতা সেটির চর্চা। যেটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আমি এই নির্মম  গণহত্যার বিচার চাই এবং তীব্র প্রতিবাদ করছি।

[৬] তিনি আরও বলেন, এখন আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন আমি কার কাছে বিচার চাচ্ছি। আমি রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছে বিচার চাই না। কারণ এই যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে এটার সাথে রাষ্ট্র প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আছে। আমি বিচারিকের কাছেও বিচার চাইতে যাবো না। আমি বিচার চাই আমার দেশের সাধারণ জনগণের কাছে, তারা দেখেছেন, তারা দেখছেন, দেখবেন এবং অবশ্যই তারা এর বিচার করবেন।

[৭] বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও গত ১৮ জুলাই কোটবাড়ী বিশ্বরোডে পুলিশের গুলিতে আহত সারাফ সামির জামান মেঘের মা ড. কামরুন নাহার শিলা বলেন, আমার নিজের জীবনে যেহেতু একটা দুর্বিপাক ঘটে গেছে এর কারনে আমি আগে পদক্ষেপ নিতে পারিনি। আমার ছেলে আহত হয়েছে। আমার ছেলে মারাও যেতে পারতো। সেদিন বুঝতে পেরেছি এতো এতো শিক্ষার্থীদের পরিবার কি মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে আছে।

[৮] মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রবেশে আটকে দেওয়ার ব্যাপারে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হল ভূঁইয়া বলেন, কর্মসূচিটি বেলা ১১টায় করার কথা থাকলেও আমরা করতে পারিনি। আমাদের অনেক সহকর্মীকে আটকে দেওয়া হয়েছে কোটবাড়ি। তারা শিক্ষক পরিচয় দিয়েও তাদের কর্মস্থলে আসতে পারেননি। প্রক্টরকে জানানো হলেও আসতে দেওয়া হয়নি।

[৯] তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের ক্যাম্পাসে আসতে পারবেন না? তারা কারা? তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের ক্যাম্পাসে কেন আসতে পারবেন না? আমরা কোন ব্যবস্থার মধ্যে বাস করছি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের ক্যাম্পাসে আসতে পারবেন না? 

[১০] এ ব্যাপারে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হাকিম বলেন, আমরা কোটবাড়িতে আসার পর কয়েকজন মানুষ আমাদের পথরোধ করে। আমরা শিক্ষক পরিচয় দিলেও নমনীয় হয়নি। আমাদেরকে শহরের দিকে চলে যেতে বলে।

[১১] কুমিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, একজন শিক্ষক জানিয়েছিলেন যে উনি আসতে পারছিলেন না। সাথে সাথে আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছি। প্রক্টরিয়াল বডির দায়িত্ব ক্যাম্পাসের ভিতরে। বাইরে যদি কোন ঘটনা ঘটে সেটার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করতে হয়। সেটা আমরা করেছি।

[১২] সদর দক্ষিন থানার অফিসার্স ইনচার্জ আলমগীর ভূইয়া বলেন, এই ব্যাপারে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। আমি একটু আগে ঘুরে আসলাম এমন কিছু লক্ষ্য করি নাই।

প্রতিনিধি/একে