সুজন কৈরী: [২] চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মসূচি মার্চ ফর জাস্টিস চলাকালে পুলিশের হাতে আটক শিক্ষার্থীকে ছাড়াতে গিয়ে আহত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক শেহরীন আমিন মোনামী।
[৩] এসময় তার সঙ্গে থাকা অপর শিক্ষক নুসরাত জাহান চৌধুরীও হেনস্তার শিকার হন। এর প্রতিবাদে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
[৪] বুধবার দুপুরে দোয়েল চত্বর ও হাইকোর্টের মাঝামাঝি জায়গায় পুলিশ এক ছাত্রকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় এক পুলিশ সদস্য শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করেন এবং ওই নারী শিক্ষককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এতে ওই শিক্ষক হাতে, হাঁটুতে এবং পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে পুলিশ ওই শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে যান বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
[৫] বিকেল সাড়ে তিনটায় এক বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা এই ঘটনায় নিন্দা জ্ঞাপন করেন। এসময় হামলায় জড়িত প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের পর দণ্ডবিধি অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি চান এবং বাংলাদেশ পুলিশকে এই আক্রমণের জন্য দাপ্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান।
[৬] বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সব শিক্ষার্থী আমাদের বিভাগের শিক্ষক শেহরীন আমিন মোনামী ও নুসরাত জাহান চৌধুরীর ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশি হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ প্রশাসনের প্রতি তীব্র ঘৃণা জানাচ্ছি।
[৭.১] ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বিনা কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ এক ছাত্রকে হেনস্তা করতে থাকে এবং তাতে আমাদের শিক্ষকরা বাধা প্রদান করলে পুলিশ আমাদের দুই শিক্ষকের ওপর চড়াও হয়।
[৭.২] তাদের অকথ্য গালিগালাজ ও শারীরিকভাবে আঘাত করা হয়। এতে আমাদের শিক্ষক শেহরীন আমিন মোনামী আহত হন। আমরা মনে করি এই ঘটনা স্বাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমূলে আঘাত করেছে। আমরা আরও মনে করি, বিভাগীয় প্রশাসন, সিন্ডিকেট কমিটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই ঘটনায় দায় এড়াতে পারে না।
[৭.৩] বাংলাদেশ পুলিশকে এই ঘটনায় দাপ্তরিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষক জাতির মেরুদণ্ড এবং জাতির মেরুদণ্ড নির্মাণের কারিগর। অবশ্যই বাংলাদেশ পুলিশকে এই আক্রমণের জন্য দাপ্তরিকভাবে ক্ষমা চাইতে হবে। প্রথমে আমাদের সহপাঠী এবং এখন আমাদের বিভাগের শিক্ষকদের ওপর এই বেআইনি এবং অমানবিক আক্রমণ কোনোভাবে মেনে নিতে বা কোনো সহাবস্থানে যেতে আমরা রাজি নই।
[৮.১] শিক্ষকের ওপর আক্রমণের ঘটনায় লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিস বাশার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের আমার শিক্ষক পুলিশের আক্রমণে আহত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। দোয়েল চত্বর ও হাইকোর্টের মাঝামাঝি জায়গায় এক ছাত্রকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় নুসরাত ম্যাম ও মোনামী ম্যাম বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে তর্ক-বির্তক চলতে থাকে। তারা ছেলেটিকে তাদের সামনে চেক করতে বলেন, যেহেতু এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা এবং তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
[৮.২] এই অবস্থায় এক পুলিশ সদস্য জোর করে শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করে এবং ছেলেটিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এই পর্যায়ে ম্যামকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন এবং ম্যাম আহত হন। ম্যাম হাতে, হাঁটুতে এবং পায়ে আঘাত পেয়েছেন। ধস্তাধস্তি করে পুলিশ ছেলেটিকে ধরে নিয়ে যায়। ওরা শিক্ষকদের গায়েও হাত দিতে ছাড়লো না! আমার শিক্ষক আহত কেন? জবাব চাই, প্রশাসনের অ্যাকশন চাই!
[৯] এ বিষয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক শেহরিন আমিন মোনামী বলেন, একজন শিক্ষার্থীকে পুলিশ তুলে নিতে চাইলে আমি বাধা দিই। বললাম তার অপরাধ কী, চেক করার থাকলে আপনি আমাদের সামনে করুন। কিন্তু তিনি কোনো কথা না শুনে বলপ্রয়োগ করলেন। আমার হাত মুচড়ে দিয়ে ছেলেটাকে নিয়ে যেতে চাইলে আবার ধরতে গেলে ধাক্কা দিলে আমি পড়ে যাই। হাঁটুতে ব্যথা পেয়েছি একটু, তবে হাত মুচড়ে যাওয়ায় বেশি ব্যথা পেয়েছি। সম্পাদনা: সমর চক্রবর্তী
এসবি২
আপনার মতামত লিখুন :