শিরোনাম
◈ শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের লাল পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত ◈ সাংবাদিক ফারজানা রুপা ওড়নায় মাথা ঢেকে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন ◈ টাকা দিয়ে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছেন বাংলাদেশের প্রভাবশালীরা : আনন্দবাজারের প্রতিবেদন ◈ শামা ওবায়েদ ও শহিদুল ইসলাম বাবুলের সমস্ত পদ স্থগিত করেছে বিএনপি ◈ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা দাঁড়াল বত্রিশে ◈ কুমিল্লায় বিপৎসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে গোমতী নদীর পানি, ভোগান্তিতে মানুষ : বিরাজ করছে আতঙ্ক (ভিডিও) ◈ অবৈধভাবে পোষা পাখির দোকান পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার  : বন উপদেষ্টা ◈ ছাত্র আন্দোলনে ‘নিহত’ বলে প্রচার হওয়া সেই রাফি বেঁচে আছেন ◈ ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাড়াড়ি ঢলে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি বাড়ছে ! ◈ আখাউড়ায় যাত্রী পারাপার বন্ধ, ইমিগ্রেশন ভবনে হাঁটুপানি

প্রকাশিত : ১৫ জুলাই, ২০২৪, ০৯:৩৫ রাত
আপডেট : ১৬ জুলাই, ২০২৪, ০১:৪৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ, আহত ২ শতাধিক

উত্তপ্ত ঢাবি, কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

মুযনিবীন নাইম, আরমান হোসেন: [২.১] কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী রোববারের সংবাদ সম্মেলনে তাদের রাজাকার বলেছেন। এর প্রতিবাদ জানাতে সোমবার সকাল থেকেই বিভিন্ন হলে জড়ো হতে শুরু করেন কোটা আন্দোলনকারীরা। 

[২.২] অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিকৃতির অভিযোগ এনে রোববার দিবাগত রাত তিনটায় ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সোমবার সকাল থেকেই ঢাবি ক্যাম্পাসে অবস্থান নিতে শুরু করে নেতাকর্মীরা। 

[২.৩] দুপুরে বিভিন্ন হলে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ নেতারা। এরপর দুপক্ষে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে হলের বাইরে। 

[৩.১] সংঘর্ষের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীদের তারা উস্কে দিয়েছে। আমরা দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছি। আজকে তাদেরকে আমরা ৫ মিনিটে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছি।

[৩.২] কোটা আন্দোলনকারিদের ওপর হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে শয়ন বলেন, ওরা সাধারণ শিক্ষার্থী নন, তারা বিএনপি- জামায়াতের কর্মী। এই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থী ১০-২০ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশ শিবির-ছাত্রদলের এক্টিভিস্ট। জামায়াত-শিবির, ছাত্রদলকে আমরা যুগে যুগে পরাজিত করেছি। তারা কোনো কিছুই করতে পারেনি। এবারও কিছু করতে পারবে না।

[৪] সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে কোটা আন্দোলনকারিদের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইডেন কলেজ এবং নার্সিং কলেজের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।

[৫] বেলা আড়াইটার দিকে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের একটি দল মিছিল নিয়ে প্রতিদিনকার মতো ঢাবির হলগুলোতে যায়। দুপুর তিনটার দিকে খবর আসে, বিজয় একাত্তর হলে মিছিলে শিক্ষার্থীদের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করা হচ্ছে।

[৬] খবর পেয়ে রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল নিয়ে বিজয় একাত্তর হলের দিকে যান কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে নারী শিক্ষার্থীরাও ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় বিজয় একাত্তর হলে হেলমেট, লাঠিসোটা, হকিস্টিক নিয়ে হলগেটে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তখন হলগেটে ভাঙচুর চালান।

[৭] প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এ সময় পার্শ্ববর্তী কবি জসীমউদ্দীন হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। বেশ কয়েকজন কোটাবিরোধী বেধড়ক মারধরের শিকার হন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়।

[৮.১] এ দিকে পরিস্থিতির অবনতি হলে মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে মলচত্বরের দিকে চলে যান। এদিকে আগে থেকেই মধুর ক্যান্টিনে লাঠিসোঁটা, স্টিলের পাইপ, হকিস্টিক ও মোটা কাঠ নিয়ে অবস্থান করছিলেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তাদের সঙ্গে বিপুল সংখ্যক বহিরাগতও ছিলেন। প্রায় সবাই হেলমেট পরিহিত ছিলেন। 

[৮.২] কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা মলচত্বরে গেলে ঢাবির শ্যাডোর দিক থেকে তাদের ওপর হামলা চালান তারা। এ ছাড়াও সূর্যসেন হল, প্রশাসনিক ভবন এবং ভিসি চত্বর থেকে বিপুল সংখ্যক বহিরাগত লাঠিসোটা ও স্টিলের পাইপ নিয়ে হামলে পড়লে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর। 

[৯] আক্রান্ত আন্দোলনকারীরা এ সময় ভিসি চত্বর হয়ে ফুলার রোডের দিকে পালাতে শুরু করেন।  বেশি বিপাকে পড়েন নারী শিক্ষার্থীরা, তাদের অনেককে পিটিয়েছে বহিরাগতরা।

[১০] আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেছেন, তাদের অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

[১১] এ দিকে আহত শিক্ষার্থীদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হলে সেখানেও দেশীয় অস্ত্র, চাপাতি নিয়ে হামলা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেখানে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত।

[১২] জানা গেছে, বিজ্ঞান অনুষদের হলগুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কোটা আন্দোলনের পক্ষে। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সেখানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী, বহিরাগতদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। সেখানে টানটান উত্তেজনা চলছে। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দও পাওয়া গেছে। তবে কারা এসব ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনাস্থলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের নেতাকর্মীদের লাঠি-সোটা নিয়ে সড়কে অবস্থান করতে দেখা গেছে।

[১৩] বিকেলে শহীদুল্লাহ হলে অবস্থান নেয় লাঠিসোটাধারী কোটা আন্দোলনকারিরা। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখানে প্রবেশ করতে চাইলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হলের বাইরে বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে নিবৃত্ত করে। 

[১৪] বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৬তম ব্যাচের ছাত্রী তানজিলা তাসনীম বলেন, ভিসি চত্বরে মৈত্রী হলের এক মেয়ের হাতে ইটপাটকেল লাগার কারণে নড়তে পারছিল না। ফলে আমি ওকে ছেড়ে আসতে পারিনি। এ সময় হেলমেট পরা কয়েকজন এসে আমাদের সরে যেতে বলেছে। আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব। আমি বলেছিলাম, আমি জাস্ট যৌক্তিক আন্দোলনে ছিলাম। তারপর উনি আমার ডান হাত মুচড়ে দিয়েছে। আমরা এখন ওই মেয়েকে নিয়ে মেডিকেলে এসেছি। আমার খারাপ লাগছে, নিজ ক্যাম্পাসে এভাবে হামলার স্বীকার হয়েছি।

[১৫] এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উভয় পক্ষই ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব 

এসবি২

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়